হাসপাতালের তথ্য তলব, এক্তিয়ার ঘিরে প্রশ্ন
চিকিৎসা-খরচ নিয়ে সিপিএম’কে দুর্নীতির তির মদনের
সিপিএমের প্রাক্তন মন্ত্রী-বিধায়কদের অনেকেই বেসরকারি হাসপাতালে নিখরচায় চিকিৎসা করিয়ে সরকারের থেকে টাকা আদায় করেছেন বলে অভিযোগ তুললেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। সোমবার মহাকরণে এ প্রসঙ্গে তিনি টেনে আনেন বাইপাসের মুকুন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতালটির নাম, যেখানে প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিএমের প্রবীণ বিধায়ক আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা ভর্তি রয়েছেন। মদনবাবু জানান, গত পনেরো-কুড়ি বছরে ওখানে কত জন সিপিএম নেতা-মন্ত্রী বা তাঁদের পরিবারের লোকের চিকিৎসা হয়েছে, তাতে কত খরচ হয়েছে, ক’জন পুরো বিল মিটিয়েছেন, ক’জন একটা টাকাও না-দিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন এ সবের পূর্ণাঙ্গ তথ্য চেয়ে তিনি চিঠি লিখবেন হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষকে।
মদনবাবুর এ হেন মন্তব্য ঘিরে স্বভাবতই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, আদৌ তিনি এ কথা বলতে পারেন কি?
এ দিন মহাকরণে মদনবাবুর ব্যাখ্যা: মন্ত্রী বা তৃণমূল নেতা হিসেবে নয়, এক জন বিধায়ক, জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি ওই তথ্য জানতে চান। যদিও প্রাক্তন স্পিকার তথা প্রবীণ সিপিএম নেতা হাসিম আব্দুল হালিমের স্পষ্ট মত, “কোনও মন্ত্রীর বিধায়ক হিসেবেও এ কথা বলার অধিকার নেই। বিষয়টা জানতে হলে মন্ত্রীকে কোনও বিধায়কের মাধ্যমেই বিধানসভায় প্রশ্ন করতে হবে।” বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের মন্তব্য, “এই হচ্ছে এই সরকারের সমস্যা! মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন, স্বাস্থ্য দফতরের এক জন প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন। তাঁদের বদলে পরিবহণমন্ত্রী কথা বলছেন কেন, জানি না।”
সাংবাদিকদের মুখোমুখি মদন মিত্র। সোমবার।—নিজস্ব চিত্র
কিন্তু সিপিএম মন্ত্রী-বিধায়কের চিকিৎসা-খরচ সম্পর্কে পরিবহণমন্ত্রীর পরিবর্তে সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রীও যদি বেসরকারি হাসপাতালের কাছে এমন ব্যাখ্যা চাইতেন, সেটাও কি সিপিএম নেতৃত্ব মেনে নিতেন?
প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যবাবুর বক্তব্য, “ওটা বেসরকারি হাসপাতাল হলেও জমিটা দিয়েছিল সরকার। তাই অল্প পয়সায় বা বিনা খরচে চিকিৎসার কিছু সুযোগ সরকারের আছে। সরকার চাইলে তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে পারে।” তবে সেই সরকারি সংস্থানের সঙ্গে সিপিএম বা তৃণমূলের কোনও যোগ নেই জানিয়ে তাঁর দাবি, “এখন মন্ত্রীদের সুপারিশে তৃণমূলের অনেকেই ওই হাসপাতালে চিকিৎসা করান।” বিরোধী দলনেতার আরও সংযোজন, “বিধায়ক হিসেবে রেজ্জাকের চিকিৎসার খরচ বিধানসভা থেকে প্রাপ্য। এটা কারও অনুকম্পার বিষয় নয়!”
বিধানসভার বর্তমান স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, “মদন মিত্র কোন পরিপ্রেক্ষিতে কথাটা বলেছেন, জানি না। তবে বিধায়কেরা কী কী সুবিধা পেতে পারেন, তার নির্দিষ্ট তালিকা রয়েছে।” মন্ত্রী-বিধায়কের চিকিৎসা-খরচ সংক্রান্ত নিয়মটি ব্যাখ্যা করে হালিম জানাচ্ছেন, ভর্তি হয়ে চিকিৎসা হলে টাকা সরাসরি হাসপাতালকে দেওয়া হয়। ভর্তি না-হলে বিধায়ককে বিল জমা দিতে হয়। প্রতিটি বিল যাচাই করে টাকা মঞ্জুর হয়। “ভুয়ো বিল দিয়ে টাকা তোলার অভিযোগে এক কংগ্রেস বিধায়কের বিধায়কপদ খারিজ হয়ে গিয়েছিল। তার পরেও কোনও কোনও বিধায়ক ভুয়ো বিল দিয়ে টাকা তোলার চেষ্টা করেছিলেন। বিধানসভার সংশ্লিষ্ট দফতর তা ধরে ফেলে। সংশ্লিষ্ট বিধায়কদের জানানো হলে তাঁরা বিল ফিরিয়ে নিয়েছেন, এমন নজিরও রয়েছে।” বলেন প্রাক্তন স্পিকার।
কিন্তু পরিবহণমন্ত্রীর মুখে হঠাৎ এমন মন্তব্যের পিছনে কী কারণ থাকতে পারে?
মদনবাবুর ঘনিষ্ট সূত্রের ইঙ্গিত, ‘তৃণমূলের চাপে’ মুকুন্দপুরের হাসপাতালটি থেকে রেজ্জাক মোল্লাকে দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল বলে সিপিএমের যে অভিযোগ, তার পাল্টা হিসেবেই মদনবাবু সিপিএমের বিধায়ক-মন্ত্রীদের সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বস্তুত এ দিন বিকেলে বিধাননগর মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসেও মদনবাবু প্রসঙ্গটি ফের তোলেন। “সিপিএম নেতাদের চিকিৎসা-খরচ সংক্রান্ত কোনও তথ্য যাতে আমাকে না-দেওয়া হয়, সে জন্য মুকুন্দপুরের ওই হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষকে আলিমুদ্দিন থেকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তবে তথ্যের অধিকার আইন প্রয়োগ করে বিষয়টি জেনে বিধানসভায় তুলব।” বলেন তিনি।
মুকুন্দপুরের হাসপাতালে প্রথম দিনে কেন রেজ্জাক মোল্লার এমআরআই হয়নি, এ দিন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী। তাঁর দাবি, “আমি নিজে দীর্ঘ দিন একটা হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত। তাই জানি, প্রথম দিনেই কারও এমআরআই হয় না। এই সব পরীক্ষা ধাপে ধাপে হয়। সেটা না-বুঝেই সিপিএম অকারণ কুৎসা রটাচ্ছে।” যার প্রত্যুত্তরে সূর্যকান্তবাবু বলেছেন, “রেজ্জাকের মেরুদণ্ডের হাড়ে চিড় মিলেছে। তাঁর চিকিৎসা নিয়ে সরকারের মাথাব্যথা নেই! কে কবে কী চিকিৎসা নিয়েছেন, সেটা হয়ে গেল বিবেচনার বিষয়!
কত অমানবিক, দানবীয় এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ হলে এমন সম্ভব!”
এ দিকে রেজ্জাক প্রসঙ্গে মদনবাবু প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের দিকেও এ দিন আঙুল তুলে বলেছেন, “মুকুন্দপুরের হাসপাতালটির অদূরে আর একটা বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে, যার সঙ্গে কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় সরাসরি যুক্ত। মুকুন্দপুরের হাসপাতালে তৃণমূল প্রভাব খাটাতে পারে এমন আশঙ্কা থাকলে রেজ্জাককে কান্তিবাবুর হাসপাতালে কেন ভর্তি করা হল না?” কান্তিবাবু কী বলেন?
কান্তিবাবুর জবাব, “ভিত্তিহীন কথার উত্তর দেব না। এটুকু বলতে পারি, বাইপাসের ধারে যে ক’টা হাসপাতাল তৈরি হয়েছে, তার সব ক’টার সঙ্গে আমার রক্তের সম্পর্ক।” আর যাঁর চিকিৎসাকে ঘিরে এত চাপান-উতোর, সেই রেজ্জাক মোল্লা এ দিন বলেন, “মদন মিত্রের কোনও মন্তব্যের জবাব দিতে হবে, এ রাজ্যে এমন সময় এখনও আসেনি। যে যেমন ইচ্ছে চেঁচাবে, আর আমাদের জবাব দিতে হবে, তা-ই হয় নাকি?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.