মৎস্যচাষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন এমন মানুষদের এক ছাতার তলায় আনতে উদ্যোগী হল বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকোয়া কালচার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ। সেই লক্ষ্যে ডিপার্টমেন্ট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (ডিএসটি) অর্থানুকূল্যে পূর্ব মেদিনীপুরের মন্দারমনিতে আয়োজন করা হয়েছে দু’দিন ব্যাপী একটি কর্মশালার। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকোয়া কালচার ম্যানেজমেন্ট এণ্ড টেকনোলজি বিভাগের প্রধান বিধান পাত্র বলেন, “কাজের গতি প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা হবে কর্মশালাতে। আমাদের কাজের প্রাথমিক গতি দেখে কর্মশালার ব্যয়ভারও বহন করছে ডিএসটি-র এনআরডিএমএস (ন্যাশনাল রিসোর্স ডেটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম)। এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কী তার সিদ্ধান্ত হবে কর্মশালার পরে।”
কী করতে চাইছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা? বিধানবাবু জানান, পরিকল্পনা রয়েছে একটি ওয়েবসাইটের, যাতে থাকবে মাছ চাষ হয় এমন প্রতিটি জেলার, প্রতিটি গ্রামের কথা। চিংড়ি, বাগদা, রুই, কাতলা-এমন নানা মাছের পাইকারি দাম কত, রাজ্যে কোথায় কোথায় মাছের বাজার রয়েছে, কোন বাজারে কী কী মাছ পাওয়া যায়, কেজি প্রতি তার দাম কত -মাছ সংক্রান্ত এমনই যাবতীয় তথ্যের হদিশের ঠিকানা এই ওয়েবসাইট। মৎস্যচাষি, ক্রেতা, বিক্রেতারা ছাড়াও সেই ওয়েবসাইটে নিজেদের মতামত দিতে পারবেন সাধারণ মানুষও। ১৫ দিন ছাড়া ওয়েবসাইট আপডেট করা হবে। ধীরে ধীরে ওয়েবসাইটটিকে এতটাই উন্নত করা হবে যাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার মানুষও এতে তথ্য দিতে পারবেন। এ বিষয়ে খড়্গপুর আইআইটি-র সঙ্গেও কথাবার্তা চলছে বলে জানা গিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিভাগের পক্ষ থেকে সংগৃহীত তথ্য বলছে, রাজ্যের বিভিন্ন পুকুর, জলাধার মিলিয়ে ৩.৩১ লক্ষ হেক্টর জলে মাছ চাষ হয়। ১.৯১ লক্ষ হেক্টর জলে এখনও মাছ চাষ হয় না। আবার যেখানে মাছ চাষ হয়, সেখানেও সব সময় উন্নত পদ্ধতিতে মাছ চাষ না হওয়ায় মাছ উৎপাদন কম। মাছ চাষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন এ রাজ্যের প্রায় ১১ লক্ষ মানুষ। মাছ বিক্রির জন্য রাজ্যে ৪ হাজার বাজার রয়েছে এবং মাছ চাষ থেকে বিদেশি মুদ্রা আসে ৭৫০ কোটি টাকা। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে প্রায় ১২৬ রকমের মাছ রয়েছে। অর্থনৈতিক মূল্য বেশি এমন মাছের সংখ্যা ৭৫টি (রুই, কাতলা, মৃগেল, বাগদা প্রভৃতি)। এছাড়াও এলাকা ভিত্তিক মাছও রয়েছে ৪৪ রকমের। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ রাজ্যের মানুষ বছরে গড়ে ৯ কেজি মাছ খায়। কিন্তু মাছ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রের সংখ্যা মাত্র ২৮টি, চারা পোনা তৈরির কেন্দ্র রয়েছে মাত্র ১২৮টি, মাছ চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য মিলিয়ে মাত্র ৪টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে।
বিধানবাবুর কথায়, “রাজ্যে যে পরিমাণ মাছ চাষ হয় তা চাহিদার তুলনায় প্রায় ৩০-৩৫ শতাংশ কম। সেই মাছ আনতে হয় অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার থেকে। রাজ্যে এই ওয়েবসাইট চালু করা গেলে মৎস্যচাষে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এতে রাজ্যে মাছের চাষ বাড়বে।” বিধানবাবুর মতে, এর ফলে সহজে মিলিয়ে দেওয়া যাবে মাছ ব্যবসায়ী, পুকুরের মালিক, ক্রেতা, বিক্রেতা সকলকেই। এখন যাঁরা এই চাষে ততটা উৎসাহিত নন, তাঁদেরও উৎসাহ বাড়বে। সরকারও এ বিষয়ে আরও বেশি উদ্যোগী হবে। সেই লক্ষ্যে পৌঁছতেই কর্মশালার আয়োজন বলে জানান বিধানবাবু। |