অত্রি মিত্র ও জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় • কলকাতা |
এক দিকে কম ভাড়ার সাধারণ বাস, অন্য দিকে বেশি ভাড়ার লাক্সারি ভলভো বাস। এ বার এর মাঝামাঝি ভাড়ার আরও এক ধরনের বাতানুকূল বাস চালাতে চাইছে রাজ্য সরকার। যা চালাবে কর্পোরেট সংস্থাগুলি।
রাজ্য সরকারের প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল, সাধারণ বাসের ভাড়াতেই চালানো হবে কর্পোরেট-বাস। কিন্তু পরপর দু’বার বিজ্ঞাপন দিয়েও কর্পোরেট সংস্থাগুলির কাছ থেকে সে ভাবে এই বাস চালানোর ব্যাপারে সাড়া পাওয়া যায়নি। এর পরে ভাড়া নিয়ে খানিকটা নরম মনোভাব নেয় সরকার। ঠিক হয়, সাধারণ বাসের তুলনায় কর্পোরেট বাসের ভাড়া কিছুটা বেশি হবে। সেই অনুযায়ী, ইচ্ছুক কর্পোরেট সংস্থাগুলির কাছ থেকে সম্ভাব্য ভাড়ার তালিকাও চেয়ে পাঠায় সরকার। কিন্তু সাধারণ কর্পোরেট বাসের ভাড়া বেশি রাখা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রবল আপত্তিতে থমকে যায় সেই ভাবনাও।
রাজ্য পরিবহণ দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি এক দফা ভাড়া বৃদ্ধির পরেও সাধারণ বেসরকারি বাসের মালিকেরা বাস চালিয়ে লোকসানের কথা বারবার বলছেন। কিন্তু তাদের ভাড়া আর বাড়াতে রাজি নয় সরকার। তাই সব বাসেরই ভাড়া বাড়িয়ে একই রকম করা যায়নি। এই অবস্থায় ‘ঘুরপথে’ কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে বাড়তি ভাড়া দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য।
কী সেই ঘুরপথ?
পরিবহণ দফতরের এক কর্তা জানান, কর্পোরেট বাসগুলিকে বাতানুকূল করা হচ্ছে। সাধারণ বাসের চেয়ে এই ‘বাড়তি পরিষেবা’ যুক্ত করে তাদের বেশি ভাড়া নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে রাজ্যে সাধারণ বাস ও লাক্সারি ভলভো বাসের পাশাপাশি আরও এক ধরনের ভাড়ার বাস দেখা যাবে। |
তিন ধরনের বাসের ভাড়া হবে তিন রকম। মুখ্যমন্ত্রীর তৈরি করে দেওয়া পরিবহণ সংক্রান্ত মন্ত্রিগোষ্ঠীর কাছে সম্প্রতি এই প্রস্তাব সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট পেশ করেছে রাজ্য পরিবহণ দফতর। তাতে কর্পোরেট এসি-বাসের ভাড়া কী হবে, তার প্রস্তাবিত একটি তালিকাও দেওয়া হয়েছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, যেখানে সাধারণ বাসের ন্যূনতম ভাড়া ০-৪ কিলোমিটার দূরত্বে ৫ টাকা, লাক্সারি এসি ভলভো বাসের ক্ষেত্রে ০-২ কিলোমিটারে ১৫ টাকা, সেখানে এই কর্পোরেট এসি বাসের ন্যূনতম ভাড়া হবে ১০ টাকা। আবার ১২-২০ কিমি দূরত্বে সাধারণ বাসের ভাড়া ৮ টাকা এবং ১৫-২০ কিলোমিটারে এসি ভলভোর ভাড়া ৪০ টাকা, সেখানে ১৫-২০ কিমিতে সাধারণ এসি বাসের প্রস্তাবিত ভাড়া ধরা হয়েছে ২০ টাকা।
এই প্রস্তাবেই অবশ্য সিঁদুরে মেঘ দেখছেন সাধারণ বাসের মালিকেরা।
বাসমালিকদের সংগঠনের এক নেতার অভিযোগ, “এর আগে সরাসরি দুধের দাম না বাড়িয়ে বেশি দামের ‘মা শক্তি’ দুধ বাজারে বিক্রি শুরু করে সরকার। পরে ধীরে ধীরে কমদামি দুধের বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন বেশি দামের সেই ‘মা শক্তি’ দুধই কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা। একই ভাবে বেশি ভাড়ার কর্পোরেট বাস চালিয়ে ধীরে ধীরে সাধারণ বাস বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার।”
বাসমালিকদের আর একটি সংগঠন জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটসের নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পরিবহণ ব্যবস্থার ভারসাম্যটাই সরকার নষ্ট করে দিচ্ছে। আমরা তো বারবার বলছি, যাত্রীরা সাধারণ বাসেই বেশি ভাড়া দিতে প্রস্তুত। এসি বাস বেরোলে আমাদের বাসে আর কেউ উঠবে না। এমনিতেই বাস কমে গিয়েছে। এ বার তা তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে।” তপনবাবুর মতে, “এর ফলে পরিবহণ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যুক্ত প্রচুর শ্রমিক বেকার হয়ে যাবে। এমনিতেই আমাদের রাজ্যে শিল্প নেই। বেকারত্বের জন্য অপরাধও বাড়ছে। এ রাজ্যে কৃষির পরে পরিবহণের সঙ্গেই সবচেয়ে বেশি শ্রমিক যুক্ত। এরা বেকার হলে অপরাধ আরও বাড়বে।” বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের নেতা দীপক সরকার বলছেন, “আমাদের ক্ষতি তো হবে বটেই। কিন্তু কর্পোরেট সংস্থাগুলিও এই বাস চালিয়ে লাভ করতে পারবে বলে মনে হয় না।” |