|
|
|
|
পরিষেবা নিয়ে সন্তুষ্ট সাগরের পুণ্যার্থীরা |
রোহন ইসলাম • গঙ্গাসাগর |
চুরি-ছিনতাই, রাস্তা খারাপ, আলোর অভাব, চিকিৎসা পরিষেবা না পাওয়া এমন নানা অভিযোগে প্রতি বারই সাগরমেলা ঘিরে ব্যতিব্যস্ত হতে হয় পুলিশ-প্রশাসনকে। কিন্তু এ বার পরিষেবা নিয়ে তেমন কোনও অভিযোগ করছেন না পুণ্যার্থীরা। দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া পরিষেবার দিক থেকে এ বারের মেলা অন্য যে কোনও বারের মেলার চেয়ে এগিয়ে বলেই মনে করছে পুলিশ ও প্রশাসনের একটা বড় অংশ। বহু বার গঙ্গাসাগর মেলায় এসেছেন এমন পুণ্যার্থীরাও এ বিষয়ে একমত।
পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মেলার কথা ভেবেই এ বার দু’টি নতুন জেটি খোলা হয়েছে। গত শনিবারই রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, “এখন থেকে সাগরবাসী সারা বছর ধরে ওই জেটিগুলি ব্যবহারের সুযোগ পাবেন।” বস্তুত, নতুন জেটিগুলির জন্যই এ বার আর পুণ্যার্থীদের লট-৮ জেটিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়নি। মধ্যপ্রদেশ থেকে নন্দরাম দাস এবং তাঁর ভাই কাশীরাম দাস প্রতি বছর গঙ্গাসাগরে আসেন। তাঁদেরও অভিমত, “নতুন জেটি, চওড়া রাস্তার জন্যই এত ভিড়েও কোনও সমস্যা হচ্ছে না।”
কয়েকশো লাইফ গার্ডের সঙ্গে সঙ্গেই এ বার রয়েছে ১৭টি অতিরিক্ত লাইফ বোট। যে কোনও বিপদেই পুণ্যার্থীরা তাঁদের পাশে পেয়েছেন। অনেক ডুবন্ত পুণ্যার্থীকেই বাঁচিয়েছেন লাইফ গার্ডেরা। আগের তুলনায় বেড়েছে শৌচাগারের সংখ্যাও। প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী, ৩৯০টি স্থায়ী টয়লেটের পাশাপাশি ছিল ১২টি ভ্রাম্যমাণ ভ্যানও। তা সত্ত্বেও ইতিউতি প্রাকৃতিক কাজ সেরেছেন অনেক পুণ্যার্থীই। এ নিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, “লোক আছে। সবটাই পরিষ্কার হয়ে যাবে।”
সাগরতট পর্যন্ত যাওয়ার জন্য এ বার পাঁচটি রাস্তা চওড়া করা হয়েছিল। যার একটিকে (২ নম্বর) কপিলমুনির মন্দির থেকে প্রায় ৯৫০ মিটার পর্যন্ত মুড়ে ফেলা হয়েছে কংক্রিটে। খাওয়ার জল নিয়েও খুশি বেশির ভাগ পুণ্যার্থীই। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর থেকে কয়েক লক্ষ পরিস্রুত পানীয় জল বিলি করা হয়েছে। দু’ একটি ক্ষেত্রে জল নেওয়ার লাইন দেখে বিরক্ত হয়েছেন বেশ কিছু মানুষ। সরকারের বিলি করা জল বেআইনি ভাবে বিক্রি করার অভিযোগও উঠেছে। এ বিষয়ে সুব্রতবাবুর মন্তব্য, “এত বড় মেলায় কে কোথায় আমাদের জল বিক্রি করছে, তা কী করে দেখা সম্ভব! কিছু মানুষ যদি বারবার জল নিয়ে বিক্রি করার চেষ্টা করেন, এত মানুষের মধ্যে তাদের চেনা একটু মুশকিল। তবুও আমরা বিষয়টা দেখছি।” এ দিকে, সোমবার মেলার বাজার এলাকার কয়েকটি গলিপথে জল জমতে দেখা গেল। তাতে হাঁটা চলা করতে অসুবিধার মুখে পড়ছিলেন বেশ কিছু পুণ্যার্থী।
চিকিৎসা পরিষেবা নিয়েও কোনও অভিযোগ ওঠেনি। ৪৫টি অ্যাম্বুল্যান্স ২৪ ঘণ্টা কাজ করেছে। মাইকে ঘোষণামাত্র রোগীর জন্য হাজির থেকেছে অ্যাম্বুল্যান্স। মেলার পাঁচটি অস্থায়ী হাসপাতালও সারাক্ষণ পরিষেবা দিয়েছে পুণ্যার্থীদের। উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা গণেশ যাদব ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। তাঁর কথায়, “ঠান্ডায় প্রচণ্ড জ্বর এসেছিল। ডাক্তারবাবু দেখেছেন। এখন ঠিক আছি।” প্রশাসন সূ্ত্রে জানা গিয়েছে, ১২ জানুয়ারি থেকে এ দিন পর্যন্ত অসুস্থতার কারণে উত্তরাখণ্ডের এক মহিলা এবং বিহারের এক বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে।
জোর দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থাতেও। মোট সাত হাজার পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে গোটা মেলায়। এ দিন স্নান সেরে কপিলমুনির আশ্রমে পুজো দিয়েছেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পূণ্যস্নান করতে এসে প্রতি বছরই বহু পুণ্যার্থী কেপমারদের কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হন। এ বছর কেপমারদের পাকড়াও করতে জেলার ‘স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ’-এর পুলিশকর্মীরা সাদা পোশাকে সাগরতট ও বাসস্ট্যান্ডে ছড়িয়ে পড়েছেন। প্রায় ৮০ জনে ১০টি দল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নজরদারি করছেন।
স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় কেপমারদের থেকে বেশি বিপজ্জনক পুণ্যার্থীদের সঙ্গে আসা কেপমাররা। সুযোগ বুঝে তাঁরা পুণ্যার্থীদের বোঁচকা নিয়ে বেপাত্তা হচ্ছে। স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের এক অফিসার বলেন, “ওই কেপমারদের ধরা খুব শক্ত হয়ে উঠেছে। বেশির ভাগেরই বয়স পঞ্চাশের কোঠায়। সুযোগ বুঝে কোপ মারছে। তবু এ বার নজরদারি বেড়েছে।” |
|
|
|
|
|