রাজস্থানী মেঠো সুরে মেতে প্রাণভরে স্নান
ভোর সাড়ে চারটে। ২ নম্বর গেটের রাস্তায় থিকথিকে ভিড়। স্রোত ঠেলে কোনওরকমে পৌঁছলাম সাগর তীরে। পবিত্র স্নানের মাঝেই উত্তর দিক থেকে একটা মেঠো সুর ভেসে আসছিল। এগোতেই দেখি, একদল মহিলা রাজস্থানী লোকনৃত্য করছেন। তাঁদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে দলের পুরুষেরাও গাইছেন
“রিমঝিম রিমঝিম বেহা বরষে
হাওয়া চলে পুরবাইয়্যা
কাওব্রচ ভিজত রহেঙ্গে
রাম-লখণ দোনো ভাইয়্যা...।”

বঙ্গোপসাগরের তীরে রাজস্থানের প্রভাতী সিংহের মেঠো সুরেই গঙ্গাসাগরে শুরু হল মাহেন্দ্রক্ষণের পবিত্র স্নান।
পুণ্যস্নান মিলিয়ে দিল অনেক কিছু। যেখানে সামিল ছত্তীসগঢ়ের এমবিএ-র ছাত্রী সুপ্রিয়া অগ্রবাল, রসায়নে স্নাতক লখনউয়ের লক্ষ্মী সোনি। সামিল কলকাতার দশম শ্রেণির ছাত্র গণেশ থাপাও। গঙ্গাসাগরে প্রতি বছরের মতো এ বারও এসেছেন মধ্যপ্রদেশের নন্দরাম দাস, মহারাষ্ট্রের ঊষা কালেরা। “সংস্কৃতি-ঐতিহ্যকে অমান্য করার মানে হয় না। প্রাচীনকে অস্বীকার করে কখনই আধুনিক হওয়া যায় না।” দৃঢ় গলায় পুরনো ও নতুনের প্রতি এ ভাবেই শ্রদ্ধা জানালেন অরুণাচল প্রদেশ থেকে আসা ভূগোলে পোস্ট গ্রাজুয়েট অর্চনা বৈশ্যের।
পুণ্যার্থীদের সঙ্গেই এগিয়ে চললাম। ভিড় বাড়ছে। সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। ওই ভিড়েই লাউড স্পিকারে পুলিশকর্মীর অবিরাম সতর্কবার্তা— “পানি মে জাদা দূর মত যাইয়ে...।” একটু দম নিয়েই হাতে থাকা টুকরো কাগজ দেখে ফের চিৎকার, “দুর্ঘটনা হো শকতি হে!”
পবিত্র স্নান। সোমবার গঙ্গাসাগরে। ছবি: সুমন বল্লভ
পাঁচ বছর ধরে গঙ্গাসাগরে লাইফ গার্ডের কাজ করছেন শুভদীপ অধিকারী, সোমনাথ গায়েন। এঁরা এ ক’দিন বেশ ক’জন ডুবন্ত পুণ্যার্থীকে বাঁচিয়েছেন। সে সব অভিজ্ঞতাই বলছিলেন ওঁরা। হঠাৎই ভেসে এল হইচই। স্নানে নেমে ডুবে যাচ্ছেন মাঝবয়সী এক মহিলা। অসমাপ্তই থেকে গেল আলাপ। নিমেষে ছুটলেন শুভদীপ-রা। সেদিকেই তাকিয়েছিলাম। হঠাৎ হাতের ছোঁয়া, “একটু সাহায্য করবেন? জল পর্যন্ত একটু এগিয়ে দেবেন?” ঘুরে দেখি ক্রাচে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে প্রতিবন্ধী এক যুবক। জানালেন, নাম দীপক শর্মা। গঙ্গাসাগরের টানে দিল্লি থেকে ছুটে এসেছেন।
সকাল সাড়ে আটটা। পাঁচ নম্বর রাস্তার ধারে বসে কাগজে কী সব লিখে চলেছেন সাধু রামভদ্র দাস। কী লিখছেন জানতে চাওয়ায় ঝটিতি উত্তর, “এর পর কোথায় কোথায় যাব এ তারই ‘প্লান’।” সঙ্গে স্ত্রী দুখ্ন দেবী। বাড়িতে তিন ছেলে। কিন্তু বিয়ের পর কেউই দেখে না তাঁদের। ফের শুরু করেন। “ অপমান সহ্য হল না বাবা। তাই এক দিন ওকে (স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে) নিয়ে বেরিয়েই পড়লাম। তার পর থেকে পথই ঘর।”
কিছুটা দূরেই বহু বিতর্কিত প্রশাসনের তৈরি কোটি টাকার কাঠের ‘কটেজ’। দেখি, দ্রুতগতিতে সেখান থেকে বেরোচ্ছেন ডিএম নারায়ণস্বরূপ নিগম। পিছু নিলাম। হাঁটার ফাঁকেই জেলাশাসক আলাপ জমালেন সামনে থাকা ভ্যান রিকশার এক যাত্রীর সঙ্গে। জিজ্ঞাসা করলেন, “সব ব্যবস্থা ঠিক আছে তো?” যাত্রী কলকাতার রাজেন্দ্রপ্রসাদ চতুর্বেদীর চটপট জবাব, “ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভাল।” তৃপ্ত ডিএম মিলিয়ে গেলেন ভিড়ে।
পুণ্যতিথিতে মেলায় নজর কেড়েছে ‘আমাদের প্রেরণা’। সাগরের কমলপুর গ্রামের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিভিন্ন বয়সী নির্যাতিতা ও তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে আসা একশো জন মেয়েকে নিয়ে খুলেছে সেই কাউন্টার। মেয়েদের সুরক্ষায় বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকছে ‘ওয়েনলিডো’ (একটি বিশেষ মানসিক ও শারীরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা) শেখা ওই মেয়েদের দল। মেয়েদের যে কোনও বিপদে এগিয়ে আসছেন সিন্ধুবালা দাস, ভবানী ভক্তা, তাপসী দোলন-রা। বেশ ক’জন বিপদে পড়া মেয়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.