ছবিটা শুধু নদিয়ার নয়, পড়শি জেলা মুর্শিদাবাদেরও। এবং এ ধরনের রাতারাতি জমি দখল কিছুটাবা রোজনামচাও। হ্যাঁ, ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা অসংখ্য বেআইনি ইটভাটা আর তার লেজুড়মাটি মাফিয়ারা এমনই বেপরোয়া, এবং ভয়ঙ্করও। নিখিলবাবুর মতো দুই জেলার বহু মানুষ এ নিয়ে প্রশাসন থেকে পুলিশের কাছে বহু বার অভিযোগ করেও সাড়া পাননি। ঘুম ভাঙেনি প্রশাসনের। অশোকবাবুরা বরং ভয়ে কাঁটা হয়ে রয়েছে অভিযোগ জানিয়ে। পাছে কোপটা এ বার তাঁর বাড়িতে পড়ে!
এক সময়ে শুধু নদী-পাড় থেকেই মাটি কাটত মাটি মায়িারা। এখন সে দিন গিয়েছে। নদীর পার ভুলে তারা এখন অবাধে মাটি কাটছে কৃষি জমি থেকেও। তাতে ফল হচ্ছে মারাত্মক। মোটা অঙ্কে লোভেও পা বাড়াচ্ছে অনেকে। লোভর কাছে হেরে হারিয়ে যাচ্ছে কৃষি জমি। আর তাই ফসল ভরা জমি রাতারাতি হয়ে যাচ্ছে গভীর পুকুর। তেহট্ট ১ ব্লক কৃষক সভার সম্পাদক ভক্তরাম ঘোষ বলেন, ‘‘বহুবার নদী কিংবা চাষের জমি থেকে বেআইনিভাবে মাটি কাটা নিয়ে প্রশাসনের কাছে গিয়েছি। কিন্তু সাড়া মেলেনি। প্রশাসনকে জানানোর পর দুই একদিন চলে লোকদেখানো অভিযান। তারপর যে কে সেই।” প্রায় একই সুর কৃষ্ণনগরের ভান্ডারখোলা পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের গৌতম বিশ্বাসের কথায়। তিনি বলেন, ‘‘প্রকাশ্যে কিছু মাটি মাফিয়া সমাজবিরোধীদের সাহায্য নিয়ে জমি কিংবা নদীর পার থেকে মাটি কেটে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আমি জানিয়েছি। ফল হয়নি।’’ নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে বেআইনি ইটভাটার দাপট যে কতটা তা স্পষ্ট হয়ে যায় জেলা প্রশাসনের দেওয়া পরিসংখ্যানে। নদিয়া জেলায় বেআইনি ইটভাটার সংখ্যা অন্তত ২৫০টি আর মুর্শিদাবাদে তা প্রায় ৪০০। পরিসংখ্যান রয়েছে অথচ ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না? তারও উত্তর নেই। এই বেআইনি ইটভাটার দৌরাত্ম্যে সাধারনের উদ্বেগ্ন ইটভাটা মালিকদের সংগঠনগুলোও মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট ব্রিক ফিল্ড ওনার্স অ্যাসোশিয়েসনের সভাপতি আব্দুল বাকি শেখ বলেন, ‘‘শুরু থেকেই প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু অদ্ভুতভাবে প্রশাসন আমাদের কথায় কর্ণপাত করে না। বেআইনি ভাটার সংখ্যাও ক্রমশ বেড়েই চলেছে। অবিলম্বে প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ না করলে সমস্যা আরও বাড়বে।’’
নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট ব্রিক ফিল্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়শনের সভাপতি অসীম সাহারও একই অভিযোগ, ‘‘বেআইনি মাটি কাটা ও ভাটার বিষয়ে একাধিকবার জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। কোন লাভ হয়নি। উল্টে আমাদের মতো বৈধ ভাটামালিকদের নানাভাবে হয়রান করা হয়। নিয়ম মেনে রয়্যালটি, ভ্যাট, সেস, আয়কর দিয়ে ব্যবসা করছি। আর ক্ষিরটা খেয়ে যাচ্ছে বেআইনি ভাটার লোকেরা। তারা শুধু পঞ্চায়েত ও প্রশাসনিক স্তরের লোকজনকে ‘সন্তুষ্ট’ করেই ব্যবসা করছে।” ইঙ্গিতটা স্পষ্ট। কিন্তু তারা ‘রা’ কাড়ছেন কই? তবে হ্যাঁ, ভয় ভেঙে কিছু দিন আগে ধুবুলিয়ার বাহাদুরপুরে জলঙ্গির পার থেকে মাটি কাটার ঘটনায় মাফিয়াদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ছিল একদল স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া। শেষ পর্যন্ত পিছু হঠতেও বাধ্য হয় হয়েছিল মাফিয়ারা। কিন্তু সে তো ব্যতিক্রম। সবাই তো সে সাহস দেখাচ্ছেন না! |