ধর্ষণের অভিযোগ সময়মতো নিতে না চাওয়া এবং তদন্তে গড়িমসির অভিযোগে ফের অভিযুক্ত হল পুলিশ। এ বার অবশ্য কলকাতায় নয়, জেলায়।
মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি থানার পারশপুরে বছর দু’য়েক আগে এক বিবাহিতা মহিলাকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল দুই স্থানীয়ের বিরুদ্ধে। থানা সময়মতো অভিযোগ নিতে চায়নি ও তদন্তে গাফিলতি করেছে বলে মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ করেন ‘নিগৃহীতা’। তদন্ত চালিয়ে দিন পঁচিশ আগে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে একটি সুপারিশ পাঠিয়েছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। বলা হয়েছে, জলঙ্গির ওই ঘটনার তদন্তে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। এ জন্য জলঙ্গি থানার তৎকালীন আইসি-র বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ডোমকলের তৎকালীন এসডিপিও-কে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত কোনও অভিযোগের রিপোর্ট দেওয়ার সময় তিনি যেন যথেষ্ট ‘যত্নবান ও মনোযোগী’ হন।
আইসি-র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হল কি না সেটা রাজ্য সরকারকে দু’মাসের মধ্যে জানাতেও বলা হয়েছে। পার্ক স্ট্রিটের পরে কড়েয়ার ঘটনা নিয়ে রাজ্য প্রশাসন ও পুলিশ মহলে যখন তোলপাড়, ঠিক তখনই আরও একটি ধর্ষণের অভিযোগে পদস্থ পুলিশ-আধিকারিকদের গাফিলতির কথা বলে মানবাধিকার কমিশনের এই শাস্তির সুপারিশকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছে প্রশাসনিক মহল।
মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ জেনে উচ্ছ্বসিত বছর বত্রিশের অভিযোগকারিণী ও তাঁর বৃদ্ধ বাবা। অভিযোগকারিণীর কথায়, “২০১০ সালের ১৪ এপ্রিল বাপের বাড়ি এসেছিলাম। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ পাশের মাঠে শৌচকর্মে যাচ্ছি, এমন সময় গ্রামেরই পরিচিত এক জন আমার মুখ চেপে অন্ধকারে টেনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করল। ওর ভাইপো-ও ওকে সাহায্য করেছিল। ঘটনার পরে জলঙ্গি থানায় গেলাম। কত কাকুতিমিনতি করলাম, কিন্তু থানা কিছুতেই আমাদের অভিযোগ নিল না। এক মাস ঘোরালো। শেষে বহরমপুর আদালতে গেলাম।” ওই মহিলার পরিবার, পুলিশের নথি ও মানবাধিকার কমিশন সূত্রে খবর, বহরমপুর সিজেএম আদালত ১০ মে, ২০১০ একটি মামলা (ইউ/ এস ৩৭৬/৫১১/৩৪ আইপিসি) শুরু করে এবং একটি মেমো (নম্বর ৬০০/২০১০) মারফত জলঙ্গি থানাকে এফআইআর নিতে নির্দেশ দেয়। অভিযোগকারিণীর বাবার কথায়, “ওই নির্দেশ পাওয়ার পরেও থানার সেই সময়ের আইসি দেবাশিস সরকার অভিযোগ নিতে দেরি করতে থাকেন। তখন আমরা এসডিপিও (ডোমকল) সুবীর চট্টোপাধ্যায়কে জানালাম। তাতেও লাভ হল না।” পুলিশের নথি বলছে, ১৭ জুন, ২০১০ জলঙ্গি থানা একটি মামলা (৩৭৩/১০) নেয়। অভিযুক্ত দু’জন আত্মসমর্পণ করে ১৩ জুলাই জামিন পান। এর পরেই অভিযোগকারিণী ২৭ জুলাই রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের কাছে অভিযোগ করেন। তদন্তকারী অফিসার মহিলার শারীরিক পরীক্ষার নির্দেশ দেন ঘটনার আট মাস পরে, ৬ ডিসেম্বর, ২০১০-এ! দেবাশিস সরকার এখন লালগোলা থানার দায়িত্বে। তাঁর বক্তব্য, “কমিশনে একাধিক বার হাজিরা দিতে হয়েছিল। এর বেশি ওই মামলা সম্পর্কে কিছু মনে পড়ছে না।” সুবীর চট্টোপাধ্যায় এখন আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এসি (হেডকোয়ার্টার)। তাঁর বক্তব্য, “অনেক মামলাতেই মানবাধিকার কমিশন ডাকে। এ রকম কোনও মামলার কথা মনে করতে পারছি না।” রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের দাবি, মানবাধিকার কমিশনের এ রকম কোনও সুপারিশ এসেছে বলে এখনও তাদের কাছে খবর নেই। |