|
|
|
|
বড় শিল্প সংস্থা নয়, মাঠ ভরাচ্ছে সরকারি স্টল |
দেবমাল্য বাগচি • হলদিয়া |
শিল্প-সম্মেলনে গ্রামোন্নয়নের স্টল। রয়েছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদ, এমনকী সর্বশিক্ষা মিশনের স্টলও। নানা সরকারি দফতরের স্টলেই ভরতে চলেছে হলদিয়ার হেলিপ্যাড ময়দান। বাকি স্টল নিয়েছে হলদিয়ায় ব্যবসারত কিছু শিল্প সংস্থা। এমনই সম্বল নিয়ে আজ, মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে তিন দিন ব্যাপী রাজ্যের শিল্প-সম্মেলন ‘বেঙ্গল লিডস ২’।
|
|
বিনিয়োগের নয়া গন্তব্য হলদিয়া এই প্রচারকে সামনে রেখেই এ বারের শিল্প-সমারোহ। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় গোড়া থেকে দাবি করছেন, দু’শোরও বেশি শিল্প সংস্থা ‘বেঙ্গল লিডস’-এ আসছে। কিন্তু রবিবারও আমন্ত্রিতদের নাম খোলসা করে জানাননি তিনি। ফলে, কারা আসছে তা নিয়ে প্রশ্ন ছিলই। সোমবার, ‘বেঙ্গল লিডস’ ওয়েবসাইটে অবশ্য যোগদানকারী সংস্থাগুলির নাম দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে শিল্প-সম্মেলনে শিল্প সংস্থার তুলনায় সরকারি দফতরের সংখ্যাই বেশি। এ দিন মেলার মাঠ ঘুরেও দেখা গিয়েছে, বেশিরভাগটাই জুড়ে রয়েছে পর্যটন, তথ্য-সংস্কৃতি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, কারিগরি শিক্ষা, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের মতো সরকারি সব স্টল। মেলা প্রাঙ্গণে জায়গা করে নিয়েছে উত্তরবঙ্গ, শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি, আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সর্বশিক্ষা মিশন, এমনকী স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দফতরও। আর রয়েছে টাটা কেমিক্যালস্, এক্সাইড, আইওসি, ধানসিড়ি বনস্পতি, রেনুকা সুগার, সিইএসসির হলদিয়া এনার্জি লিমিটেডের মতো কিছু শিল্প সংস্থার স্টল, যাদের হলদিয়ায় কারখানা রয়েছে। নামজাদা সংস্থা বলতে রয়েছে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট, আইটিসি, অম্বুজা, লিঙ্ক পেন, এসার, প্যাটন, এপিজে ইত্যাদি। সেই সঙ্গে মেলার মাঠে চোখে পড়েছে শিলান্যাসের ফলক। যা বোঝাচ্ছে, এই শিল্প-সম্মেলনের মঞ্চ থেকেই হলদিয়া আইটি হাবের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রী।
তিন দিনের এই শিল্প-সম্মেলন নির্বিঘ্নে সারতে সোমবার হলদিয়া ভবনে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন পুলিশ কর্তারা। উপস্থিত ছিলেন আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) গঙ্গেশ্বর সিংহ, ডিআইজি (মেদিনীপুর রেঞ্জ) লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা, পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন প্রমুখ। জানা গিয়েছে, মেলার উদ্বোধনে আসা মুখ্যমন্ত্রী ও বিভিন্ন শিল্প সংস্থার প্রতিনিধিদের জন্য কড়া নিরাপত্তার আয়োজন হচ্ছে। প্রথম দিনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে প্রায় পনেরোশো পুলিশকর্মী ও আধিকারিক। পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন বলেন, “৬০টি সিসিটিভি বসানো হচ্ছে। থাকছে
ওয়াচ টাওয়ার। নিরাপত্তার কোনও সমস্যা হবে না।” |
|
পুলিশ সুপার আশ্বস্ত করলেও শিল্প সম্মেলন উদ্বোধনের দিনটাই নির্বিঘ্নে কাটবে কি না সংশয় রয়েছে। কারণ, আজ, মঙ্গলবার এক কর্মসূচি নিয়েছে এবিজির কাজহারা শ্রমিকেরা। ‘বেঙ্গল লিডস ২’-এর বিরোধিতা করে নন্দকুমারে পথসভার পর পদযাত্রায় সামিল হবেন কাজহারারা।
কাজ খুইয়ে দিশাহারা শেখ ফজলুল রহমান, নূর আলমদের বক্তব্য, “এই শিল্পমেলা আমাদের কাছে অনর্থক। বন্দর থেকে এবিজি-র মতো সংস্থাকে তাড়িয়ে শিল্পায়নের নাটক আমরা মানি না।”
১ লক্ষ ২০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে মেলার মাঠে স্টল নির্মাণ নিয়ে অব্যবস্থার ছবি দেখা গিয়েছে এ দিনও। ৬টি ‘হ্যাঙ্গারে’র নির্মাণকাজ শেষ হলেও অধিকাংশ স্টল তৈরির কাজ সোমবার সন্ধেতেও বাকি। চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে প্লাই, বোর্ড, কাঠ, প্লাই, ফ্লেক্স। চাপে পড়ে রাতের মধ্যেই স্টলের কাজ শেষ করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হয়েছে শিল্প-সম্মেলনের আয়োজনের দায়িত্বে থাকা হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ (এইচডিএ)। তার পরেও সময়ের মধ্যে স্টল তৈরি করা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন নির্মাণকর্মীরাই। হ্যাঙ্গার ডি-এ একটি স্টলের নির্মাণের বরাত পাওয়া ‘রেঁনেসা নেটওয়ার্ক’-এর কর্মী
পিন্টু রঞ্জিত বলেন, “রাতের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলছে। একটু সময় পেলে ভাল হত।” কলকাতা থেকে আসা রঙের মিস্ত্রি মিঠুন কর্মকারেরও বক্তব্য, “সকালের মধ্যেও কাজ শেষ হবে কি না বুঝতে পারছি না। একটু ভয়ই লাগছে।”
এ দিন রাত ন’টা নাগাদ মেলা প্রাঙ্গণে আসেন এইচডিএ-র চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। মাঠ ঘুরে তাঁর বক্তব্য, “শিল্পমেলার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ। শিল্পনগরী হলদিয়া এখন মুখ্যমন্ত্রীর অপেক্ষায়।” শুভেন্দুর পিছনের স্টলেই অবশ্য তখন পেরেক ঠোকা চলছে। এত বড় শিল্প-সম্মেলনে কী আয়োজন হল, তা দেখার অপেক্ষায় এখন গোটা রাজ্য।
|
রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের স্টলেই ভরেছে মাঠ। —নিজস্ব চিত্র
|
|
|
|
|
|