শাস্তি কমছেই, দ্বিতীয় ডিভিশনে
‘নির্বাসন’ রুখতে মরিয়া বাগান
মোহনবাগানের ১২৩ বছরের ইতিহাসের নজিরবিহীন শাস্তি কমছেই। কিন্তু সেটা কতটা? তা নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চূড়ান্ত নাটক চলছে দিল্লিতে! শুধু ফুটবলমহলের লোকজনই নন, শোনা যাচ্ছে ঐতিহ্যের কথা ভেবে জড়িয়ে পড়েছেন রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরাও। অনুরোধ থেকে নির্দেশ, শীতের রাজধানীতে হাজির সব কিছুই।
শাস্তি কমার ব্যাপারটা এখন শুধু গঙ্গাপারের ক্লাবের কর্তা-ফুটবলার-সমর্থকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। আই লিগে খেলা সব দলই এর শরিক হয়ে পড়েছে। সোমবার দুপুরে বাগান প্রেসিডেন্ট টুটু বসু দেখা করেছিলেন ‘বন্ধু’ ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল পটেলের সঙ্গে। সব কিছু শোনার পর প্রফুল্ল না কি বলে দেন, “মা যেমন ছেলেকে দেখে আমরা সে রকমই দেখব মোহনবাগানকে।” রাতে নানা ফোনাফুনির পর সবুজ-মেরুনের এক কর্তা জোর গলায় দাবি করলেন, “আর যাই হোক মোহনবাগান সামনের বার দ্বিতীয় ডিভিসনে খেলবে না।”
দিল্লিতে বিকেলে চাউর হয়ে যায় এ বছর শাস্তি বহাল থাকলেও পরের বার মোহনবাগানকে আই লিগে খেলতে দেওয়া হবে। তা জেনে ক্ষুব্ধ আই লিগের কিছু ক্লাব। সালগাওকর সচিব রাজ গোমস ফেডারেশনকে চিঠিতে জানান, “মঙ্গলবারের সভায় ঠিক করা হোক লিগ টেবিলের শেষের দু’টো দল নামার নিয়ম চালু থাকবে কি না।” শোনা যাচ্ছে এক প্রাক্তন তারকা ফুটবলার না কি বলেছেন, “আমরাও কোনও ম্যাচ হারলে ঢিল মেরে খেলা বন্ধ করে দিয়ে কর্মসমিতির কাছে এসে ক্ষমা চাইব। দেখি তখন কী হয়।”
উদ্বিগ্ন সমর্থককুল। উদ্বিগ্ন ক্লাব। —নিজস্ব চিত্র
পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগের যে কলকাতা থেকে দিল্লিতে প্রতি মিনিটে উৎকন্ঠার ফোন আসছে। ফোন করছেন অনেক প্রাক্তন মোহনবাগান তারকা। আজই পঁচাত্তর বছরে পা দিতে যাওয়া ঘরের ছেলে চুনী গোস্বামী জানতে চাইলেন, “আমাদের ক্লাবকে দ্বিতীয় ডিভিসনে খেলতে হবে না তো? ভগবানের কাছে প্রার্থনা করছি সেটা যেন না হয়।” মানস ভট্টাচার্য ও বিদেশ বসু দুপুরে ফুটবল হাউসে এসে কয়েক হাজার বাগান সদস্য-সমর্থকের অনুরোধ জমা দিয়ে গেলেন। যাতে লেখা, ‘মোহনবাগানকে নয়, কর্তাদের শাস্তি দিন।’ আশির দশকের দুই তারকাই বললেন, “মোহনবাগানের শাস্তি হবে এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। ক্লাব নয়, মোহনবাগান তো প্রতিষ্ঠান।”
শাস্তি থেকে বাঁচতে ত্রিফলা অস্ত্র নিয়ে সভায় হাজির হতে সোমবার দুপুরেই দিল্লিতে পৌঁছে যান ডার্বি ম্যাচে দল তুলে নেওয়ার মূল হোতা মোহনবাগানের চার কর্তা। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া তাঁরা এতটাই মরিয়া যে, ক্লাবের বোর্ড মিটিংয়েও যাঁদের একসঙ্গে প্রায় দেখাই যায় না, তাঁরাও সবাই হাজির দিল্লিতে। মোহন-কর্তাদের হাতে তিনটে অস্ত্র
এক) সবুজ-মেরুনের শাস্তি কমানোর জন্য আই লিগের দশ দলের অনুরোধের চিঠি।
দুই) অধিকাংশ কর্মসমিতির সদস্যের সমর্থন জোগাড়।
তিন) ফেডারেশনের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক বন্ধুত্ব। সঙ্গে ক্লাবের ঐতিহ্য আর অসংখ্য সদস্য-সমর্থকের সই করা অনুরোধ।
কিন্তু মঙ্গলবার কর্মসমিতি কতটা শাস্তি কমাবে বাগানের? উত্তরটা যিনি দিতে পারেন সেই ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট আজ উদ্যোগ ভবনে তাঁর কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের অফিসে সারাদিন সব পক্ষের কথা শুনেছেন। কাগজপত্র দেখেছেন। কিন্তু কাকে তিনি কাল লাল কার্ড দেখাবেন, কাকে হলুদ কার্ডতার বিন্দুমাত্র আঁচ দিতে চাননি। বলছেন, “মোহনবাগান নিয়ে যা বলার কাল বলব।” দুঁদে রাজনীতিবিদ প্রফুল্ল হাইটেক বৈঠকের রেফারি, সহকারী রেফারি ও ম্যাচ কমিশনার সবই। সন্ধেয় অফিস ছেড়ে যাওয়ার আগে নির্দেশ দিয়েছেন সভা দুপুর বারোটা থেকে আধঘণ্টা এগিয়ে আনার। কারণ দুপুর দু’টোয় সভা শেষ করে চেন্নাই চলে যাবেন তিনি।
শাস্তি কমার তিন অঙ্ক
ছ’মাস সাসপেন্ড। মোহনবাগান দ্বিতীয় ডিভিশনে
ছ’মাস সাসপেন্ড। জুন-জুলাইয়ের পর পিছনের দরজা দিয়ে ফের প্রথম ডিভিশনে
পয়েন্ট শূন্য। চলতি আই লিগে ষোলো ম্যাচ খেলার সুযোগ
ভারতীয় ফুটবলের চমকপ্রদ মেগা সিরিয়ালের শেষ এপিসোডের আগের চব্বিশ ঘণ্টায় পরতে পরতে নাটকীয় মুহূর্ত দেখার পর মনে হচ্ছে শাস্তি কমার তিনটে ফর্মুলা জোরালো ভাবে উঠে এসেছে।
এক) আড়াই বছরের সাসপেনসন দু’বছর কমিয়ে মোহনবাগানকে পরের আই লিগে দ্বিতীয় ডিভিসনে খেলতে পাঠানো।
দুই) দু’বছর সাসপেনসন তুলে নিয়ে দ্বিতীয় ডিভিসনের ব্যপারটা ঝুলিয়ে রাখা।
তিন) এ বারের আই লিগের ছ’মাস শাস্তি বহাল রেখে, পয়েন্ট শূন্য করে দিয়ে পরের বছর আই লিগে খেলার সুযোগ দেওয়া।
এ বছর বাকি ১৬ ম্যাচ খেলার সুযোগ না দিতে পারলে মোহনবাগান কর্তারা প্রফুল্লর কাছে অন্তত তিন নম্বর ফর্মুলার কার্যকর করার অনুরোধ করেছেন। কলকাতার ক্লাব তাঁবুতে তখন বিক্ষোভ চলছে। পুলিশ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে তাঁবু। সেই সময় প্রফুল্লর দীর্ঘ দিনের ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক ‘বন্ধু’ টুটু তাঁকে নানা ভাবে বোঝাবার চেষ্টা করেছেন, এ বারের আই লিগের বাকি ম্যাচ খেলতে না পারলে ক্লাবে তাঁদের অবস্থা কী হবে! সঙ্গে দেখানো হয় কিছু কাগজের ক্লিপিংস এবং ছবি। যা এক সদস্যের অশোক গঙ্গোপাধ্যায় কমিশনের কাছে পেশ করেনি মোহনবাগান। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ঘর থেকে বেরিয়ে আসার পর বাগান কর্তাদের চোখ-মুখ দেখে মনে হল কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন! জানা গিয়েছে, টুটুদের প্রফুল্ল শাস্তি কমার ব্যাপারে সবুজ পতাকা ওড়াননি। তবে বলেছেন, তাঁকে যা-যা দেখানো হল সেগুলো কর্মসমিতির সভায় দেখাতে। কমিটির লোকেরা রাজি হলে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। মোহন-কর্তাদের গলায় তাই বেশ জোর।
প্রতি ঘণ্টায় নানা গুজব রটছে মোহনবাগানের শাস্তি নিয়ে। সবারই দাবি তাঁর কাছেই ঘোড়ার মুখের খবর আছে। সচিব কুশল দাস এবং আই লিগের সি ই ও সুনন্দ ধরকে নিজের ঘরে ডেকেও মোহনবাগান নিয়ে ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট কোনও আলোচনা করেননি। কমর্সমিতির সদস্যের বেশিরভাগই পৌঁছে গিয়েছেন দিল্লিতে। কিন্তু তাঁদেরও কেউ প্রফুল্লর ডাক পাননি রাত পর্যন্ত। ফুটবলের যে কোনও ব্যাপারেই যাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেন প্রফুল্ল, তাঁদের একজন রাতে হতাশ গলায় বললেন, “কী যে হচ্ছে বুঝতে পারছি না। এত বড় অপরাধ করে মোহনবাগান যদি বেঁচে যায় তা হলে তো আই লিগের সব নিয়মকানুন জলে ফেলে দিতে হবে।” আসলে প্রফুল্ল মুখ না খোলাতেই জল্পনা হচ্ছে বেশি। কেউ আশা দেখছেন, কেউ হতাশা, কেউ আশঙ্কা। যে ভাবে প্রতি মুহূর্তে নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে তাতে ভারতীয় ফুটবলের একটা যুগ-সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে হতে চলেছে মঙ্গলবারের মহাবৈঠক।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.