একদিকে জঙ্গল। আরেকদিকে পাহাড়ের কোলে প্রত্যন্ত গ্রাম বামনডাঙ্গি। মাঝামাঝি সীমান্ত। নেপাল ও ভারতের। এই গ্রামই হাতি-মানুষের সংঘাতে বার বার শিরোনামে এসেছে। কখনও বা হাতির হানায় মানুষের মৃত্যু আবার কখনও মানুষের প্রতি আক্রমণে হাতির মৃত্যু। ওই বামনডাঙ্গি গ্রামকে ঘিরে এবার উৎসবের আসর বসবে। ঝলমলে আলো জ্বলবে। দোকানিরা পসরা নিয়ে বসবেন। নেপালের ‘ফিল্ম স্টার’রা মঞ্চ মাতাবেন। ভারত তো বটেই তাইল্যান্ড, বার্মা থেকে প্রতিনিধিরা যোগ দেবেন সেখানে। আলোচনা হবে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেবেন, কিভাবে সামাল দেওয়া সম্ভব ‘হাতি-মানুষ’ সংঘাত।
এশিয়ান গ্রামীণ পর্যটন উৎসবের কর্মকর্তা অর্জুন কার্কি জানান, আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নেপালের ঝাপা জেলার বামডাঙ্গিতে উৎসব চলবে। এবারে ওই উৎসবের দ্বিতীয় বর্ষ। তিনি বলেন, “গতবছর উৎসব শুরু করা হয়। তাতে অনেক মানুষ যোগ দিয়েছিলেন। তা থেকে মানুষ অনেক পরামর্শ কাজে লাগাতে পারছেন। এবারে আরও বড় আকারে অনুষ্ঠান করা হচ্ছে।” উৎসব কমিটির সদস্য রাজ বসু জানান, গত বছর যে সব পর্যটক উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন তাঁদের থাকার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। এবারে ২০ টির উপরে ‘হোম স্টে’ তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়াও পর্যটকদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধে সেখানে রয়েছে। তিনি বলেন, “হাতি নিয়ে সচেতনতা তৈরি করাই মূল লক্ষ্য। ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদেরও উৎসবে যোগদানের কথা রয়েছে।”
রাজবাবু জানান, বামনডাঙ্গিতে যাতে পর্যটকদের পৌঁছনোর জন্য দুটি রাস্তা অপাতত রয়েছে। একটি শিলিগুড়ি হয়ে কাকরভিটা, সেখান থেকে বামনডাঙ্গিতে পৌঁছনো। তাতে শিলিগুড়ি থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরত্ব যেতে হবে। এ ছাড়া মিরিক থেকে একটি ‘ট্রেক রুট’ তৈরি করা হয়েছে। ওই রুটে মিরিক পৌঁছতে দু’দিন সময় লাগবে। সেখানে একটি একশ বছরের পুরনো বটগাছ রয়েছে বলে তিনি জানান।
উৎসব কমিটির তরফে জানানো হয়, এ পর্যন্ত হাতির হানায় ঝাপা জেলায় ৪৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ জন বামনডাঙ্গির। ১৮টি হাতির মৃত্যু হয়েছে সেখানে। এ ছাড়াও প্রতিবছর ৫০টি বাড়ি হাতির হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রচুর পরিমাণ কৃষি পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। ২০১১ সালে ওই গামে হাতির হানায় ৯ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ৪টি হাতি মারা গিয়েছে। ২০১২ সালে মৃত্যুর সংখ্যাটা কিছুটা কমেছে। ৪জন মানুষ ও ২ টি হাতি মারা গিয়েছে।
উৎসব কমিটির কর্মকর্তারা জানান, তাইল্যান্ডে ও বার্মাতে হাতি নিয়ে একই ধরণের সমস্যা রয়েছে। সেখানকার প্রতিনিধিরাও ওই উৎসব থেকে একটা বার্তা নিয়ে যেতে চান। উৎসবের এক কর্তা বলেন, “উৎসবের মাধ্যমে হাতি-মানুষ সংঘাত কমানোর রাস্তা বের করার পাশাপাশি গোটা তরাই অঞ্চলকে পর্যটনের মানচিত্রে তুলে আনাটাই আমাদের সকলের লক্ষ্য।’’ গত বছর তিনদিনের অনুষ্ঠানের ৪৫ হাজারের বেশি মানুষ ওই উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন। এবারে সে সংখ্যাটা আরও বাড়বে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন। |