৩ মাস পার, সহায়ক-মূল্যে ধান কেনায় এখনও গতি নেই
তিন মাস পেরিয়ে গিয়েছে। অথচ, সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান কেনার প্রক্রিয়ায় এখনও সে ভাবে গতি এল না হুগলি জেলায়।
হাতের কাছে চালকল বা শিবির না হওয়ায় এবং সরকারি শর্ত নিয়ে ক্ষোভ থাকায় অনেক চাষিই ধান বিক্রি করতে উৎসাহী হচ্ছেন না। চালকল-মালিকদের অনেকে এখনও ‘লেভি’র জন্য কত ধান কিনতে হবে, তা জানতে না পারায় ধীরে চলার নীতি নিয়েছেন। এর পাশাপাশি, প্রশাসনও কর্মসূচিটি রূপায়ণে সে ভাবে তৎপর হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
সরকারি নির্দেশ মতো গত ১ অক্টোবর থেকে চাষিদের থেকে সহায়ক মূল্যে (কুইন্টালপ্রতি ১২৫০ টাকা) ধান কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে হুগলিতে। সোমবার পর্যন্ত বিভিন্ন চালকল মারফত এবং শিবির করে মোট ৪৭ হাজার ৭৯২ টন ধান কেনা হয়েছে জানিয়ে জেলার খাদ্য নিয়ামক সুরজিৎ দেবনাথ বলেন, “এই ক’মাসে চাষিরা আলু চাষ এবং বোরো ধান রোপণে ব্যস্ত থাকায় ধান কেনার কর্মসূচিটি গতি পায়নি ঠিকই। সেই কারণে ব্লক এবং পঞ্চায়েত স্তরে ঘন ঘন বৈঠক হচ্ছে। চাষিদের মধ্যে লিফলেট বিলি করা হচ্ছে। চালকল-মালিকদের সঙ্গেও বৈঠক হচ্ছে।” তাঁর আশা, শীঘ্রই ধান কেনার প্রক্রিয়ায় গতি আসবে।
জেলা খাদ্য সরবরাহ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত জেলায় প্রায় ২ লক্ষ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা স্থির হয়েছে। অর্থাৎ, ওই ধান থেকে মিলবে ১ লক্ষ ৬০ টন চাল (১০০ কেজি ধান থেকে ৬৮ কেজি চাল মেলে)। রাজ্য সরকার যেমন সরাসরি শিবির করে ধান কিনতে নেমেছে, তেমন ভাবেই নেমেছে এফসিআই, কনফেড, বেনফেড এবং অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিগমের মতো সংস্থা।
জেলার অনেক চাষি অবশ্য ধান বিক্রির সরকারি শর্ত নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। জেলা খাদ্য সরবরাহ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ধান বিক্রি করতে হলে চাষিদের ন্যূনতম আমানত ছাড়াই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, কিষাণ ক্রেডিট কার্ড এবং জমির পরচা দরকার। এই শর্তেই ক্ষুব্ধ আরামবাগের সালেপুরের ধান চাষি সুফল চানক বলেন, “আমরা অনেকেই ভাগচাষি। জমির দলিল-পরচা দেখাতে না পারায় সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারিনি। আলু চাষের জন্য বাধ্য হয়েই খোলা বাজারে কিছুটা কম দামে ধান বিক্রি করেছি।” ধনেখালির শেখ কিসমত আলি বলেন, “আমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। তাই সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারিনি।” পুড়শুড়ার জঙ্গলপাড়ার কার্তিক রায়ের ‘কিষাণ ক্রেডিট কার্ড’ নেই। তিনিও সুফল চানকের মতো খোলা বাজারে ধান বিক্রি করেছেন।
হুগলি জেলার মোট চালকলের সংখ্যা ১৫০। তার মধ্যে আরামবাগ মহকুমায় আছে ১০০টি। যার মধ্যে ৪টি বন্ধ। রাজ্য চালকল-মালিক সংগঠনের অন্যতম কর্তা সত্যনারায়ণ মাজি বলেন, “আমাদের ধান কিনতে বলা হচ্ছে। কিন্তু এখন অবধি লেভির জন্য কত ধান নিতে হবে তা বলা হয়নি। ফলে, চালকল মালিকদের কেউ কেউ উৎসাহ দেখাচ্ছেন না। তাঁরা লোকসানের আশঙ্কা করছেন। তা ছাড়া, সে ভাবে চাষিরাও ধান নিয়ে আসছেন না।” অবশ্য, এর মধ্যেও ধান কেনার চেষ্টা চলছে বলে তাঁর দাবি।
জেলার ব্লক স্তরের প্রশাসনিক আধিকারিকরা অবশ্য ধান কেনায় যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন। যেমন, আরামবাগের বিডিও প্রণব সাঙ্গুই বলেন, “আমরা ৫০ হাজার কুপন ছেপেছি। পঞ্চায়েতগুলি থেকে শর্ত পূরণ করা চাষিদের তা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু মাঠের কাজে ব্যস্ত থাকায় চাষিরাই ধান বিক্রিতে উদ্যোগী হচ্ছেন না। ধীর গতিতে কাজ চলছে। যে সব পঞ্চায়েত এলাকায় চালকল নেই, সেখানে বিশেষ শিবির করে ধান কেনার ব্যবস্থাও হয়েছে।” প্রায় একই সুর গোঘাট-২ ব্লকের বিডিও শিবপ্রিয় দাশগুপ্ত, ধনেখালির বিডিও সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের গলাতেও। তারকেশ্বরের বিডিও সুমন মজুমদার বলেন, “এই ব্লকে কোনও চালকল নেই। পাশের ব্লকের চালকলগুলি থেকে শিবির করে এখানকার ধান কেনা সবে শুরু হয়েছে।” একই ব্যবস্থা করে ধান কেনার চেষ্টা করছে জেলার আরও কয়েকটি ব্লক।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.