চিরশ্রী মজুমদারের ‘ওয়েলকাম টু নরক’ (২৩-১২) লেখাটি অপ্রিয় হলেও কঠিন বাস্তব। পড়তে পড়তে মন আতঙ্ক আর বিষাদে ভরে ওঠে বর্তমান-সহ আগামী বাংলার সংস্কৃতি চর্চার পরিণাম নিয়ে। এ কোন মানসিকতা আমাদের সমাজকে গ্রাস করছে! যেখানে লক্ষ্যকে সামনে রেখে উদ্দাম, অশ্লীল উপলক্ষগুলো প্রধান হয়ে ওঠে? দিগ্বিদিকজ্ঞানশূন্য হয়ে সমাজ ভেসে চলে কুৎসিত অপসংস্কৃতি আর মাদকের স্রোতে! যেটা এখন আর শুধু শহরের নির্দিষ্ট স্থানেই সীমাবদ্ধ নেই। তার ঢেউ আছড়ে পড়ছে গ্রামাঞ্চলেও সর্বত্র। বাঙালির সেরা উৎসব দুর্গাপুজো থেকে শুরু করে সরস্বতীপুজো, অন্নপ্রাশন, বিবাহ, পিকনিক থেকে শুরু করে শ্মশানঘাট পর্যন্ত সর্বত্রই অনুষ্ঠানের আড়ালে এক অন্য উৎসবের বীভৎস চেহারার আস্ফালন। |
আরও ভাববার বিষয়, আবগারি দফতর আয় বাড়াতে আরও চারশো পঞ্চাশটি মাদক বিক্রির দোকানের লাইসেন্স দিচ্ছে। (২৩-১২) যাতে আইনি পথে এই খাত থেকে মাসে তিনশো কোটি টাকা আয় হতে পারে। তা হলে আর এই কুরুচিকর পরিস্থিতি থেকে রেহাই মিলবে কেমন করে! জাহান্নমের রাস্তা কি তা হলে ক্রমশ প্রশস্তই হতে থাকবে?
বাসুদেব সেন। জাঙ্গিপাড়া, হুগলি
|
মার্কিন অভিজ্ঞতা তো বলে, অস্ত্র আইন আরও কড়া হোক |
অনুব্রত চক্রবর্তীর লেখা সম্পাদকীয় ‘শেষ পর্যন্ত দোষ হল কেবল বন্দুকের?’ (২০-১২) প্রসঙ্গে আমার এই চিঠি। গত ১৪ ডিসেম্বর নিউ টাউনের স্যান্ডি হক জুনিয়র স্কুলে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনা সকলেরই জানা। যখন এই ধরনের ঘটনা ঘটে, যাদের জীবন থেকে আপনজনেরা হারিয়ে যায়, তাদের জীবনের দর্শনটাই শুধু বদলে যায় চির দিনের জন্য। এখন খুব জানতে ইচ্ছে করছে, সাম্প্রতিক এই ঘটনায় যাঁরা তাঁদের সন্তান-সন্ততি হারিয়েছেন, তাঁরা কি এখনও আমেরিকার নাগরিক হিসেবে অস্ত্র আইনকে সমর্থন করবেন?
আমেরিকার অস্ত্র আইনে মার্কিন নাগরিক তাঁর ব্যক্তিগত হেফাজতে বন্দুক রাখতে পারেন। সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় শতকরা ৫৪ শতাংশ মার্কিন নাগরিক অস্ত্র আইনের সপক্ষে রায় দিয়েছেন। সাধারণ মানুষের অস্ত্রের প্রয়োজন একমাত্র হতে পারে আত্মরক্ষার্থে। প্রশ্ন হল, সাধারণ নাগরিককে কেন রাষ্ট্রই যথেষ্ট নিরাপত্তা দেবে না? অন্য দিকে, যাঁরা এমন ঘটনা ঘটান, অস্ত্রকে প্রয়োগ করাটা তাঁদের কাছে ‘চাইল্ড’স প্লে’-র মতো। যে দেশে এই ঘটনা প্রায়শই ঘটে চলেছে, সেখানে বন্দুকের ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করাটাই তো সবথেকে যুক্তিযুক্ত।
লেখক এক জায়গায় উল্লেখ করেছেন ‘শৈশবে রচনায় লিখতাম, বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ, তা নির্ভর করছে ব্যবহারকারীর উপর। এটাও তা-ই। কিছু লোক বন্দুকের ব্যবহার করছে জঘন্য ভাবে। তাই সবার বন্দুুকই যদি কেড়ে নিতে হয়, সে যুক্তিতে ফিজিক্সের গবেষণা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। পাছে কেউ অ্যাটম বোমা বানিয়ে ফেলে!’ বন্দুকের ব্যক্তিগত মালিকানার সঙ্গে পদার্থবিদ্যার গবেষণার অগ্রগতির কী সম্পর্ক, তা ঠিক বোধগম্য হল না। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার প্রয়োগের ক্ষেত্র উন্মোচিত করে কিন্তু সেই ক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রণ তো থাকে মানুষের হাতে।
অবাক লাগল আরও একটি পরিসংখ্যানের যথার্থতা প্রমাণের প্রয়াস দেখে। ‘অস্ট্রেলিয়ার হিসেব, গত এক বছরে গান ভায়োলেন্সে যত মৃত্যু, তার দশ গুণ মৃত্যু হয়েছে হাইওয়ে অ্যাক্সিডেন্টে। তা হলে কি গাড়ি চালানো বন্ধ হয়ে যাবে অস্ট্রেলিয়ায়?’ যে কোনও মৃত্যুই দুঃখের, তা বলে কি ‘দুর্ঘটনা’ আর ‘পরিকল্পিত হত্যা’-কে একই সারিতে বসানো যায়? অন্য এক জায়গায় লেখক লিখেছেন, ‘এক জন মানুষ মরতে চাইলে একা মরতে পারে অথবা অনেককে নিয়ে মরতে পারে। তার জন্য বন্দুককে দায়ী করলে ইট, কাঠ, পাথরকেও দায়ী করতে হয়।’ ইট, কাঠ, পাথরের সঙ্গে বন্দুকের তুলনাটা কিঞ্চিৎ বিষম ঠেকল। বন্দুকের নলের গঠনমূলক কোনও ভূমিকা আছে বলে তো জানা নেই।
এ কথাও ঠিক, শুধুমাত্র অস্ত্র আইনে বন্দুকের ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রিত করেই এ ধরনের ঘটনা একশো শতাংশ ঠেকানো সম্ভব নয়। অবশ্যই প্রয়োজন সামাজিক পরিস্থিতির চুলচেরা বিশ্লেষণ। অস্ত্র আইন কঠোর করা উচিত কি না, সেটাও কিন্তু সেই ধরনের বিশ্লেষণই দাবি করে, সিরিয়াস বিশ্লেষণ। তনিমা চট্টোপাধ্যায়। ডেলফ্ট, দ্য নেদারল্যান্ডস |