|
|
|
|
দামিনীর মৃত্যুই বদল এনেছে গ্রামে, শুরু উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
তাঁর মৃত্যু সমাজের চেতনাকে সত্যিই জাগিয়েছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। কিন্তু দামিনীর মৃত্যু যে তাঁর গ্রামের ভোল অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে অন্তত সে বিষয়ে কোনও সংশয় নেই।
উত্তরপ্রদেশের বালিয়া জেলার তস্য গ্রাম মেদাওয়ারা। স্বাধীনতার পর থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র তো দূরে থাক পাকা রাস্তাটুকুও বেবাক স্বপ্নই ছিল গ্রামবাসীদের। দামিনীর ভবিতব্য অন্য কিছু হলে হয়তো তা এখনও স্বপ্নই থেকে যেত।
দিল্লি গণধর্ষণের পরে কেটে গিয়েছে প্রায় এক মাস। দামিনীও মারা গিয়েছেন প্রায় দু’সপ্তাহ হল। তার পরেই পাল্টে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে উত্তরপ্রদেশের প্রত্যন্ত ওই গ্রামটিতে। দামিনীর মৃত্যুর বিনিময়ে শুরু হয়েছে এক বিপুল এক কর্মযজ্ঞ।
দু’হাজার লোকের বাস কৃষিপ্রধান মেদাওয়ারাতে। গ্রামে পাকা রাস্তা নেই। নেই কোনও উচ্চ বিদ্যালয়। পড়াশোনার জন্য একটি সরকারি প্রাথমিক ও একটি বেসরকারি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলই ভরসা গ্রামবাসীদের। দু’-তিন ঘন্টার বেশি বিদ্যুৎও পেতেন না গ্রামবাসীরা। শিক্ষা ও কাজের খোঁজে অনেকেই লখনউ, দিল্লি কিংবা মুম্বইয়ে যেতে বাধ্য হতেন। যেমন গিয়েছিলেন দামিনীও।
গ্রাম ছেড়ে যাওয়া অনেকেই হয়তো আর শিকড়ে ফেরেন না। দামিনী ফিরেছিলেন। তবে কফিনবন্দি হয়ে। তাঁর মৃত্যু গোটা দেশকে নাড়িয়ে দেয়। ঘুম ভেঙে জেগে উঠতে বাধ্য হয় উত্তরপ্রদেশ সরকারও। দামিনীর গ্রামের উন্নতিতে কোমর কষে নামে তারা। অভাবনীয় কর্মযজ্ঞ শুরু হয় গোটা গ্রামকে কেন্দ্র করে।
আর হবে নাই বা কেন! স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী আসবেন গ্রাম সফরে। এ দিকে গ্রামে পৌঁছনোর রাস্তা বলতে কিছু নেই বললেই চলে। তাই ঠিক হয় সড়ক পথে নয়, হেলিকপ্টারে গ্রামে আসবেন অখিলেশ সিংহ যাদব। গত শুক্রবার দামিনীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার আগে তড়িঘড়ি করে বানিয়ে ফেলা হয় হেলিপ্যাড। পাশাপাশি সরকারি অফিসার ও অন্য মেজ-সেজ নেতাদের কথা ভেবে শুরু হয় তড়িঘড়ি রাস্তা মেরামতির কাজ।
পাশের গ্রামগুলি আগের মতোই অন্ধকারে মুখ ডুবিয়ে থাকলেও দামিনীর গ্রামে এখন আলোর বন্যা। বিদ্যুৎ-সড়কের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল তৈরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কাজের সুযোগ করে দেওয়া হবে গ্রামবাসীদের। মুখ্যমন্ত্রী দামিনীর পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছেন কুড়ি লক্ষ টাকার চেক। গ্রামের উন্নতিতে অখিলেশ সরকারের মোট প্রতিশ্রুতি ত্রিশ লক্ষ টাকার। যদিও স্থানীয় নেতাদের বক্তব্য, ওই গ্রামে সরকারি পরিকাঠামো একদম কিছু নেই এ কথা বলা ঠিক নয়। গ্রামবাসীরা বলছেন, সব বাজে কথা। এখন যা হচ্ছে সবই দামিনীর জন্য। ওই মেয়ে আধুনিক যুগের দধীচি। যাঁর মৃত্যু আমাদের গ্রামের উন্নতির পথ প্রশস্ত করে গেল।
কিন্তু কত দিন প্রশাসনের নেকনজরে থাকবে ছোট্ট এই গ্রামটি? এই প্রশ্ন ইতিমধ্যেই তুলতে শুরু করেছেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের বক্তব্য, গোটা বিষয়টি এখন প্রচারে রয়েছে। নেতারা আসছেন, সরকারি অফিসার, সাংবাদিকেরা আসছেন। তাই এত ক্ষণ ধরে গ্রামে বিদ্যুৎ রয়েছে। কিন্তু আমরা সবাই বুঝতে পারছি ধীরে ধীরে যখন প্রচার কমে আসবে তখন আমরা আগের অবস্থায় ফিরে যাব। সড়ক মেরামতির কাজ থমকে যাবে।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও স্বাস্থ্যকেন্দ্র হওয়া নিয়ে সন্দেহ আছে গ্রামবাসীদের। অখিলেশের জন্য স্কুলের মাঠে তৈরি হেলিপ্যাড এখনও রয়ে গিয়েছে। ফলে, আপাতত বন্ধ গ্রামের ছেলেমেয়েদের খেলাধুলো।
দামিনীর পর আজ মথুরায় কাশ্মীরে গুলি বিনিময়ে নিহত জওয়ান হেমরাজ সিংহের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান অখিলেশ। সেখানেও একই ভাবে অর্থসাহায্য এবং গ্রামবাসীদের দাবি মেনে এলাকায় পাকা সড়ক নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখিয়া। দামিনী থেকে হেমরাজ-দিল্লি থেকে কাশ্মীর। চিত্রনাট্য যাই হোক না কেন রাজনীতি রয়েছে রাজনীতিতেই। |
|
|
|
|
|