|
|
|
|
সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকায় অস্বস্তি, নীতি চাইছে কেন্দ্র |
শঙ্খদীপ দাস • নয়াদিল্লি |
দু’বছর আগে অণ্ণা হজারের আন্দোলন থেকেই সূত্রপাত। তার পর থেকে একাধিক ঘটনা ও হালফিলে গণধর্ষণ-পরবর্তী ছবিটা দেখিয়ে দিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কী ভাবে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়তে পারে জন অসন্তোষ।
চোদ্দ মাস বাদে লোকসভা ভোট। তার আগে ঘন ঘন এমন আন্দোলনই এ বার ঘুম কেড়ে নিয়েছে সরকারের। কেন্দ্রের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতে সোশ্যাল মিডিয়ার উপর নজর রেখে অঙ্কুরেই অসন্তোষ প্রশমনের জন্য সুংসহত নীতি স্থির করতে চলেছে মনমোহন সরকার। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মণীশ তিওয়ারিকে এ ব্যাপারে একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মণীশের ওই প্রস্তাবকে সামনে রেখে কংগ্রেসের আসন্ন চিন্তুন শিবিরে আলোচনার মাধ্যমেই নীতি চূড়ান্ত করবে সরকার। কংগ্রেস তথা মন্ত্রিসভার শীর্ষ সারির এক নেতা বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব সরকারের কাছেও শুরুতে স্পষ্ট ছিল না। বেসরকারি চ্যানেলগুলিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং তাদেরই ব্যবহার করে মানুষের কাছে পৌঁছতে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। উদাহরণ দিয়ে কেন্দ্রের ওই মন্ত্রী বলেন, ২৬/১১ সন্ত্রাসের ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে টিভি চ্যানেলগুলিতে দেখানোর ফলে গোটা দেশে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। নিরাপত্তা কর্মীদের ‘অপারেশনে’ অসুবিধা হয়। তার থেকে শিক্ষা নিয়ে এই ধরনের ঘটনার সময় চ্যানেলগুলিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার নীতি নিয়েছে। সরকারের সংস্কার নীতি থেকে শুরু করে একাধিক পদক্ষেপ নিয়ে যখন নেতিবাচক প্রচার চলছিল, তখন এই বৈদ্যুতিন মাধ্যমকে ব্যবহার করেছে সরকারও। কেন্দ্রের ১১ জন মন্ত্রীকে বিভিন্ন চ্যানেলে গিয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
গণ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে সরকার কী প্রচার করবে, তা স্থির করতে একটি মন্ত্রিগোষ্ঠীও গঠন করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রেও সেই ধরনেরই পদক্ষেপ করা জরুরি। তবে সে ক্ষেত্রে ‘সোশ্যাল মিডিয়াকে’ নিয়ন্ত্রণের কথা সরকারের তরফ থেকে অবশ্য বলা হবে না। কারণ, তাতে অসন্তোষ তৈরি হবে। তা ছাড়া নিয়ন্ত্রণ করে সমস্যার সমাধানও সম্ভব নয়। ফলে যা জরুরি তা হল, এই ধরনের মাধ্যমে কোনও ঘটনা নিয়ে অসন্তোষের খবর ছড়ালে দ্রুততার সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে তা প্রশমনের জন্য বার্তা দেওয়া। কিছু অফিসার ও কর্মীদের এ ব্যাপারে দায়িত্ব দেওয়া হবে। তা ছাড়া, আপৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সরকারের একাধিক মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি গোষ্ঠীও তৈরি করা যাতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের এক কর্তা বলেন, ভারতের জনসংখ্যার প্রায় সাড়ে পাঁচ শতাংশ তথা ৬ কোটি ২৭ লক্ষ মানুষের ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহার করেন এমন ৬৮ শতাংশ মানুষই ফেসবুকের সদস্য। আর তা বিচার করেই সরকার সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছনোর জন্য ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা নিয়েছে। যেমন, প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের ট্যুইটার অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তথ্য দফতরেরও ফেসবুক, ট্যুইটার এবং ইউটিউব অ্যাকাউন্ট রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক গণধর্ষণের ঘটনার পর দেখা যাচ্ছে সেই ব্যবস্থাও যথেষ্ট নয়। কারণ, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও হানাহানিতে ইন্ধনের আশঙ্কাও ভবিষ্যতে থাকছে।
তবে শুধু সরকার নয়, কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছে কংগ্রেসও। কংগ্রেসের এক নেতা জানান, দলের নতুন প্রজন্মের নেতাদের সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলা হতে পারে, যাতে তাঁরা এই নতুন মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে আরও বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছতে পারেন। |
|
|
|
|
|