|
|
|
|
হবে জঙ্গি হানাও, জানাল কেন্দ্র |
কসাবের বদলা নিতেই নিয়ন্ত্রণরেখায় প্ররোচনা |
সুরবেক বিশ্বাস • কলকাতা |
‘অপারেশন এক্স’-এর বদলা নিতে ভারতের বুকে পর পর জঙ্গি হানার ছক কষেছে লস্কর-ই-তইবা। এমনটাই দাবি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফিদায়েঁ অর্থাৎ আত্মঘাতী জঙ্গিদের দিয়ে আঘাত হানা হবে বলে জেনেছেন গোয়েন্দারা।
পুঞ্চে দুই ভারতীয় সেনাকে গলা কেটে হত্যার সময়ে লস্কর-ই-তইবার প্রধান হাফিজ সইদ ঘটনাস্থলের কাছাকাছি ছিলেন বলে দাবি করেছেন খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে। হাফিজ আবার কাশ্মীরের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ভারত-পাক চাপান-উতোর ও হাফিজের হুমকিতে তার আঁচ বাড়ার প্রায় দু’সপ্তাহ আগেই কেন্দ্র দেশজোড়া সতর্কবার্তায় জানায়, আজমল আমির কসাবের ফাঁসির বদলা নিতে লস্কর ভারতে ধারাবাহিক জঙ্গি হানার জন্য প্রস্তুত হয়েছে। এক দিকে নিয়ন্ত্রণরেখায় উত্তেজনা বাড়ার ক্ষেত্রে প্ররোচনা, অন্য দিকে ভারতের মাটিতে উপর্যুপরি জঙ্গি হানাএই দ্বিমুখী কৌশল নিয়ে লস্কর চলছে বলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের আশঙ্কা।
গত ২৬ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পাঠানো সতর্কবার্তা পশ্চিমবঙ্গের ডিজি এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কাছেও পৌঁছেছে।
কী বলা হয়েছে ওই সতর্কবার্তায়?
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, কসাবকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন যিনি, বিশেষ আদালতের সেই বিচারক মদন লক্ষ্মণদাস তাহিলিয়ানিকে হত্যা করতে আত্মঘাতী হানার ছক কষেছে লস্কর। তাহিলিয়ানি মহারাষ্ট্রেরই বাসিন্দা। ভারতে লস্করের এক জন সদস্যের উপর এই ‘গুরুদায়িত্ব’ অর্পণ করা হয়েছে। তাকে একটি সায়ানাইড ক্যাপসুল সঙ্গে রাখতে বলা হয়েছে। কাজ শেষ হওয়ার পরমুহূর্তে যাতে ওই ক্যাপসুল দিয়ে সে আত্মহত্যা করতে পারে। সেই সঙ্গে লস্করের অন্য একটি দল তাকে সাহায্য করার জন্য সৌদি আরব থেকে বৈধ পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে মুম্বই পৌঁছাবে বলে গোয়েন্দারা জেনেছেন। হামলার ঠিক আগে আত্মঘাতী জঙ্গিকে শহিদ হওয়ার জন্য চূড়ান্ত ভাবে প্রস্তুত করা ও বাকি পরিস্থিতি অনুকূলে রাখার কাজ করবে ওই ‘ব্যাক আপ টিম’।
পাশাপাশি, পঞ্জাবের আট্টারি রোডে ভারতের দিকের যৌথ সীমান্ত চৌকিতেও পাকিস্তানের দিক থেকে লস্কর হানা দেবে বলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি। ইনটেলিজেন্স ব্যুরো-র এক কর্তার বক্তব্য, “আট্টারির ওই জায়গা এখন পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। সেখানে আত্মঘাতী হামলা হলে বহু প্রাণহানির আশঙ্কা। আমরা সতর্ক আছি।”
ওই বার্তায় বলা হয়েছে, জম্মু- কাশ্মীরেরও বিভিন্ন জায়গায় আত্মঘাতী হামলা চালানোর চেষ্টা করছে লস্কর। শ্রীনগরে গ্রেনেড হামলা চালাতে চায় তারা। বছর সাতেক আগে কাশ্মীরে পর্যটকদের বাসে এই ধরনের গ্রেনেড হানায় অনেকের প্রাণহানি হয়েছিল। এ বার লস্কর তার চেয়েও বড় ধরনের আক্রমণের ছক কষেছে বলে গোয়েন্দাদের খবর। শুধু তা-ই নয়, কাশ্মীরের কয়েক জন পুলিশ অফিসার ও তাঁদের পরিবারের লোকজনের উপরেও জঙ্গিরা আক্রমণের পরিকল্পনা করেছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ওই বার্তায় বলা হয়েছে।
কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এই সতর্কবার্তার গুরুত্ব কী? রাজ্য গোয়েন্দা শাখা তথা আইবি-র এক কর্তা জানান, লস্কর-ই-তইবার মতো জঙ্গি সংগঠন প্রায়শই কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গকে করিডর হিসেবে ব্যবহার করছে। ২৬/১১-র হানার সময়ে করাচির কন্ট্রোল রুমে থাকা মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা লস্কর জঙ্গি জাবিউদ্দিন আনসারি ওরফে আবু জুন্দল ২০০৬-এ ট্রেনে করে হাওড়া স্টেশনে নামে। রবীন্দ্র সরণির একটি হোটেলে রাতও কাটায়। তার পর বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে অবৈধ ভাবে বাংলাদেশে ঢোকে। সেখান থেকে পাকিস্তানে গিয়ে জিহাদি প্রশিক্ষণ নেয়।
ওই কর্তার কথায়, “এ বছর জুলাই মাসে জুন্দলকে সৌদি আরব থেকে ভারতে নিয়ে আসার পর তাকে জেরা করে কলকাতায় তার রাত কাটানোর বিষয়টি জানা যায়। জুন্দলের বক্তব্য থেকেই পরিষ্কার, লস্করের স্লিপার সেল কলকাতা শহর ও উত্তর ২৪ পরগনার মতো জেলায় রয়েছে। লস্কর দেশের যে-প্রান্তেই হানার পরিকল্পনা নিক, আমাদের নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকার কোনও অবকাশ নেই। কে বলতে পারে, এ ক্ষেত্রে হানাদারেরা এ রাজ্যের মাটিকে ব্যবহার করবে না?” |
|
|
|
|
|