বিরোধীদের সঙ্গে কথা মনমোহনের
ফের হামলা হলে পাল্টা জবাব, সুর চড়াল দিল্লি
থাসময়ে ও যথাস্থানে উপযুক্ত জবাব দেবে ভারত। নিয়ন্ত্রণরেখায় পাক সেনার হামলার বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে আজ এ কথা স্পষ্ট করে দিল নয়াদিল্লি। সাউথ ব্লকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ও পুঞ্চের নিয়ন্ত্রণরেখায় দু’দেশের ফ্ল্যাগমিটিং দুই জায়গা থেকেই পাকিস্তানের উদ্দেশে কড়া বার্তা পাঠাল ভারত। স্বয়ং সেনাপ্রধান বিক্রম সিংহ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, পাক সেনা ফের এ ধরনের প্ররোচনা দিলে ভারত কড়া ভাষাতেই তার জবাব দেবে। ভারতীয় জওয়ানদের উপরে ফের হামলা হলে ‘যথা সময়ে’ ও ‘যথাস্থানে’ উপযুক্ত জবাব দেওয়ার অধিকার ভারতের রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এ দিন দুপুরে পুঞ্চ সেক্টরের চাকান-দা-বাগে দু’দেশের ব্রিগেডিয়ারদের মধ্যে ফ্ল্যাগ মিটিং হয়। সেখানে দুই জওয়ানকে হত্যা ও একজনের মাথা কেটে নেওয়ার ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারত। আর নয়াদিল্লিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সেনাপ্রধান রীতিমতো সুর চড়িয়ে বলেন, “ভারত যখন এবং যেখানে উপযুক্ত বলে মনে করবে, প্রত্যাঘাত করবে। আক্রান্ত হলে আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকব না।” সেনা কম্যান্ডারদের ‘আগ্রাসী’ ও ‘আক্রমণাত্মক’ অবস্থান নেওয়ার জন্য প্রকাশ্যেই নির্দেশ দিয়েছেন সেনাপ্রধান। পাক সেনার আচরণকে ‘ক্ষমার অযোগ্য’ বলার পাশাপাশি সেনাপ্রধান জানান, পাক সেনারা এমন কাজ আগেও করেছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, বায়ুসেনা প্রধানের ‘অন্য বিকল্প’-র হুঁশিয়ারির পরে খোদ সেনাপ্রধানের এই কড়া অবস্থানে সরকারেরও সিলমোহর রয়েছে। নয়াদিল্লি যুদ্ধ চায় না ঠিকই, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ রেখায় পাক সেনা যা করেছে, তার পরে এ রকম কড়া জবাব না দিলে পাক-সেনা যে আরও মাথায় চড়ে বসবে, তা স্পষ্ট বুঝতে পারছে মনমোহন সিংহের সরকার। আর সে কারণেই আজ একই সঙ্গে নয়াদিল্লি ও পুঞ্চের নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে সেনাবাহিনী কড়া বার্তা দিয়েছে। তবে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন সেনাপ্রধান। পাক-সেনার উপর সে দেশের সরকারের নিয়ন্ত্রণ আলগা হলেও এ দেশের সেনাবাহিনী যে সরকারের নীতি মেনেই চলবে, তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি।
তবে একই সঙ্গে দু’দেশের মধ্যে শান্তি বজায় রাখার বিষয়টিও মাথায় রাখছে নয়াদিল্লি। বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ আজ জানান, পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়া বাঁচিয়ে রাখতে ভারত আপ্রাণ চেষ্টা চালাবে। ঘরোয়া রাজনীতির দাবি পূরণ করতে মনমোহন-সরকারকে অবশ্য এখন পাকিস্তান সম্পর্কে কড়া অবস্থান নিতে হচ্ছে। কারণ ল্যান্সনায়েক হেমরাজকে খুন ও তাঁর মাথা কাটার ঘটনায় রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে বিরোধীরা ইতিমধ্যেই মাঠে নেমেছে। পাক-সেনার আচরণ নিয়ে মনমোহন-সরকার যথেষ্ট কড়া মনোভাব নিচ্ছে না বলে বিজেপির অভিযোগ। চাপের মুখে কংগ্রেসও আজ ‘জাতীয়তাবাদী অবস্থান’ নিয়ে বলেছে, পাকিস্তানের হকি খেলোয়াড়দের এ দেশে খেলা নিয়ে শিবসেনার প্রতিবাদ যুক্তিসঙ্গত। প্রধানমন্ত্রীও আজ বিজেপি নেতা তথা সংসদের দুই কক্ষের বিরোধী দলনেতা সুষমা স্বরাজ ও অরুণ জেটলির সঙ্গে দেখা করে তাঁদের নিয়ন্ত্রণরেখার পরিস্থিতি বুঝিয়ে বলেন। সরকার এই ব্যাপারে বিরোধীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলবে বলেও জানান তিনি।
ভারত-পাকিস্তান ফ্ল্যাগ মিটিং। সোমবার পুঞ্চ সেক্টরে। —নিজস্ব চিত্র
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং সেনা-কর্তাদের বক্তব্য, ঘরোয়া রাজনীতির অঙ্ক মেনেই এ সব করছে পাকিস্তান। সেখানে সাধারণ নির্বাচন আসন্ন। তারই মধ্যে করাচি-সহ বিভিন্ন শহরে সংখ্যালঘু শিয়া সম্প্রদায়ের উপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলছে। এই পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী থেকে মৌলবাদী সংগঠন, এমনকী রাজনৈতিক দলগুলিও নিজেদের স্বার্থেই ভারত বিরোধিতার সুর চড়াচ্ছে। তা ছাড়া পাক-সেনার একাংশ চাইছে, ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার পারদ চড়াতে, যাতে আফগানিস্তান-সীমান্তে তালিবান-বিরোধী অভিযানে ভাটা পড়ে। আর এই গোলাগুলির মধ্যে ভারতে জঙ্গি ঢোকানোর পুরনো পাক-কৌশল তো রয়েইছে। সব মিলিয়ে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ীই পাকিস্তান মেন্ধার সেক্টরে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন সেনা-কর্তারা।
এ দিন গোটা দেশেরই নজর ছিল পুঞ্চের চাকান-দা-বাগের ফ্ল্যাগ মিটিং-এর দিকে। প্রায় আধ ঘণ্টার বৈঠকে কৃষ্ণঘাটি ব্রিগেডের কম্যান্ডার টি এস সান্ধু পাক-সেনার প্রতিনিধিদের জানিয়ে দেন, পাক-সেনার আচরণ সমস্ত রকম সামরিক আচরণের পরিপন্থী। নিহত জওয়ানের দেহ বিকৃত করার অর্থ জেনিভা চুক্তি লঙ্ঘন। নর্দার্ন কম্যান্ডের মুখপাত্র রাজেশ কালিয়ে বলেন, “আমরা জানিয়ে দিয়েছি, এই ধরনের বর্বর ও কাপুরুষোচিত আচরণ মানা যায় না। পরিকল্পনা করেই ২০০৩ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভাঙা হয়েছে। যাতে উত্তেজনা আরও বাড়ে।”
পাকিস্তান যথারীতি ভারতের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তিও তারা ভাঙেনি বলে দাবি করে পাকিস্তান। উল্টে ভারতীয় সেনা নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে এক পাক-জওয়ানকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ তোলেন তাঁরা। ভারতীয় সেনা-কর্তাদের বক্তব্য, পাকিস্তানের কাছ থেকে এমন জবাবই প্রত্যাশিত। পাক-সেনার অভিযোগ উড়িয়ে সেনাপ্রধান বলেন, “ওরা যা দাবি করছে, তেমন কোনও অভিযান ভারত চালায়নি। ওদের হামলা ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। তাকে যুক্তিসঙ্গত করে সাজিয়ে তুলতেই এখন পাকিস্তানকে মিথ্যে যুক্তি খাড়া করতে হচ্ছে।” পাক-সেনার সঙ্গে লস্কর-ই-তইবা জঙ্গিদেরও এই ঘটনায় জড়িত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি সেনাপ্রধান।
সেনা সূত্রের বক্তব্য, গত কাল সন্ধ্যাতেও পুঞ্চে পাকিস্তানের দিক থেকে গুলি চলেছে। শনিবার রাতে কৃষ্ণঘাটি সেক্টরে গুলির পর গত কাল নাঙ্গিটিক্রি এলাকায় পাক-সেনা ফের গুলি চালায়। পাল্টা জবাব দেয় ভারতও। সেনাপ্রধানের বক্তব্য, পাক-সেনার উপরে চাপ বাড়াতে হবে। নিহত জওয়ানের শরীরের বাকি অংশ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলতে হবে। দ্বিপাক্ষিক স্তরে বা আন্তর্জাতিক মঞ্চে সেই দাবি তোলার জন্য কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক পথ খোলা রয়েছে। দু’দেশের ডিজি (মিলিটারি অপারেশনস)-এর মধ্যেও এ বিষয়ে আলোচনা চলছে।

ভারত যখন এবং যেখানে উপযুক্ত বলে মনে করবে, প্রত্যাঘাত করবে। আক্রান্ত হলে আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকব না।
বিক্রম সিংহ, সেনাপ্রধান


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.