ভিন্ রাজ্যে কাজের খোঁজে গিয়ে অচেনা লোকেদের হাতে ‘বন্দি’ হয়েছিলেন এ রাজ্যের দুই যুবক। অভিযোগ, মুক্তিপণের টাকা না পেলে তাঁদের কিডনি কেটে নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। শেষেমেশ বিশাখাপত্তনমের ঘিঞ্জি বস্তির অন্ধকার একচিলতে ঘরে আটক হওয়া দু’জনকে উদ্ধার করল বৌবাজার থানার পুলিশ। পুলিশ জানায়, একটি অপহরণের মামলা রুজু করা হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।
পুলিশ জানায়, পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটের বৈষ্ণবচকের বাহারজোলা গ্রামের বাসিন্দা মোমেন ও মোস্তাকিম মিদ্দা নামে ওই দুই ভাই কাঠের আসবাব তৈরির কাজ করেন। গত ডিসেম্বরে কলকাতার চাঁদনি চক এলাকায় এক ঠিকাদারের কাছে কাজ পান তাঁরা। মোমেনদের অভিযোগ, আরও ভাল চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে দু’জনকে অন্ধ্রপ্রদেশে নিয়ে গিয়েছিলেন বছর চল্লিশের ওই ঠিকাদার।
২৭ ডিসেম্বর বিশাখাপত্তনমে পৌঁছন দুই ভাই। তাঁরা পুলিশকে জানিয়েছেন, স্টেশন থেকে গোপীগোপাল নামে এক ব্যক্তি তাঁদের নিয়ে যান। তবে খানিক বাদেই টের পান যে, তাঁরা দুষ্কৃতীদের হাতে পড়ে গিয়েছেন।
মোমেনের কথায়, “বস্তির একটি ঘরে আমাদের তালাবন্ধ করে রেখে দেওয়া হয়। মাঝেমধ্যেই মারধর করা হত। বাড়িতে ফোন করে টাকা চেয়েছিল ওরা। একজন বলেছিল, টাকা না পেলে বিদেশে পাঠিয়ে আমাদের কিডনি কেটে নেওয়া হবে।” |
অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা ওই দু’জনকে বলে, স্থানীয় পুলিশ তাদের ‘বন্ধু’। কাজেই পালাতে গেলে জানে মেরে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। মোস্তাকিম বলেন, “অন্ধকার, স্যাতসেঁতে ছোট্ট ঘরে গরু-ছাগলের মতো আটক ছিলাম। আমাদের ভাষা কেউ বুঝত না। কোনও দিন একবেলা স্বাদহীন সম্বর, ভাত পেতাম। কোনও দিন তা-ও নয়। জলও থাকত না সব সময়।”
মুক্তিপণ চেয়ে ‘অপহরণকারী’রা কোলাঘাটের বাড়িতে ফোন করলে বৌবাজার থানার দ্বারস্থ হন মোমেন-মোস্তাকিমের পরিবার। পুলিশ জানায়, দুষ্কৃতীরা যে মোবাইল থেকে ফোন করে তার সূত্র ধরে জানা যায়, বিশাখাপত্তনমের গজুয়াকা এলাকার ইন্দিরা কলোনির কোথাও আটকে রাখা হয়েছে দুই যুবককে। স্থানীয় পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ১২ জানুয়ারি ওই এলাকায় তল্লাশি শুরু করেন তদন্তকারীরা। ঘিঞ্জি বস্তির অলি-গলিতে ঘুরে মোমিন-মোস্তাকিমের নাম ধরে ডাকেন তাঁরা। বাংলায় কথা শুনে বন্ধ ঘরের মধ্যে থেকে প্রাণপণে চিৎকার শুরু করেন দুই ভাই। বাইরে থেকে দু’টি বড় তালা আটকানো ছিল। ওই ঘরের দরজা ভেঙেই পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে।
কলকাতা পুলিশের ডি সি (সেন্ট্রাল) দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ বলেন, “প্রাথমিক ভাবে অনুমান, দু’টি শহরের ঠিকাশ্রমিক সরবরাহ সংস্থার মধ্যে টাকাপয়সা নিয়ে ঝামেলার জেরেই এই ঘটনা।” |