কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে লাভ অনাবাসীদেরও
বিদেশি লগ্নিকে স্বস্তি দিতে পিছোল কর ফাঁকি বিধি
বিদেশি লগ্নির পথের কাঁটা উপড়ে ফেলে বাজেটের আগেই পি চিদম্বরম অর্থনীতিকে আবার সংস্কারের অভিমুখে নিয়ে যেতে তৎপর হলেন।
গত বছর তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় বাজেটে ‘কর ফাঁকি প্রতিরোধ বিধি’ (জিএএআর) চালু করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কর ফাঁকি আটকে রাজস্ব বাড়ানো। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, অর্থ মন্ত্রক এমনই কড়া বিধি তৈরি করেছে যে, শিল্পমহল ও বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। তাঁরা মনে করছেন, এই নিয়ম চালু হলে আয়কর দফতরের হাতে নাজেহাল হতে হবে লগ্নিকারীদের। সরকারও এই অভিযোগ প্রকারান্তরে মেনে নেয়। নতুন বছরের শুরুতেই আজ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে স্বস্তির বার্তা পাঠিয়ে চিদম্বরম ঘোষণা করলেন, ওই বিতর্কিত জিএএআর সংশোধন করা হবে। যে সব দিক নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মনে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তা সংশোধন করে নতুন বিধি চালু হবে। তবে সেটাও হবে ২০১৬ সালে। অর্থমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরে নতুন বিদেশি বিনিয়োগের আশায় ঊর্ধ্বগামী হয়েছে শেয়ার সূচক। দাম বেড়েছে টাকারও।
জিএএআর তৈরি করে একেবারে সাবেকি কায়দায় কর ফাঁকি রোখার ব্যবস্থা করেছিলেন প্রণববাবু। বিদেশি সংস্থাগুলি কর আইনের সমস্ত শর্ত মেনে চলছে কি না, তা খতিয়ে দেখার যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ওই বিধিতে যে কোনও ব্যবসায়িক লেনদেনকেই সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছিল। সংশোধিত বিধিতে তা হবে না। পুরনো বিধিতে বলা হয়েছিল, বিনিয়োগের বিভিন্ন উদ্দেশ্যের মধ্যে একটি উদ্দেশ্য কর ছাড় আদায় করা হলেই আয়কর দফতর প্রশ্ন তুলতে পারবে। এখন বলা হচ্ছে, ভারতে বিনিয়োগের একমাত্র উদ্দেশ্য কর ছাড় আদায় করা হলে তবেই জিএএআর প্রযোজ্য হবে। এমনকী কর ছাড়ের পরিমাণ ৩ কোটি টাকার কম হলে তা নিয়ে মাথা ঘামানোই হবে না। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে অনাবাসী ভারতীয়দেরও খুশি হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে, কারণ তাঁদের লগ্নিও এই বিধির আওতার বাইরেই রাখা হবে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের স্বস্তি দিতে গিয়ে রাজস্ব ক্ষতি হবে না তো? চিদম্বরমের জবাব, “কর ফাঁকি প্রতিরোধ বিধির প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু এমন ভাবে এই বিধি তৈরি করা প্রয়োজন, যাতে লগ্নিকারীদের মনে শঙ্কা না থাকে। আবার রাজস্ব ক্ষতিও না হয়। নতুন ব্যবস্থায় সেই ভারসাম্য বজায় থাকবে।” অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, এর আগে বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির ছাড়পত্র দিলেও এই বিধির জন্য বিদেশি লগ্নিকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা কাটানো যায়নি। বিদেশি বিনিয়োগ না এলে লেনদেনের ঘাটতিতেও লাগাম পরানো যাচ্ছে না। ফলে বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডারে টান পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেই কারণে বাজেটের আগেই এ ব্যাপারে ঘোষণা করে দেওয়া হল। সরকার যে বিদেশি লগ্নিকারীদের হেনস্থা করতে চাইছে না, সেই বার্তা দিতে এখন ভোডাফোন-সংস্থার কর্তাদের সঙ্গেও আলোচনার পথে হাঁটছেন অর্থ মন্ত্রক ও আয়কর দফতরের কর্তারা। ভোডাফোন-হাচিসন চুক্তির উপর ১১ হাজার ২০০ কোটি টাকার কর সংক্রান্ত দাবি নিয়ে চলতি সপ্তাহেই দু’পক্ষের আলোচনা হবে।
প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি ভবনে চলে যাওয়ার পর কিছু দিনের জন্য অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। তখনই কর ব্যবস্থা নিয়ে শিল্পমহলের অনিশ্চয়তা দূর করতে সচেষ্ট হন তিনি। কর বিশেষজ্ঞ পার্থসারথি সোমের নেতৃত্বে কমিটি গড়ে ওই বিধির বিতর্কিত দিকগুলি খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। চিদম্বরম জানান, সোম কমিটির অধিকাংশ সুপারিশ মেনে নেওয়া হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, আশিটিরও বেশি দেশের সঙ্গে ভারতের দ্বৈত কর এড়ানোর চুক্তি রয়েছে। এর ফলে কোনও ব্যবসায়িক লেনদেনের ক্ষেত্রে ওই সব দেশে এক বার কর দেওয়া হলে ভারতে দ্বিতীয় বার কর দিতে হবে না। কিন্তু এমন অনেক দেশ রয়েছে, যে সব দেশে করের হার খুবই কম বা শূন্য। এই সব দেশের সঙ্গে ভারতের তাই চুক্তিও নেই। কর এড়াতে ভারতে ব্যবসারত বহু সংস্থাই ওই সব দেশে ব্যবসায়িক লেনদেন করে বা সেখান থেকে ঘুরপথে এ দেশে বিনিয়োগ করে। সংশোধিত বিধি অনুযায়ী, যে সব সংস্থা ওই চুক্তি দেখিয়ে কর ছাড় চাইবে, তাদের বিরুদ্ধে জিএএআর প্রয়োগ করা হবে। ২০১০ সালের ১০ অগস্ট সংসদে প্রত্যক্ষ কর বিধি বিল পেশ করা হয়। তার আগের কোনও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সংশোধিত বিধি প্রযোজ্য হবে না। ২০১৬ সালে যদি নতুন বিধি চালু হয়, তা হলে কি তখন আয়কর দফতরের কর্তারা ৪-৫ বছরের পুরনো লেনদেনের ক্ষেত্রে কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছিল কি না, তা নতুন করে দেখতে পারবেন? চিদম্বরমের জবাব, “আইনত নতুন করে খুলে দেখাই যাবে। কিন্তু তার জন্য যে সব শর্ত থাকবে, তা পূরণ করতে হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.