প্রচলিত আছে, কবি জয়দেব বর্ধমানের কাটোয়ায় নিয়মিত গঙ্গা স্নানে যেতেন। জয়দেব থেকে এতটা পথ যেতে কষ্ট হত তাঁর। কবি একদিন স্বপ্ন দেখেন, ‘মা গঙ্গা বলছেন এ বার থেকে তোকে আর এতটা পথ পায়ে হেঁটে আসতে হবে না। আমিই উজানে অজয়নদে আসব। সেটা বোঝা যাবে যখন মকর সংক্রান্তির দিন জয়দেব সংলগ্ন অজয়ের কদমখণ্ডির ঘাটে একটি ফুল ভেসে আসবে এবং সেই ফুল ভেসে এসেছিল ওই ঘাটে।’ মকর সংক্রান্তির দিন অজয়ের ঘাটে স্নান সারলে গঙ্গা স্নানের পুণ্য অর্জন হয়-- প্রচলিত সেই বিশ্বাস থেকে বহু মানুষ এই দিনেই পুণ্যস্নান করেন। সোমবার লক্ষাধিক মানুষ এখানে মকর স্নান সেরেছেন। প্রশাসনের হিসেব আনুযায়ী সংখ্যাটা প্রায় আড়াই লক্ষ। তবে আক্ষেপ একটাই অন্য বছরের তুলনায় অজয়ে এ বার অনেক কম জল থাকায় ডুব দিয়ে স্নানের মজা পাননি আনেকে। মেলা কমিটির অন্যতম সদস্য তথা ইলামবাজারের বিডিও অনিরুদ্ধ নন্দী বলেন, “হিংলো জলাধার থেকে প্রতি বারের মতো এ বারও জল ছাড়া হয়েছিল। ভোরের দিকে জল থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটা কমে গিয়েছে।”
|
প্রচুর ভিড় হয় বলে মেলা শুরুর দিন থেকে মেলায় ছোট-বড় গাড়ি ঢোকা নিষিদ্ধ করে প্রশাসন। প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে মোটরবাইক বা চার চাকার গাড়ি রেখে হেঁটে ঢুকতে হয় মানুষজনকে। কিন্তু বাইক বা গাড়ি রাখতে পার্কিং চার্জ বাবদ যে পরিমাণ টাকা নেওয়া হচ্ছে সেটা নিয়ে অসন্তুষ্ট সকলেই। বাইক বা স্কুটার রাখলে দু’ চার ঘন্টার জন্য দিতে হচ্ছে ৪০ টাকা। রাতে গাড়ি রাখলে বা হেলমেট রাখলে আরও অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। আর দিনের বেলায় চার চাকা গাড়ি রাখলে ১০০ টাকা এবং রাতে থাকলে আরও ২০০ টাকা দাবি করছেন ওই কাজের বরাত পাওয়া লোকজন। মেলায় আসা মানুষ জানাচ্ছেন, পার্কিং চার্জ যথেষ্টই বেশি। কারও কারও সঙ্গে কাথাকাটিও হচ্ছে। মেলা কমিটির সম্পাদক তথা বোলপুরের মহকুমাশাসক প্রবালকান্তি মাইতি বলেন, “আমরা এই বিষয়ে বেশ কিছু আভিযোগ পেয়েছি। পরের বছর থেকে একটি নির্দিষ্ট রেট বেঁধে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।”
|
এমনিতেই বাউল মেলা বলে খ্যাত জয়দেব মেলায় বাউল গানের আধিপত্যে ভাগ বসিয়েছে কীর্তন। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন ছোট বড় কোম্পানির বিভিন্ন গানের ক্যাসেট বা সিডি বিক্রির হিড়িক। মেলা ও বিভিন্ন আখড়ায় তারস্বরে সেই সব গানের আওয়াজ বাউল গানের ভাব নষ্ট করছে এবং অপসংস্কৃতির পরিবেশ গড়ে উঠছে বলে গত বছরই অভিযোগ তুলেছিল জয়দেব সংস্কৃতি পরিষদ। সেটা যে মিথ্যা নয়, বর্ধমানের হাটেগোবিন্দপুরের বাউল সাধনদাস বৈরাগ্যের কথায় পরিষ্কার। তিনি বললেন, “বেশ কয়েক বছর আগে জয়দেবে নিরবিচ্ছিন্ন বাউল চর্চার জন্য মেলা প্রাঙ্গণ থেকে আনেকটা দূরে মনের মানুষ আখড়া গড়ে ছিলাম। এ বার আখড়ার পাশে অন্য আখড়া থেকে মাইকে ভিন্ন গানের চড়া আওয়াজে বাউলদের ভাব আনতে সমস্যা হচ্ছে।” |
সোমবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হল জয়দেব মেলার। বাউল মঞ্চে মেলা উদ্বোধন করলেন সন্ন্যাসী সোহম বাবা। রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের অনুষ্ঠানে থাকার কথা থাকলেও নলহাটি বিধানসভার উপ-নির্বাচনের দিন ঘোষিত হওয়ায় নির্বাচন বিধি ভঙ্গের কারণে আসেননি তিনি। বাউল গান পরিবেশন করেন তারকদাস বাউল। এ দিন থেকেই বাউল মঞ্চে তিন দিন অনুষ্ঠান চলবে। |