সাঁইথিয়া-বাতাসপুর রাস্তাটি মাত্র সাড়ে ৬ কিলোমিটার। এই রাস্তা সংস্কার হলে কম সময়ে অন্যত্র পৌঁছনো সম্ভব হবে। তাই রাস্তা আরও চওড়া ও সংস্কারের জন্য সাঁইথিয়া এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে কিছু জমি নেওয়া হয়েছিল বহু বছর আগে। কাজ চলছিল ঢিমেতালে। কিন্তু সম্প্রতি রাস্তার কাজের জন্য দেওয়া জমির মালিকদের একাংশের বাধায় সেই কাজ আপাতত থমকে গিয়েছে।
হঠাৎ এমন কী হল, বাসিন্দারা কাজে বাধা দিলেন? বাসিন্দারা জানান, তাঁদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। অভিযোগ ওঠে, জমির ক্ষতিপূরণের দাবিতে যে ঠিকাদার সংস্থা কাজ করছিল তাদের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। তাই যন্ত্রপাতি সরিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে ওই ঠিকাদার সংস্থা। সংস্থার কর্ণধার শিশির বিশ্বাসের দাবি, “স্থানীয় কিছু লোকজন জমির ক্ষতিপূরণের দাবিতে হুমকি তো দিচ্ছেন, তার উপরে গালিগালাজও করছেন। সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে সমস্ত কিছু জানিয়ে বাধ্য হয়ে রাস্তার কাজ বন্ধ করে দিয়েছি এবং যন্ত্রপাতিও সরিয়ে নিয়েছি।”
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে রাজগ্রাম-বোলপুর সড়কের সাঁইথিয়া পুর-এলাকার পর থেকে বাতাসপুর পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারের জন্য টেন্ডার করে পূর্ত দফতর (জাতীয় সড়ক)। তার জন্য ২.৯৬ কোটি টাকার টেন্ডার হয়। পরবর্তীতে তার সঙ্গে আরও ১ কিমি রাস্তা যোগ করা হয়। বাড়তি রাস্তার কাজের জন্য কত টাকা বরাদ্দ হয়েছে তা জানা যায়নি। কাজের বরাত পায় রামপুরহাটের একটি ঠিকাদার সংস্থা। |
ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার শিশির বিশ্বাস জানান, মাস ছয়েক আগে তাঁরা রাস্তার কাজ শুরু করেন। সাঁইথিয়ার দিক থেকে ৪.৫ কিলোমিটার রাস্তার কাজ প্রায় শেষ। শুধু পিচ দেওয়ার অপেক্ষা। তাঁর অভিযোগ, “সাঁইথিয়ার দিক থেকে ৪-৫ কিলোমিটারের পর থেকে এলাকায় কিছু কৃষিজীবী লোকজন জমির ক্ষতিপূরণের দাবিতে রাস্তার কাজ বন্ধ করে দেন। নানা রকম হুমকির কারণে রাস্তা নির্মাণের যন্ত্রপাতি এমন কী পাথর পর্যন্ত সরিয়ে নিয়েছি।”
এ দিকে, মাঝপথে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাস্তায় পাথর, বালি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। যানবাহন চলাচলের সমস্যা তো হচ্ছেই, সমস্যায় পড়ছেন পথচলতি মানুষজনও। এই নিয়ে এলাকার লোকের মধ্যে যথেষ্ট ক্ষোভও আছে। স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন উঠেছে, জমি নেওয়ার সময়ে কি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি? সে প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর অবশ্য প্রশাসনের তরফ থেকে পাওয়া যায়নি। সাঁইথিয়ার বিডিও জাহিদ সাহুদ বলেন, “রাস্তার কাজ বন্ধ করে দেওয়ার খবর পেয়েই এলাকায় গিয়েছিলাম। কত জনের কাছ থেকে কত পরিমাণ জমি নেওয়া হয়েছে তা এখনই বলা সম্ভব নয়।” তবে বেশ কয়েক জন মালিক যে এখনও জমির দাম বা ক্ষতিপূরণ পাননি তা মেনে নিয়েছেন বিডিও। কেন পাননি তারও উত্তর মেলেনি।
রাস্তার কাজ বন্ধ নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। পরিহারপুর এলাকার বাসিন্দা তথা কংগ্রেসের সাঁইথিয়া ব্লক সভাপতি প্রদীপ সরকার বলেন, “এর জন্য মুখ্যমন্ত্রীর জমি নীতিই দায়ী। এ ক্ষেত্রে কৃষকেরা অনেক বাস্তববাদী। তাঁরা রাস্তার জন্য জমি দিতে আপত্তি করবেন না। তবে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ চাইবেনই।” পরিহারপুরের পঞ্চায়েত সদস্য শেখ মস্তাকিন অভিযোগ করেন, ‘‘পরিহারপুর, বলাইচণ্ডী-সহ এলাকার কয়েকটি গ্রামের বেশ কিছু কৃষকের কম-বেশি কৃষি জমি দীর্ঘদিন আগে রাস্তা করার সময় নিয়েছে। যখনই জমির ক্ষতিপূরণের কথা বলা হয়, তখনই দেখছি দেখব করে কাটিয়ে দিচ্ছে প্রশাসন। বাস্তবে কিছুই করে না।” বাতাসপুর এলাকার বাসিন্দা তথা তৃণমূলের সাঁইথিয়া ব্লক সভাপতি সাবের আলি খান বলেন, “যে সব কৃষিজীবী মানুষের জমি গিয়েছে, তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত। বিষয়টা প্রশাসন দেখছে।”
অন্য দিকে, এলাকার বাসিন্দা নিয়ত আলি, পরেশ সরকার, বকুল দাস, বড়জাহান শেখরা বলেন, “র্দীঘদিন আগে রাস্তা তৈরির জন্য আমাদের জমি নেওয়া হয়েছিল। আজ দেব, কাল দেব করে কাটিয়ে দিচ্ছেন প্রশাসনের লোকজন। আমরাও চাই রাস্তা সংস্কার হোক। তার আগে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।” পূর্ত দফতরের (জাতীয় সড়ক) এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র জাহ্নবি কোনার বলেন, “ওই রাস্তার কাজ যাতে তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করা যায়, তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই জেলা ভূমি দফতরের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়েছে।” |