‘এত দিন পরে কেন’, প্রশ্নের মুখে মন্ত্রীরা
ক্রমান্বয়ে খুন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ‘তলানিতে’। ‘এত দিন আপনারা কোথায় ছিলেন?’
উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের লাগোয়া নরম গ্রামে শুক্রবার দুই তৃণমূল কর্মী খুনের পরে তাঁদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া দুই মন্ত্রী-গৌতম দেব ও সুব্রত সাহার গাড়ি আটকে শনিবার এ প্রশ্নই তুললেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
গ্রামের প্রবেশপথে বাঁশ ফেলে মন্ত্রীদের পথ আটকে তাঁরা বলেন, “এত দিন আপনারা কোথায় ছিলেন? ঢের হয়েছে, আপনারা বাড়ি ফিরে যান!” শুধু তাই নয়, চাক বেঁধে থাকা ভিড় থেকে উড়ে আসতে থাকে ইট-ও। তাতেই ভেঙে যায় পুলিশের একটি মেডিক্যাল ভ্যানের কাচ।
বিক্ষোভ সরিয়ে পুলিশ উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণমন্ত্রী সুব্রত সাহাকে নিহত দুই তৃণমূল কর্মীমুকুন্দ ও ক্ষীরোদ দাসের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই তেতে ওঠে পরিস্থিতি। ক্ষিপ্ত জনতার সঙ্গে রীতিমতো ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায় পুলিশের। ভিড়ের মধ্যে থেকেই উড়ে আসে, “‘গত দু’মাস ধরে একের পর এক খুন হচ্ছে। এত দিনে আপনাদের সময় হল?” মন্ত্রীদের গাড়ির সামনে ছুটে এসে উত্তেজিত এক গ্রামবাসী বলেন, “তৃণমূল কর্মীরা খুন হল বলেই এলেন না কি, অন্যেরা কি মানুষ নয়?’’
ঘেরাও গৌতম দেব এবং সুব্রত সাহা। —নিজস্ব চিত্র
পরিস্থিতি ক্রমেই তপ্ত হচ্ছে দেখে পুলিশ দুই মন্ত্রীকে সরিয়ে নিয়ে যায়। জনতা ধাওয়া করে সেখানেও। এ বার গাড়ি থেকে নেমে গৌতমবাবুই পরিস্থিতির হাল ধরেন। গ্রামবাসীদের তিনি আশ্বস্ত করেন, “এক সপ্তাহ সময় দিন। সব অভিযুক্তদেরই গ্রেফতার করা হবে। কথা দিচ্ছি।” জনতা নরম হয় এর পরেই। পরিস্থিতি কিছুটা থিতিয়ে গেলে পুলিশের ঘেরাটোপে দুই মন্ত্রী অবশেষে নিহতদের বাড়িতে যান। কান্নায় ভেঙে পড়া দুই পরিবারের সদস্যদের গৌতমবাবু আশ্বাস দেন, “রাজ্য সরকার আপনাদের পাশে রয়েছে, থাকবে। ভয় পাবেন না।” কেন এই খুন? গৌতমবাবু অবশ্য কোনও রাজনৈতিক দলের দিকে সরাসরি আঙুল তোলেননি। তিনি বলেন, “রাজ্য জুড়ে উন্নয়ন রুখতে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে অরাজকতা তৈরি করা হচ্ছে বলে মনে করছি।” কিন্তু এই খুন কী আদপে রাজনৈতিক? প্রশ্ন এড়িয়ে মন্ত্রী বলেন, “অপরাধীদের গ্রেফতার করা হবে। তবে কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনার জেরে রায়গঞ্জ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে বলে মনে করছি না।”
স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য পুলিশের ভূমিকায় হতাশ। গত দু’মাসে রায়গঞ্জ-সহ আশপাশের এলাকায় এগারোটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। তৃণমূলের ওই দুই নেতা সেই তালিকায় শেষ সংযোজন। সেই সঙ্গে দুষ্কৃতীদের গুলি-বোমার লড়াইও লেগেই রয়েছে। দিন কয়েক আগে রায়গঞ্জে এক কেব্‌ল টিভি কর্তার মৃত্যুর পরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। পুলিশ সুপারের বদলির দাবিতে রাজ্যের শাসক দল ছাড়া, অন্য রাজনৈতিক দলগুলি গত সোমবার ১২ ঘণ্টার বন্‌ধও ডাকে।
রাজ্যের জনশিক্ষা ও গ্রন্থাগারমন্ত্রী তথা জেলার বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরীও পুলিশ সুপারের ‘নিষ্ক্রিয়তার’ অভিযোগ তুলে দিন কয়েক আগে মন্তব্য করেন, “পুলিশ সুপারের নিজেরই জেলা থেকে চলে যাওয়া উচিত।” গৌতমবাবু অবশ্য বলেন, “রায়গঞ্জের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে সমস্ত রিপোর্টই দেব। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তিনিই নেবেন।” এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি পুলিশ সুপার দীপঙ্কর ভট্টাচার্য।
রায়গঞ্জের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি অবশ্য এ দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, “ভাঙচুর আমি সমর্থন করি না। কিন্তু এটা জনরোষ। রায়গঞ্জে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে বলেই মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে আছেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.