হাসিমুখ, হাতে-হাত মমতা-রাজ্যপাল
রাজ্যপাল-মুখ্যমন্ত্রী দূরত্ব কমে এল। আক্ষরিক এবং প্রতীকী অর্থে।
আক্ষরিক, কারণ, শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মের সার্ধ শতবর্ষ পালন অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের পাশেই বসতে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। শুধু পাশাপাশি বসাই নয়, খুবই আন্তরিক ভঙ্গিতে দু’জনকে কথাবার্তাও বলতে দেখা গেল। এমনকী, এক জন বয়োজ্যেষ্ঠ যে ভাবে কনিষ্ঠ কারও সঙ্গে কথা বলেন, সে ভাবেই মুখ্যমন্ত্রীর কাঁধে হাত রেখে রাজ্যপালকে কথা বলতে দেখা গিয়েছে।
রাজনীতির কারবারিদের মতে, এটা অবশ্যই প্রতীকী এবং তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, আইন-শৃঙ্খলার অবনতির জেরে রাজ্যে ‘গুন্ডারাজ’ কায়েম হয়েছে বলে রাজ্যপাল প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছিলেন। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট দিল্লিতেও পাঠিয়েছেন তিনি। সেই রাজ্যপালের সঙ্গে স্বামীজির জন্মদিনের অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে মুখ্যমন্ত্রী আপাতত সংঘাতে ইতি টানলেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
কথোপকথনে ব্যস্ত রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী। শনিবার সল্টলেক স্টেডিয়ামে। —নিজস্ব চিত্র
পাশাপাশি বসা, আন্তরিক ভঙ্গিতে হাসিমুখে রাজ্যপাল-মুখ্যমন্ত্রীর কথোপকথন তো আছেই। রাজ্যপালকে ‘হলুদ কার্ড’ দেখিয়ে যিনি বিতর্কের পারদ চড়িয়েছিলেন, সেই পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে এ দিন যুবভারতীর ধারে-কাছে দেখা যায়নি। কিন্তু পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম (ববি), পূর্ণেন্দু বসু, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, ব্রাত্য বসু, অরূপ বিশ্বাস, অমিত মিত্রর মতো গুরুত্বপূর্ণ অধিকাংশ মন্ত্রীই ছিলেন। ছিলেন তৃণমূলের মুখ্যসচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে সাংসদ তাপস পাল, সুব্রত বক্সি, মমতাপন্থী নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষও। ২৪ ঘণ্টা আগেই দলনেত্রী সুব্রতবাবুকে কার্যত লাল কার্ড দেখিয়ে দিয়েছেন। দলের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এ বার থেকে পার্থবাবু ও ববিই সরকারের তরফে বিবৃতি দেবেন। কেউ কেউ মনে করছেন, রাজ্যপালের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতেই সুব্রতবাবুকে এ দিন যুবভারতী থেকে দূরে রেখেছে দল।
সুব্রতবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, সরকারের কাজে তাঁকে এ দিন সাগরদ্বীপে যেতে হয়েছে। তাঁর কথায়, “মহাকরণে স্বামীজির প্রতিকৃতিতে মালা দিয়ে আমি সাগরে চলে এসেছি। গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতির কাজ করছে আমার জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর। আমাকে তার তদারকি করতে হচ্ছে।” রাজ্যপালের বিরুদ্ধে তাঁর হলুদ কার্ড দেখানো সংক্রান্ত মন্তব্য নিয়ে এ দিন সংবাদমাধ্যমের সমালোচনা করেছেন সুব্রতবাবু। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “তোমরা দেখাও, আমি লাল-হলুদ বলেছি। রেকর্ডে দেখাও কোথায় বলেছি? কেন এ রকম বলে চলেছ? তোমাদের সঙ্গে তো কথাই বলা যাবে না। তোমরা এমন করলে তো মুশকিল হয়ে যায়।”
রাজ্যপালও সন্তপর্ণে এড়িয়েছেন ওই বিতর্ক। এ দিন ময়দানে স্বামীজির মূর্তিতে মাল্যদান করে বেরিয়ে আসার পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রাজ্যপাল বলেন, “কর্মই আসল। বিবেকানন্দ বলেছেন, ওঠো, জাগো। যত ক্ষণ না তোমার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারছ, থেমো না।” আর তার পরেই তাঁর মন্তব্য, “কথা বলা বন্ধ করতে হবে।” যুবভারতীতে তাঁর বক্তৃতায় বিবেকানন্দের কথা বলতে গিয়ে রাজ্যপাল বলেন, “অন্যের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ কোরো না। মনের অন্ধকার দূর করার জন্য প্রার্থনা করো।”
রাজ্যপালের এই বক্তব্যকে রাজনীতির কারবারিরা অনেকেই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন। গত তিন-চার দিনের ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেরই মনে
প্রশ্ন জেগেছে, মমতা-নারায়ণন শীতল সম্পর্ক উষ্ণ হল কী ভাবে? তৃণমূলের অন্দরের খবর, রাজ্যপাল-সরকার বিরোধ মেটাতে তৎপর হয়েছিলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থবাবু। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে হলদিয়ায় আসন্ন ‘বেঙ্গল লিড্স’ সম্মেলনে রাজ্যপালকে আমন্ত্রণ জানাতে গিয়েছিলেন তিনি। সেই সময়েই বরফ গলানোর কাজ কিছুটা সেরে এসেছিলেন। পার্থবাবু অবশ্য বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেননি।
রাজ্যপালের সঙ্গে এ দিন সহাস্য মুখ্যমন্ত্রীকে দেখে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে কংগ্রেস শিবিরেও। তবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, “কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংঘাত তো আছেই। তার উপর রাজ্যে সাংবিধানিক প্রধান রাজ্যপালের সঙ্গে বিরোধ জিইয়ে রাখলে গদি বাঁচানো মুশকিল হবে মনে করেই হয়তো সন্ধির পথে হেঁটেছেন মুখ্যমন্ত্রী।’’ তির্যক মন্তব্য করতে ছাড়েননি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সিও। তিনি বলেন, “আজ কি প্রায়শ্চিত্ত হল! গত দু’দিনের ভাষা-দংশনের পরে আজ কি বিবেক-দংশন!” কী হল, তা ভবিষ্যৎ বলবে! তবে রাজ্যপাল-সরকার বিরোধে আপাতত বিবেকের শান্তিবারি!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.