সংখ্যালঘু দফতরের করুণ চিত্র
উন্নয়ন শিকেয় তুলে
খয়রাতি চলছে দেদার
বাজেটে প্রতিশ্রুতি ছিল, রাজ্য সরকার এমন কিছু উন্নয়ন করবে, যার দীর্ঘমেয়াদি সুফল পাবেন সংখ্যালঘু মানুষ। কিন্তু সরকারি তথ্যই বলছে, জনমোহিনী নীতিকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে ঘোষিত লক্ষ্য থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর। যে দফতরের দায়িত্ব খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। বছরের শেষ ভাগে এসে অর্থ দফতর জানাচ্ছে, ওই দফতরের জন্য পরিকল্পনা খাতে যত টাকা বরাদ্দ হয়েছিল, তার ৫০ শতাংশেরও বেশি এখনও খরচই করা সম্ভব হয়নি। অথচ, হাততালি কুড়োনোর প্রকল্পে দান-খয়রাতি করতে গিয়ে পরিকল্পনা বর্হিভূত খাতে বেরিয়ে গিয়েছে বরাদ্দের অতিরিক্ত অর্থ! বাড়তি খরচের সেই সংখ্যাটা খুব কম নয়, ১০০ কোটি টাকা।
কেন এই উলট-পুরাণ? সংখ্যালঘু দফতরের একাধিক অফিসার বলছেন, স্থায়ী সম্পদ সৃষ্টির চেয়ে পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতিই প্রাধান্য পাচ্ছে সরকারি নীতিতে। তাই পরিকল্পনা খাতের টাকা খরচ করে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের লক্ষ্যে আশানুরূপ সাফল্য মেলেনি। সরকারি হিসেব বলছে, পরিকল্পনা খাতে বাজেটে বরাদ্দ ৫৭০ কোটি টাকার মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র ২৫৫ কোটি খরচ করতে পেরেছে সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর। অথচ, পরিকল্পনা বর্হিভূত খাতে সরকার যেখানে ৩৬৬ কোটি টাকা খরচ করার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছিল, সেখানে ইতিমধ্যেই ৪৬৬ কোটি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ, পরিকল্পনা খাতে ৪৪ শতাংশ খরচ হলেও পরিকল্পনা বর্হিভূত খাতে ১২৭ শতাংশ টাকা খরচ হয়েছে।
পরিকল্পনা বর্হিভূত খাতে ওই বাড়তি টাকা কোথা থেকে পেল সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর? রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, চলতি আর্থিক বছরে ওই দফতরের মোট বরাদ্দ ছিল ১২২১ কোটি টাকা। গত বারের তুলনায় অনেকটাই বেশি। এর মধ্যে ৫৭০ কোটি পরিকল্পনা খাতে, ৩৬৬ কোটি পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে এবং ২৮৫ কোটি টাকা সরাসরি কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অনুদান। রাজ্যের মাধ্যমে কেন্দ্র বেশ কিছু সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রকল্প চালায়। ওই ২৮৫ টাকা সেই বাবদ অনুদান। প্রকল্পভিত্তিক হওয়ায় এবং এই টাকার ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ দিতে হয় বলে এই খাত থেকে অর্থ নিয়ে পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে খরচ করা সম্ভব নয়।
তা হলে?
অর্থ দফতরের এক কর্তা বলেন, “পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতের জন্য বাড়তি টাকার দাবি জানিয়েছিল সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর। কিন্তু তাদের বলে দেওয়া হয়, যা বরাদ্দ হয়েছে, তার থেকে বাড়তি টাকা পাওয়া যাবে না।” তার ফলে হাত পড়েছে উন্নয়নের অর্থাৎ, পরিকল্পনা খাতে যে ৫৭০ কোটি বরাদ্দ হয়েছে, সেই টাকায়। ওই কর্তা জানান, “সেই বরাদ্দ ছেঁটেই চলছে নানা ধরনের হাততালি-প্রকল্প।” সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের এক কর্তা যেমন উদাহরণ দিলেন, “প্রায় ৪০ হাজার ইমাম এবং মোয়াজ্জিনকে ভাতা দিতে ১৭২ কোটি টাকা লাগবে। বাজেটে ওই টাকা ধরা ছিল না।” এই ধরনের খরচ জোগাতে গিয়ে অগ্রাধিকারের তালিকায় পিছিয়ে পড়ছে সংখ্যালঘু উন্নয়নে স্থায়ী প্রকল্প রূপায়ণের কাজ। আর প্রশ্ন উঠছে সরকারের সদিচ্ছা নিয়েও।
এমন প্রকল্পের তালিকা দীর্ঘ। যেমন, মাদ্রাসাগুলিতে বিজ্ঞান গবেষণাগার তৈরি করবে বলেছিল রাজ্য, হয়নি। বলা হয়েছিল, স্কুলপড়ুয়া মুসলিম মেয়েদের ইউনিফর্ম দেওয়া হবে, হয়নি। মাদ্রাসাগুলি কম্পিউটার পায়নি। জৈন সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি দেওয়াটাও প্রতিশ্রুতিই থেকে গিয়েছে। সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের ওই কর্তার কথায়, এর বাইরে পরিকল্পনা খাতে যেটুকু খরচ হয়েছে, তা মোটামুটি রুটিনমাফিক। যেমন, সংখ্যালঘু বিত্ত নিগমকে ঋণ দেওয়ার জন্য ২৫ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। শিশুশিক্ষা কেন্দ্র, মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র ও মাদ্রাসা শিক্ষা কেন্দ্রের ভাতা ও উন্নয়নের জন্য যথাক্রমে সাড়ে সাত কোটি, সওয়া ১১ কোটি এবং ২২ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। স্থায়ী কাজের মধ্যে ১৮টি জেলায় সংখ্যালঘু ভবন ও অফিস বাড়ি তৈরির জন্য সাড়ে ছ’কোটি টাকা, দ্বিতীয় হজ হাউস তৈরিতে ৩৭ লক্ষ টাকা এবং কবরস্থানগুলির পাঁচিল দিতে ২০ কোটি টাকা খরচ করেছে সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর।
সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী গিয়াসুদ্দিন মোল্লা বলেন, “আর্থিক বছর শেষ হতে এখনও তিন মাস বাকি। তত দিনে প্রতিশ্রুতি মতো প্রকল্পে আমরা সব খরচ করব। অর্থ দফতর সব টাকা দিয়ে দেবে।”
মন্ত্রী যা-ই বলুন না কেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্থায়ী উন্নয়নে সরকারের মন নেই বলেই বেশির ভাগ মানুষের মত। বিশিষ্টরা অনেকেই মনে করেন, এই কাজে সরকারের কোনও দিশাও নেই। অধ্যাপক ওসমান গনির বক্তব্য, “যা চলছে, তা নিতান্তই ছেলেমানুষি। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া কোনও কালেই উন্নতি সম্ভব নয়। তার বদলে খয়রাতি চলছে। বিধান রায়, প্রফুল্ল সেনদের দেখেছি। সিদ্ধাথর্শঙ্কর রায় মাটির ভাঁড়ে চা খেয়ে মাদ্রাসা বোর্ডের সূচনা করেছিলেন। আর এখন সব কিছুই অনুষ্ঠানসর্বস্ব।” প্রায় একই সুরে মীরাতুন নাহারও বলেন, “সংখ্যালঘু উন্নয়নের নামে যে ভাবে টাকা খরচ হচ্ছে, তাতে কাজের কাজ হচ্ছে না। এতে মুখ্যমন্ত্রী তাৎক্ষণিক বাহবা পেতে পারেন, কিন্তু সংখ্যালঘুরা আদতে পিছিয়েই পড়ছেন।” একই ধরনের কথা শোনা গিয়েছে এ দিন শহিদ মিনারে কয়েকটি মুসলিম সংগঠনের এক সভাতেও। সেখানে বলা হয়েছে, ক্ষমতায় আসার আগে মুসলিমদের উন্নয়ন নিয়ে তৃণমূল যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার বেশির ভাগই পূরণ হয়নি। এর পরেই পরিষ্কার হুঁশিয়ারির সুরে বলা হয়, এমন চললে ভোটেই জবাব দেওয়া হবে।
এইখানেই প্রশ্ন, হাততালি-কুড়োনোর প্রকল্পে ঢালাও খরচ করে তা হলে লাভ কী হল তৃণমূলের?

এখনও প্রতিশ্রুতিই
মাদ্রাসায় বিজ্ঞান গবেষণাগার ২.৫
মাদ্রাসায় কম্পিউটার শিক্ষা ১.৫
সংখ্যালঘু মেয়েদের স্কুল পোশাক
জৈন ছাত্রছাত্রীদের মেধাবৃত্তি ০.৫
উন্নয়নে যুক্ত সংগঠনকে সাহায্য ১২
* কোটি টাকায়



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.