মুখ্যমন্ত্রীর সবুজ সঙ্কেতের অপেক্ষায়
পেরিয়ে গিয়েছে আরও ছ’মাস, হাসপাতাল হয়নি আট স্বাস্থ্যকেন্দ্র
প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে দশ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করার অনুমোদন মিলেছিল বাম আমলেই। জেলা পরিষদ হাসপাতালের পরিকাঠামোও তৈরি করে দিয়েছে। নতুন ভবন তৈরির পরে পেরিয়েছে প্রায় এক বছর। গত জুলাইয়ে আগে মুখ্যমন্ত্রী যখন জেলায় এসেছিলেন, স্বাস্থ্য দফতর তাঁকে দিয়ে এমন কয়েকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উদ্বোধন করাতে চেয়েছিল। কিন্তু জেলা প্রশাসন রাজি হয়নি। এর পরে ছ’মাস পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও হাসপাতালে উন্নীত হয়নি আটটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। পর্যাপ্ত ডাক্তার, কর্মী না মেলায় সেগুলি রয়ে গিয়েছে সে তিমিরেই।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, বর্ধমানের ১২টির মধ্যে ৮টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে দশ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করার জন্য ভবন তৈরির কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি ভবন তৈরির জন্য গড়ে ৬০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে পরিকাঠামোগত কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে বলে রিপোর্টও দিয়েছে জেলা পরিষদ। পরে মঙ্গলকোটের লাখুরিয়ার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবনে ফাটল দেখা দেয়। পরে ‘বেসু’র বিজ্ঞানীরা এসে মাটি পরীক্ষাও করে গিয়েছেন।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে ওই ৮টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে দশ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন বাম সরকার। লাখুড়িয়া ছাড়াও এই তালিকায় রয়েছে অগ্রদ্বীপ, শিবলুন, নাদনঘাট, পান্ডুগ্রাম, গুসকরা, জামতাড়া, বনপাশের মতো প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি। স্বাস্থ্য দফতরের উদ্দেশ্য ছিল, মহকুমা ও জেলা হাসপাতালগুলোর উপর চাপ কামনো এবং প্রসূতিদের উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া।
পড়ে রয়েছে নতুন ভবন। বাঁ দিকে, কেতুগ্রামের শিবলুন ও ডান দিকে, কাটোয়ার পাণ্ডুগ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।
গত বছর ২৮ জুলাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলায় প্রশাসনিক বৈঠকে আসেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের ইচ্ছা ছিল, মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়েই কেতুগ্রামের শিবলুন, পূর্বস্থলীর নাদনঘাট, কাটোয়ার অগ্রদ্বীপ ও পাণ্ডবেশ্বরের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে দশ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করার কথা ঘোষণা করানোর। কিন্তু জেলা প্রশাসন রাজি না হাওয়ায় শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। আজ, বৃহস্পতিবার আবার জেলায় আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। ডেপুটি সিএমওএইচ (১) অসীম দাস মালাকার বলেন, “এ বারও আমরা তিনটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নাম জেলাশাসকের দফতরে পাঠিয়েছে। তবে বিশেষ কারণে সেগুলির নাম বলতে পারব না।”
স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, ওই ৮টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শয্যা, শীতবস্ত্র, পথ্য-সহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র প্রায় ছ’মাস আগে পাঠানো হয়েছে। তবে বুধবার নানা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, শয্যা পড়ে রয়েছে ভবনের বাইরে। আগাছায় ভরে গিয়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বর। সেখানে খড়ের পালুইও রাখছেন গ্রামবাসীরা। শিবলুনের চঞ্চল পান, লাখুড়িয়ার অরূপ গোস্বামীদের ক্ষোভ, “বছর পেরোলেও হাসপাতালের জন্য তৈরি ভবন ব্যবহার হচ্ছে না। এর পরে ভবনের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করবে। তখন রোগীরাও আর ভর্তি হতে চাইবেন না। আবাসনে চিকিৎসকেরাও থাকতে চাইবেন না।” জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তাও বলেন, “শয্যা, বিছানাগুলি বাইরে পড়ে থেকে এ বার নষ্ট হয়ে যাবে। ওষুধপত্রও ফেরত পাঠিয়ে দিতে হবে।”
জেলা স্বাস্থ্য দফতর চাইলেও প্রশাসন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে উন্নীত করার ব্যাপারে প্রশাসন উদ্যোগী হচ্ছে না কেন? জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, গত ২৮ জুলাই শিবলুন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দু’জন চিকিৎসক যোগ দেন। নার্সও ছিল। তা সত্ত্বেও গত পাঁচ মাসে সেখানে রোগী ভর্তির ব্যবস্থা করেনি স্বাস্থ্য দফতর। কয়েক দিন আগে ওই দুই চিকিৎসক বদলি হয়ে গিয়েছেন। অগ্রদ্বীপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক জন চিকিৎসক রয়েছেন। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নাদনঘাটে নার্স-চিকিৎসকের অসুবিধা নেই। কিন্তু ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রয়েছে। তাই নাদনঘাটের চিকিৎসক-নার্সদের দিয়েই ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালানো হচ্ছে। পাণ্ডবেশ্বরে এক বছর কোনও চিকিৎসক ছিলেন না। দু’মাস আগে এক জন যোগ দেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, তিনিও অনিয়মিত। অন্ডালের বিএমওএইচ ধীমান মণ্ডল জানান, সাত দিন আগে আরও এক জন চিকিৎসকের অনুমোদন মিলেছে। কিছু দিনের মধ্যেই যোগ দেবেন তিনি। চার জন নার্স থাকলেও সুইপার, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী এবং ফার্মাসিস্ট নেই বলে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, দশ শয্যার হাসপাতাল চালু করতে ন্যূনতম দু’জন চিকিৎসক, চার জন নার্স, দু’জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ও সুইপার প্রয়োজন। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের দাবি, সব পরিকাঠামো রেখেই তারা তিনটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র উন্নীত করতে প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। হয়তো এ বারও স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি মানছে না জেলা প্রশাসন। তাদের বক্তব্য, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উন্নীত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীও ভর্তি করতে হবে। নাহলে সরকারের মুখ পুড়বে। দুই দফতরের টানাপোড়েন চলছেই। স্বাস্থ্যকেন্দ্র কবে চালু হবে, উত্তর নেই কারও কাছেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.