জ্বর-বমি, সর্দি-কাশির জেরে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যেন আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন গৌর ঘোষ। কোচবিহারের পুরুষ বিভাগের ২২ নম্বর শয্যায় তিনি চিকিৎসাধীন। শহরের নতুনবাজার এলাকার বাসিন্দা গৌরবাবুর বিছানার পাশের জানালার কাঁচ ভাঙা। হু হু করে ঢোকে কনকনে বাতাস। কম্বল দিয়ে মাথা ঢেকেও কাঁপতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। একই রকম দুরবস্থা চিকিৎসাধীন অনিল বর্মন, পরিতোষ কুন্ডুদের। পাশের ঘরের রোগীদেরও। ঠান্ডা হাওয়ার দাপট সামলাতে বাধ্য হয়ে রোগীর আত্মীয়দের ভাঙা জানালার অংশে কখনও কাগজ সেঁটে দেওয়া হচ্ছে। কখনও আবার কাপড় টাঙিয়ে দেওয়া হচ্ছে। হাওয়া একটু বেশি হলেই সে সব খুলে পড়ছে। তার ওপর সকলে কম্বল পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ। অন্য সব বিভাগেও একই ছবি। সব মিলিয়ে শীতে কষ্টে নাকাল হচ্ছেন রোগীরা।
গ্রামীণ হাসপাতাল নয়, কোচবিহার জেলা সদর এমজেএন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের এমন দুর্দশা ঘিরে তাঁদের পরিজনদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। কর্তৃপক্ষ সমস্যা মেটাতে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ। হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি চেয়ারম্যান রাজ্যের বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন বলেন, “বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বাসিন্দারা জানান, ওই হাসপাতালে ৪০০ শয্যা রয়েছে। গরমের মরসুমে ফি বছর গড়ে রোগী বেশি থাকায় গাদাগাদি করে রাখা হয়। শীতের মরসুমে গড়ে ৩০০ জন রোগী রয়েছেন। ভাঙা জানালা, বেহাল দরজা, অপর্যাপ্ত কম্বলের সমস্যায় তাঁদের নাকাল হতে হচ্ছে। |
শীতের মরসুমে একই সমস্যায় রোগীরা নাকাল হলেও আগাম ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গৌরবাবুর মা লক্ষ্মী দেবী বলেন, “ভাঙা জানলার সামনে বিছানা। ঠান্ডায় দিনে রাতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ওর।”
বক্সিরহাটের বাসিন্দা পরিতোষ কুণ্ডুর ছেলে বিশ্বজিৎ বলেন, “বাবার জন্য কম্বল চাইলেও তা হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে কম্বল কেনা হল।” কোচবিহার নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চের সভাপতি রাজু রায় বলেন, “শৈত্যপ্রবাহ চলছে। সেইসময় হাসপাতালের ওই অবস্থা মেনে যায় না। গত বছরেও একই অবস্থা দেখেছি। আগাম সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে না বলে রোগীরা এমন ভোগান্তিতে পড়ছেন।’’
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করেছে, গত বছর শীতের মরসুমে ওই হাসপাতালে বেশ কিছু ভাঙা কাঁচের জানালা মেরামত করা হয়েছে। সংস্কার করা হয় কিছু দরজারও। সব মিলিয়ে ওই খাতে এক লক্ষাধিক টাকা খরচ করা হয়েছে। এবার শীত পড়তেই হাসপাতালের আরও কয়েকটি ঘরে ভাঙা জানালা, দরজার জেরে সমস্যার বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। জরুরি ভিত্তিতে সেসব মেরামতের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। হাসপাতালের এক আধিকারিক জানান, জরুরি ভিত্তিতে সমস্ত ভাঙা জানালায় পুরানো এক্স রে প্লেট, কাপড় লাগিয়ে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা হচ্ছে। কোচবিহার এমজেএন হাসপাতালের সুপার জয়দেব বর্মনের আশ্বাস, “কম্বলের ঘাটতি জানতে তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। স্থানীয়ভাবে ভাঙা দরজা-জানালা মেরামত করার ব্যাপারেও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” ততদিনে শীত ফুরিয়ে যাবে না তো? |