প্রবল ঠান্ডায় কাজের দিনেও ছুটির মেজাজ
টুপুর আজ স্কুলে যায়নি। যাবে কী করে, তার মা-ই উঠতে পারেননি ঘুম থেকে।
আরামবাগের বাসিন্দা টুপুরের মা জয়ন্তী সিংহ বললেন, “সকালে এক বার ঘুম ভেঙেছিল। চোখ পিটপিট করে জানলার কাচ দিয়ে দেখলাম বাইরে ঘন কুয়াশা। ভয়ানক ঠান্ডা। মনে পড়ল নিজের স্কুল জীবনের কথা। কত কষ্ট করে এই পরিস্থিতিতে ঘুম থেকে উঠে স্কুলে যেতে হত। বাবা-মায়ের উপরে রাগ হত বেজায়। সে সব মনে করে ভাবলাম, মেয়েটাকে আজ একটা ছুটি করে দিই। খুশি হয়ে যাবে।”
চুঁচুড়ার কৃষি গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার ভোর ৪টেয় ঠান্ডা ছিল ৪.৬ ডিগ্রি। হাওড়াও প্রায় কাছাকাছি। দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনায় ঠান্ডা তুলনায় দু’চার ডিগ্রি বেশি হতে পারে, কিন্তু সব মিলিয়ে কাহিল হয়ে পড়েছেন চার জেলার মানুষ।

ঘন কুয়াশায় ঢাকা সকাল। বুধবার বসিরহাটে। ছবি: নির্মল বসু।
কথা হচ্ছিল হাওড়ার শ্যামপুরের বাসিন্দা বাবু পালের সঙ্গে। এমনিতে সকাল ৮টার মধ্যে নিজের দোকান খোলেন। এ দিন দোকানে আসতে আসতে প্রায় ৯টা বেজেছে তাঁর। বললেন, “এমন প্রবল ঠান্ডা বহু কাল পড়েনি। ভাবলাম একটা ঘণ্টা বিছানায় গড়াগড়ি খেলে কী আর এমন ক্ষতি!”
যাঁদের ভোরে উঠে কাজে না গিয়ে উপায় নেই, তাঁদের অবস্থা এ দিন সত্যিই ছিল সঙ্গীন। গরম গেঞ্জি, সোয়াটার, তার উপরে জ্যাকেট চাপিয়ে চেহারা ফুলে দ্বিগুণ। তার উপরে কানঢাকা-গলাঢাকার সাজ-সরঞ্জাম তো আছেই। বনগাঁর মন্টু দাসকে সকাল ১০টার মধ্যে মধ্যে কলকাতার অফিসে পৌঁছতেই হয়। এক গাল হেসে বললেন, “এ দিন ভোরে ঘন কুয়াশায় স্টেশনে এক জন কাঁপতে কাঁপতে আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন সুপ্রভাত। আমিও জবাব দিলাম। কিন্তু চিনতে পারলাম না ভদ্রলোককে। কী করে চিনব, চোখ আর নাক ছাড়া গোটা শরীর তো গরম পোশাকে ঢাকা!”
বসিরহাট মহকুমা প্রশাসনের দাবি, এ দিন ভোরে তাপমাত্রা ছিল ৪.৫ ডিগ্রি। ব্লক অফিস থেকে কয়েক জন ফুটপাথবাসীর হাতে শীতবস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি পঞ্চায়েত প্রধানের হাতেও কম্বল-চাদর বিলি করার জন্য দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরও কম্বল দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে মহকুমা প্রশাসন।

বনগাঁয় যশোহর রোডের ধারে শীতে জবুথবু বৃদ্ধা। ছবি: পার্থসারথি নন্দী।
এ দিন ডায়মন্ড মহকুমা আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়, দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আয়লার পরে দুই ২৪ পরগনায় এখনও অনেকের ঘরদোর ঠিক মতো তৈরি হয়নি। সে সব মানুষের দুর্ভোগের একশেষ। দিনভর হাড় কাঁপানো ঠান্ডার সঙ্গে প্রবল বাতাসে কষ্ট আরও বেড়েছে। হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালির বেশির ভাগ স্কুলে পড়ুয়ারা পৌঁছতে পারেনি। ছুটি দিয়ে দেওয়া হয় সে সব জায়গায়। সন্ধের আগেই বসিরহাট শহরেও দোকান-বাজার সব ফাঁকা।
সন্ধের দিকে ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতেও বনগাঁর বাটার মোড়ের কাছে আড্ডা দিচ্ছিলেন জনা কয়েক যুবক। কেমন বুঝছেন অবস্থা। জিজ্ঞেস করতেই ফিচেল মন্তব্য উড়ে এল, “আজ দু’পাত্তর পেটে না পড়লেই নয়।”
দিনে রাতে সমান ভোগান্তি ঠান্ডায়। আরামবাগ ও
ডান দিকে উলুবেড়িয়ায় ছবি দু’টি তুলেছেন মোহন দাস ও সুব্রত জানা।
বনগাঁরই এক ওষুধের দোকানের মালিক অপূর্ব দাস বললেন, “এক বন্ধু যন্ত্রে মেপে তাপমাত্রা বলে গেলেন ৬ ডিগ্রি। গত কয়েক বছরে এমন পরিস্থিতি দেখিনি।” বনগাঁর মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুদীপ রায়চৌধুরীর কথায়, “অনেকে বলছেন, স্কুল ছুটি দিয়ে দিলে ভাল হয়। প্রবল গরমে ছুটি থাকলে এমন শীতেই বা স্কুল ছুটি থাকবে না কেন, সে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।”
স্নান কী গরম জলেই সারলেন? প্রশ্ন শুনেই হেসে ফেলল শ্রীরামপুরের সদ্য তরুণটি। উত্তর মিলল, “কি যে বলেন, এমন দিনে স্নান? মাথা খারাপ?”
প্রবল ঠান্ডায় সত্যিই দিশেহারা অবস্থা দক্ষিণবঙ্গের।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.