গত দু’দশকে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলায় শীতের পারদ এতটা নামেনি। মঙ্গলবার পুরুলিয়ার সর্বনিম্ম তাপমাত্রা ছিল ৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর বাঁকুড়ার ৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
পুরুলিয়া জেলা আবহাওয়া কেন্দ্র জানাচ্ছে, নিকট অতীতে পুরুলিয়ার তাপমাত্রা এত নীচে নামেনি। এতদিন এই জেলার আবহাওয়া সংক্রান্ত বিষয় খোঁজখবর রাখত জেলা কৃষি দফতর। সেই দফতর তথ্য ঘেঁটে জানাচ্ছে, এর আগে শেষবার জেলার তাপমাত্রা নেমেছিল ৪.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, ১৯৯২ সালের ১৬ ডিসেম্বর। বিগত ২১ বছরে এই জেলায় এত ঠান্ডা পড়েনি। এই মরসুমে গত ২৭ ডিসেম্বর দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছিল ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। কিছু দিন তাপমাত্রা বাড়লেও মঙ্গলবারই তা ফের ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে।
|
|
|
উষ্ণতার জন্য। বিষ্ণুপুর ও পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ডে বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |
|
শেষ কবে বাঁকুড়ায় এত ঠাণ্ডা পড়েছিল মনে করতে পারছেন না প্রবীণরা। সে তথ্য নেই জেলা আবহাওয়া দফতরের কাছেও। দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “১৯৯৩ সাল থেকে বাঁকুড়ায় আবহাওয়া দফতর কাজ করছে।
এই ২০ বছরে এখানে পারদ এতটা নামেনি।” সেই তথ্য অনুসারে এ দিন জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দু’দশকের রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে।
বেলা দশটা পযর্ন্ত শহরের রাস্তায় লোকজনের বড় একটা দেখা মেলেনি। পুরুলিয়া জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রতিভারঞ্জন সেনগুপ্ত বলেন, “সকালের দিকে সমস্ত বাসেই প্রায় যাত্রী থাকছে না। কিন্তু মকর পরব উপলক্ষে এই সময় প্রচুর মানুষ পুরুলিয়া শহরে বাজার করতে আসেন। অথচ, এই শীতের জন্য মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।’’ একই ছবি বাঁকুড়াতেও। অন্য সময় এই শহরের প্রাণকেন্দ্র মাচানতলায় দোকানপাটে ভিড় জমে ওঠে সকাল আটটার মধ্যেই। বুধবার সেখানে বেলা ১০টায় দেখা গেল বেশ কিছু দোকান বন্ধ। সব্জি বাজারেও ভিড় জমে বেশ দেরিতে।
মাচানতলার মোড়ের এক সব্জি বিক্রেতা অশোক দাস বলেন, “যেখানে বেলা ১০টার মধ্যেই অর্ধেক মাল বিক্রি হয়ে যায়, সেখানে আজ ভিড় জমতেই বেলা কাবার।” এই শীতে তাই আগুনের পরশ পেতে গ্রামাঞ্চলের মতো শহরাঞ্চলেও বাসিন্দাদের আগুন পোহাতে দেখা যাচ্ছে। পুরুলিয়া, আদ্রা, রঘুনাথপুর, বাঁকুড়া, খাতড়া, বিষ্ণুপুর, বড়জোড়াসর্বত্র খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহানো হচ্ছে। অন্তত তাতে যদি শীত কিছুটা কমে!
এই হাড় হিম করা শীতে সমস্যায় পড়েছে খুদে পড়ুয়ারা। কাঁপতে কাঁপতে সাত সকালে তাদের স্কুলে যেতে হচ্ছে। তাদের জন্য অবশ্য সুখবর দিতে পারেনি জেলা শিক্ষা দফতর। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক রাধারানি মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রচণ্ড শীতের জন্য স্কুল ছুটি দেওয়ার নির্দেশিকা পাইনি।” তবে পিকনিক বন্ধ নেই। সপ্তাহের মাঝেও এ দিন অযোধ্যাপাহাড়, জয়চণ্ডীপাহাড়, মুরগুমা, মুকুটমণিপুর, বিষ্ণুপুর, শুশুনিয়া প্রভৃতি জায়গায় প্রচুর মানুষ পিকনিক করতে এসেছিলেন। |