পলিথিন, এঁটো পাতা, ছেঁড়া কাগজ, মদের বোতল। বছরের বেশির ভাগ সময়েই খেলার মাঠ ভরে থাকে এই সব নোংরা আবর্জনায়। কারণ, খাতড়া শহরের এটিএম ময়দানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ থেকে যাত্রাপালা, বিচিত্রানুষ্ঠান কী হয় না। এই সব অনুষ্ঠান হওয়ার পরেই মাঠ জুড়ে পড়ে থাকে আবর্জনা। দিনের পর দিন এমনটা চলতে থাকায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। তাই অবিলম্বে প্রশাসনের কাছে ওই মাঠ শুধুমাত্র খেলার জন্য ব্যবহারের দাবি জানিয়েছেন বাসিন্দারা।
খাতড়া শহরের দাসের মোড় থেকে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ যাওয়ার রাস্তার ধারে এটিম ময়দান। এটি খাতড়া হাইস্কুলের মাঠ। এই মাঠেই কংসাবতী রোড, বিদ্যাসাগরপল্লি, জলডোবরা, হাসপাতাল কলোনি-সহ আশেপাশের ছোট বড় বহু ছেলেমেয়ে দৌড়, ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন-সহ নানা খেলা করে। অথচ প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দল বড় বড় সভা-সমাবেশ করে এই ময়দানে। এছাড়াও এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আয়োজিত যাত্রাপালা থেকে বিচিত্রানুষ্ঠান হয় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এলাকার মানুষের ক্ষোভ, নানা সভা-সমাবেশ থেকে অনুষ্ঠান হওয়ার ফলে মাঠটি নোংরা হচ্ছে। দর্শকদের ফেলে যাওয়া বর্জ্যে পরিবেশ তো নষ্ট হচ্ছেই, খেলার পরিবেশও থাকছে না। অথচ হুঁশ নেই প্রশাসনের। |
এটিম ময়দানে গিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভের সত্যতা মিলেছে। দেখা যায়, মাঠের এক দিকে প্লাস্টিকের বোতল, এঁটো পাতা, মদের বোতল, পলিথিনের স্তূপ পড়ে রয়েছে। মাঠময় ছড়িয়ে রয়েছে আরও নানা আবর্জনা। তারই মধ্যে কয়েক জন কম বয়েসের ছেলে খেলা করছে। মাঠে দাঁড়িয়ে ছিলেন, বিদ্যাসাগরপল্লির বাসিন্দা সঞ্জীব চৌধুরী, তন্ময় গুপ্ত, চন্দন দাঁ-রা। তাঁরা বললেন, “গত বৃহস্পতিবার এই মাঠেই একটা বিচিত্রানুষ্ঠান হয়েছে। তার পর থেকে মাঠের এই অবস্থা। এই মাঠ এখন খেলার অযোগ্য হয়ে পড়েছে।” তাঁদের অভিযোগ, “গোটা মাঠে অসংখ্য গর্ত। পলিথিন থেকে মদের ভাঙা বোতলের টুকরো পড়ে রয়েছে। খেলার পরিবেশটাই দিনের পর দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, অথচ মাঠের পরিবেশ বজায় রাখতে খাতড়া হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে স্থানীয় প্রশাসন- সকলেই উদাসীন।”
বাসিন্দাদের অভিযোগকে সমর্থন করেছেন স্থানীয় খাতড়া ১ পঞ্চায়েতের সদস্য, তৃণমূলের শুভাশিস দত্ত। তাঁর দাবি, “নানা অনুষ্ঠানের পরে দর্শকদের ফেলে যাওয়া বর্জ্যে এলাকায় দূষণ ছড়াচ্ছে। ওই মাঠে পড়ে থাকা নোংরা পলিথিন, কাগজ হাওয়ায় উড়ে আশেপাশের বহু বাড়িতে ঢুকে যাচ্ছে। বারবার প্রতিবাদ জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি। খেলার মাঠ নোংরা না করার জন্য সকলকে বলা হয়েছে, কিন্তু কারও কোনও হুঁশ নেই।” অন্য দিকে, সিপিএমের খাতড়া জোনাল কমিটির সম্পাদক সুশীল মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “আমরাও চাই খেলার পরিবেশ বজায় থাকুক। এ ভাবে মাঠ নোংরা করার বিরোধী। তবে জায়গার অভাবে সভা-সমাবেশ করা হলেও পরে নোংরা পরিষ্কার করে দেওয়া হয়।”
খাতড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক চিত্তরঞ্জন হাজরার আক্ষেপ, “খেলার মাঠ পূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ক্লাব, প্রতিষ্ঠান অনুষ্ঠানের অনুমতি নেয়। আমরাও অনুমতি দিই। কিন্তু সভা বা অনুষ্ঠানের শেষে আয়োজকরা খেলার মাঠ পরিষ্কার করতে সে ভাবে তড়িঘড়ি ব্যবস্থা না নেওয়ার ফলেই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই।” গত বৃহস্পতিবার ওই মাঠে যারা বিচিত্রানুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল সেই ক্লাবের অন্যতম কর্মকর্তা শুকদেব কর অবশ্য দাবি করেন, “প্যান্ডেল খোলার কাজ পরের দিন সকাল পর্যন্ত হয়েছে। তাই মাঠ পরিষ্কার করা যায়নি। আমরা মাঠটি থেকে নোংরা সরিয়ে ফেলে খেলার উপযুক্ত করে দেওয়ার কাজ শুরু করেছি।” খাতড়ার যুগ্ম বিডিও দীপক মাইতি বলেন, “ওই মাঠের দেখাশোনার দায়িত্ব স্কুল কর্তৃপক্ষের। তবে মাঠের পরিবেশ নিয়ে কোনও অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |