১০০ দিনের কাজ
রাস্তা তৈরিতে দুর্নীতি হয়েছে, বলছে প্রশাসন
০০ দিনের কাজ প্রকল্পে সিপিএম পরিচালিত বনগাঁর ছয়ঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কয়েকটি রাস্তা তৈরি নিয়ে দুর্নীতি প্রকাশ্যে এল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন দাবি করা হলেও ওই পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে দুর্নীতির কথা অস্বীকার করা হয়েছে।
সম্প্রতি ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা এ নিয়ে সরেজমিন তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেন বিডিওকে। বিডিও সুশান্ত বসু সেই তদন্ত রিপোর্ট মহকুমাশাসক ও জেলাশাসককে পাঠিয়েছেন। তাঁদের নির্দেশ মতো পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে বলে ব্লক প্রশাসন জানিয়েছে। বনগাঁর মহকুমাশাসক অভিজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, “প্রশাসনিক তদন্তে ওই পঞ্চায়েতের ১০০ দিনের কাজে রাস্তা তৈরি নিয়ে কিছু কিছু দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বুধবার জেলায় ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের আধিকারিকেরা ছয়ঘরিয়ায় এসে সরেজমিন তদন্ত করেন। তাঁরা জেলাশাসকের কাছে রিপোর্ট জমা দেবেন বলে জানিয়েছেন।
দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ওই পঞ্চায়েতের প্রধান পরিতোষ অধিকারী। তিনি বলেন, “তদন্ত-রিপোর্ট আমাদের এখনও দেওয়া হয়নি। নিয়ম বহির্ভূত ভাবে কোনও কাজ করা হয়নি।”
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে দুর্নীতি নিয়ে গত বছর অগস্ট মাসে বিডিওর কাছে ওই পঞ্চায়েত এলাকার কয়েক জন দুর্নীতির অভিযোগ জমা দেন। তাঁদের মধ্যে ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা ললিতা বিশ্বাস-সহ ১৮ জন জানান, ওই পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা বিশ্বনাথ হালদারের বাড়ি থেকে ললিতাদেবীর বাড়ি পর্যন্ত ইটের রাস্তা তৈরি হয়েছে বলে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে দেখানো হলেও কার্যত কোনও রাস্তাই হয়নি সেখানে। তদন্তে নেমে প্রশাসনের আধিকারিকেরা দেখেন, অভিযোগ সত্য। ওই রাস্তার পরিবর্তে সুভাষ দাসের জমি থেকে কেনারাম হালদারের জমি পর্যন্ত রাস্তা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে ৫৩৬৯টি ইট। অথচ, পঞ্চায়েতের নথিতে দেখানো হয়েছে ওই রাস্তার জন্য ৮১৩৭টি ইট ব্যবহার করা হয়েছে। এবং তার দামও মেটানো হয়েছে। মোট কাজ হয়েছে ৬৬ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের নথি পরীক্ষা করে তদন্তকারীরা দেখতে পান, ওই রাস্তাটির সংস্কারের বিষয়টি ২০১১-১২ অর্থবর্ষে পঞ্চায়েতের বার্ষিক কর্ম পরিকল্পনার প্রস্তাবে নেই। ফলে, প্রকল্পটি অনুমোদনও পায়নি।
প্রথম দফার এই তদন্তের পরে ব্লক প্রশাসনে গোপাল বিশ্বাস-সহ আরও ২৩ জন গ্রামবাসী আরও দু’টি রাস্তা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ জানান। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভবানীপুরের পরেশ হালদারের বাড়ি থেকে ইছামতী নদী পর্যন্ত যে রাস্তাটি ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে তৈরি হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে, তা বাস্তবে নেই। এবং দিলীপ বিশ্বাসের বাড়ি থেকে শ্যাম বিশ্বাসের বাড়ি পর্যন্ত যে ইটের রাস্তা দেখানো হয়েছে, তার চার ভাগের তিন ভাগ অংশে কোনও ইট বসানো হয়নি।
রিপোর্টে তদন্তকারীরা জানান, পরেশ হালদার নামে কোনও ব্যক্তি নেই। পরিবর্তে নব হালদারের জমি থেকে বাদল হালদারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের ‘ডিস-প্লে বোর্ড’-এ লেখা রয়েছে নরেন হালদারের বাড়ি থেকে ইছামতী নদী পর্যন্ত রাস্তার কথা। যে রাস্তাটি রয়েছে, তাতে ব্যবহার হয়েছে ৭৫৯৭টি ইট। কিন্তু পঞ্চায়েতের নথি অনুযায়ী, রাস্তাটির জন্য ১২ হাজার ৯৯৬টি ইটের দাম দেওয়া হয়েছে। মোট কাজ হয়েছে। ৫৮.৪৫ শতাংশ। অসঙ্গতি রয়েছে দিলীপ বিশ্বাসের বাড়ি থেকে শ্যাম বিশ্বাসের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার কাজেও। সেই শেষ হয়নি। রাস্তাটিতে ৩২৭৮টি ইট ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু দাম দেওয়া হয়েছে ৬৫৩০টি ইটের। ‘ডিস-প্লে বোর্ড’-এ শুধু প্রকল্পের নাম ও কোড নম্বর দেওয়া রয়েছে। বাকি তথ্য নেই।
ব্লক প্রশাসনের এই তদন্ত বা দুর্নীতিকে আমল দিতে রাজি নন বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা সিপিএমের গোবিন্দ মণ্ডল। দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “বিডিও প্রধানকে শোকজ করেছিলেন। নথি-সহ তার উত্তর দেওয়া হয়েছে। ওই উত্তরে বিডিও যে সন্তুষ্ট নন, এমন কিছু জানাননি।” তাঁর দাবি, “তৃণমূল রাজনৈতিক কারণে প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।” তৃণমূলের ছয়ঘরিয়া এলাকার সহ-সভাপতি চন্দন ঘোষ বলেন, “প্রশাসন নিরপেক্ষ তদন্ত করেছে। অভিযোগ করেছিলেন সাধারণ মানুষ। তৃণমূল তদন্তের ব্যাপারে কোনও হস্তক্ষেপ করেনি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.