|
|
|
|
দাবি দলের একাংশের |
অস্তিত্বের সঙ্কট থেকেই অতি সক্রিয় আরাবুল |
শুভাশিস ঘটক • কলকাতা |
প্রাথমিক লড়াইটা ছিল ‘অস্তিত্ব রক্ষা’র। কিন্তু ভাঙড়ে রেজ্জাক-পর্ব এবং বামনঘাটা কাণ্ডের পরে দলও পাশে দাঁড়ানোয় পায়ের তলায় নতুন করে মাটি পেলেন আরাবুল ইসলাম। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে যে আরাবুলের ডানা ছাঁটতে উদ্যোগী হয়েছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব, ভাঙড়ের সাম্প্রতিক ঘটনার পরে সেই প্রক্রিয়া ধামাচাপা পড়ল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।
জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন আরাবুল। তাই নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখতে তিনি মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। ‘অতি সক্রিয়’ ভাবে এমন কোনও বিষয়কে হাতিয়ার করার চেষ্টা করছিলেন, যাতে তিনি ফের দলের নজরে আসেন এবং দলে তাঁর বিরোধী হিসেবে পরিচিতদের চাপে রাখতে পারেন। রেজ্জাক-কাণ্ডে দলের কাছে তিনি যে নিজের গুরুত্ব বাড়িয়ে নিতে পারলেন, তা নেতাদের কথাতেই স্পষ্ট। মঙ্গলবারই মহাকরণে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আরাবুল উদ্যমী ছেলে।
খুব কাজের।” |
|
তৃণমূলের পদযাত্রা। বামনঘাটায়। |
কেন আরাবুলের ডানা ছাঁটতে উদ্যোগী হয়েছিল দল? ২০০৬-এ বিধায়ক থাকাকালীন একটি জমি দখলকে কেন্দ্র করে গোলমালের জেরে পথসভার সময়ে শালখুঁটি দিয়ে কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার ওসি প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়কে মারধরের অভিযোগ ওঠে আরাবুলের বিরুদ্ধে। বছর চারেক পরে বেদিক-ভিলেজ কাণ্ডেও তাঁর নাম জড়ায়। গত বছর ভাঙড় কলেজের এক শিক্ষিকাকে জগ ছুড়ে মারার ঘটনাতেও অভিযুক্ত হন আরাবুল। যে সিন্ডিকেট-রাজের বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তি রয়েছে, জমি ভরাটের জন্য সেই সিন্ডিকেট করে মাটি কাটাতেও আরাবুলের দিকে আঙুল ওঠে। এ সবের জন্য কয়েক মাস আগে মমতার উপস্থিতিতে দলীয় বৈঠকে তিরস্কৃত হন আরাবুল। তার পরেও একাধিক বার সতর্ক করা হয় তাঁকে। বেশ কিছু দিন তিনি চুপচাপ ছিলেন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার ভাঙড় এলাকার দলীয় নেতৃত্বে বেশ কিছু অদল-বদলের চেষ্টা করছিলেন দলনেত্রী মমতা। আরাবুলের মতো নেতাদের সরিয়ে তুলে আনার চেষ্টা হচ্ছিল স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদের। সম্প্রতি মমতা জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকের পরে ভাঙড়ে দলের স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতা কাইজার আহমেদের গুরুত্ব বাড়ানো হচ্ছিল। দলে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল আর এক বহিষ্কৃত নেতা নান্নূ হোসেনকেও। দলবিরোধী কাজের অভিযোগ তুলে এবং নিজের প্রভাব খাটিয়ে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নান্নু হোসেনকে দল থেকে বহিষ্কার করার পিছনে আরাবুলের মদত ছিল বলে অভিযোগ। নান্নু এবং কাইজার দু’জনেই আরাবুলের বিরোধী গোষ্ঠীর লোক হিসেবে পরিচিত। প্রবল তৃণমূল-হাওয়ার মধ্যেও নান্নু গোঁজ প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোয় ২০১১-র বিধানসভা ভোটে হেরে যান আরাবুল। ফলে, নান্নু-আরাবুল বিরোধ আরও তীব্র হয়। |
|
শহরের পথে বামেরা। রয়েছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও। বুধবার। |
ভাঙড়-১ ব্লকের ন’টি পঞ্চায়েতের মধ্যে সিপিএম ছ’টি এবং তৃণমূল তিনটিতে ক্ষমতায় রয়েছে। ভাঙড়-২ ব্লকের ১০টি পঞ্চায়েতের মধ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় রয়েছে ন’টিতে। একটিতে সিপিএম। এই অবস্থায় পঞ্চায়েত ভোটে শাসক দল হিসেবে তৃণমূল আগের বারের চেয়েও যে ভাল ফল করতে চাইবে, তা প্রত্যাশিত। আর সেই কারণেই আরাবুলের ডানা ছাঁটার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল বলে অভিমত জেলা তৃণমূল নেতাদের একাংশের। দল সূত্রের খবর, ১ জানুয়ারি দলের ‘প্রতিষ্ঠা দিবসে’ উদ্দাম জলসার জন্য ভাঙড়-২ ব্লকের আরাবুল ঘনিষ্ঠ নেতা মির তাহেরকে বহিষ্কার করেও আরাবুলকে বার্তা দিতে চেয়েছেন দলনেত্রী। আরাবুলের অনুগামী ভাঙড়-১ ব্লক সভাপতি জাহাঙ্গির খান চৌধুরীকেও পদ থেকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। দলের অন্দরের খবর, ঘনিষ্ঠ মহলে এ সবের জন্য ‘কিছুটা কোণঠাসা’ হয়ে পড়েছেন বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন আরাবুল।
ভাঙড়-কাণ্ডের পরে এ বার কি আর আরাবুলের ডানা ছাঁটা হবে?
জেলা তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ ব্যাপারে আপাতত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। নাম প্রকাশ করতে না চাইলেও ঠারেঠোরে জেলা তৃণমূল নেতাদের কয়েক জন অবশ্য মেনে নিয়েছেন, রেজ্জাক-কাণ্ডে দলের মুখ পুড়লেও ভাঙড় এলাকায় একের পরে এক মিটিং-মিছিল করে ওই সিপিএম নেতা যে ভাবে কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা করছিলেন, তা ঠেকিয়ে দলের কাছে নিজের ‘দর’ই বাড়ালেন আরাবুল।
তবে তৃণমূলের কোনও কোনও শীর্ষ নেতা আবার আরাবুলের সাম্প্রতিক ভূমিকায় অশনিসঙ্কেতও দেখছেন। রাজ্য স্তরের এক নেতা বুধবার বলেন, “ওঁর জন্য আগেও দলের মুখ পুড়েছে। এ বারও ওঁর অতি সক্রিয়তার জন্য মুখ পুড়ল। যে ভাবে এক বর্ষীয়ান বিরোধী নেতাকে মারা হয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। ভোটে তার প্রভাব পড়তে পারে।” এ দিন ভাঙড়ের বামনঘাটায় মিছিলে সামিল হওয়া আর এক তৃণমূল নেতার গলাতেও ধরা পড়েছে একই রকম আশঙ্কা, “রাজনৈতিক কারণে মিছিলে আসতে হল বলে এলাম। আরাবুলের আচরণ বরদাস্ত করা যায় না।”
আরাবুলের সঙ্গে এ দিন বহু চেষ্টাতেও কথা বলা যায়নি। তবে তাঁর অনুগামীদের দাবি, পঞ্চায়েত ভোটের আগে ‘অ্যাডভান্টেজ আরাবুল’।
|
—নিজস্ব চিত্র |
|
|
|
|
|