প্রতিবাদে পথে এ বার বুদ্ধদেব
আরাবুল তাজা নেতা, বললেন মদন
রাজ্যে গুন্ডারাজ চলছে বলে মন্তব্য করছেন খোদ রাজ্যপাল। কবি শঙ্খ ঘোষ বলছেন, দুর্বৃত্তদের উপর নির্ভর করে সরকার চলছে। তৃণমূল কিন্তু রয়েছে তৃণমূলেই। আরাবুল-সমর্থকদের তালিকায় নাম লিখিয়ে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বুধবার বলে দিলেন, তৃণমূল চাইলে পাঁচ মিনিটে সরিয়ে দিতে পারে সিপিএম-কে। রাজ্যের প্রধান বিরোধী পক্ষ অবশ্য এ দিনও ভাঙড়ের ঘটনার প্রতিবাদে শহরে বড় মাপের মিছিল করেছে। যাতে সামিল ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কার্যত বিনা নোটিসে পরপর দু’দিন এত বড় মিছিল তাৎপর্যপূর্ণ বলেই রাজনীতির কারবারিদের মত।
ভাঙড়ে রেজ্জাক মোল্লা এবং সিপিএম সমর্থকদের উপরে পরপর হামলার পরে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁদের কথা শোনার পরে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছিলেন রাজ্যপাল।
এ দিন তিনি মুখ খুললেন। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে একটি অনুষ্ঠান থেকে বেরনোর সময় সাংবাদিকদের দেখে নারায়ণন নিজে থেকেই বলেন, “গত দু’তিন ধরে রাজ্যের পরিস্থিতি বেশ পীড়াদায়ক ও উদ্বেগজনক। এর জন্য যে-ই দায়ী হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। এই ধরনের হিংসাত্মক ঘটনা আমরা সহ্য করতে পারি না এবং করা উচিতও নয়।” তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, এই ঘটনা কি রাজ্যের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে কলুষিত করছে? রাজ্যপাল বলেন, “এটা রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিষয় নয়। যা চলছে, তা এক ধরনের গুন্ডারাজ!”
এর পরে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে, ভাঙড়ে পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকায় তিনি কি সন্তুষ্ট? রাজ্যপালের জবাব, “যে হেতু আমি নিজেই প্রশাসনের অংশ, তাই বলতে পারি, প্রশাসনের তরফে গাফিলতি রয়েছে।” রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের আরও বক্তব্য, “ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ঘাটতি যে রয়েছে, তা তো স্পষ্ট হয়েই গিয়েছে। পুলিশের ভূমিকায় দুর্বলতা আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব প্রশাসনকে নিতে হবে এবং পুলিশকে নিরপেক্ষ হতে হবে।”

এটা রাজনৈতিক সংস্কৃতির
বিষয় নয়। যা চলছে, তা
এক ধরনের গুন্ডারাজ।
এম কে নারায়ণন, রাজ্যপাল
দুর্বৃত্তদের উপরে নির্ভর করেই যদি
রাজ্য শাসন করতে হয়, এ রকম ঘটনা তবে
অবিরতই ঘটবে! সরকার এখনও সতর্ক হোন।
শঙ্খ ঘোষ

পাঁচ মিনিট সময় লাগবে সিপিএমকে সরিয়ে দিতে। আরাবুল আমাদের তাজা নেতা।
এ রকম নেতা সচরাচর পাওয়া যায় না। আমরা আরাবুলের পাশে আছি। গোটা দল তার পাশে আছে।
বামনঘাটায় মদন মিত্র

রাজ্যপালের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের তরফে কেউ অবশ্য আনুষ্ঠানিক ভাবে মুখ খুলতে চাননি। তবে তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার মতে, “কিছু পদক্ষেপ তো করতেই হবে। না হলে রাজ্য গৃহযুদ্ধের দিকে চলে যাবে! নানা মহল থেকেই এমন প্রতিক্রিয়া আসবে।” বস্তুত এ দিনই বিশিষ্ট কবি শঙ্খ ঘোষ বলেছেন, “দুর্বৃত্তদের উপরে নির্ভর করেই যদি রাজ্য শাসন করতে হয়, এ রকম ঘটনা তবে অবিরতই ঘটবে। সরকার এখনও সতর্ক হোন।”
সতর্ক হওয়ার কোনও লক্ষণ অবশ্য এখনও পর্যন্ত দেখা যায়নি। এ দিনই বামনঘাটার পাল্টা সমাবেশে মদন মিত্র বলেন, “আরাবুলের মতো ছেলেকে মারলে লোক কি ছেড়ে দেবে? রসগোল্লা দেবে? সিপিএম যদি আবার হামলা করে, তা হলে সেটাই হবে সিপিএমের শেষ দিন! আমরা বোমা-বন্দুক-গুলি চাই না। যদি চাইতাম, তা হলে সিপিএম থাকত না! পাঁচ মিনিট সময় লাগবে সিপিএম-কে সরিয়ে দিতে। মারতে হবে না, হাঁক মারলেই পালাবে!” ভাঙড়ের প্রাক্তন বিধায়ককে শংসাপত্র দিয়ে পরিবহণমন্ত্রীর মন্তব্য, “আরাবুল হচ্ছে আমাদের তাজা নেতা। এ রকম নেতা সচরাচর পাওয়া যায় না!” রেজ্জাককে ‘পাগল’ বলেও কটাক্ষ করেছেন মদন। পাশাপাশিই তাঁর হুঁশিয়ারি, “আমরা আরাবুলের পাশে আছি। সাধারণ মানুষ সিপিএমের উপরে খেপে গিয়েছে। তারা যদি বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে মারধর শুরু করে, তা হলে আমরা কী করব?”
আর মদনের দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেছেন, “ভাঙড়ের মানুষ সাবধানে থাকুন, সজাগ থাকুন। সিপিএমের হামলার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকবেন, তার জবাব দেবেন!” ভাঙড়েরই কাঁটাতলায় (রেজ্জাকের উপরে হামলা-স্থল) শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “সিপিএম চিমটি কেটে দেখছে, আমরা আছি, না মরে গিয়েছি?”
মদন সিপিএম-কে পাঁচ মিনিটে শেষ করে দেওয়ার হুমকি দিলেও বুধবার এক দিনের নোটিসে ফের কলকাতার বুকে বড় মিছিল করে দেখাতে পেরেছে বামেরা। এমনকী, দলের অন্দরে রেজ্জাকের সঙ্গে তাঁর যা-ই দূরত্ব থাক, এ দিনই পথে নেমেছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ধর্মতলা থেকে শুরুতে অল্প পথ হেঁটে গাড়িতেই মিছিলের পিছনে মৌলালি পর্যন্ত গিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। আর মিছিলের সামনে ছিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, সিপিআইয়ের মঞ্জুকুমার মজুমদার, আরএসপি-র ক্ষিতি গোস্বামী-সহ বামফ্রন্টের নেতারা। মিছিল শেষে বিমানবাবু মন্তব্য করেছেন, “অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না সরকার। মুখ্যমন্ত্রী নীরব। এই নীরবতা ভয়ঙ্কর! উনি তো শুধু তৃণমূলের মুখ্যমন্ত্রী নন! রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী!” দিল্লিতেও বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন সীতারাম ইয়েচুরি, হান্নান মোল্লা, নীলোৎপল বসুরা। সঙ্গে শ’খানেক সিপিএম-কর্মী। জমায়েতে ইয়েচুরি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রের উপরে দিনেদুপুরে ধর্ষণ চলছে! এ দিকে কেন্দ্রের নজর দিতে হবে।” রেজ্জাক তথা রাজ্য জুড়ে সিপিএম কর্মীদের উপরে আক্রমণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিন্দের কাছে দরবার করবেন ইয়েচুরিরা। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ধর্মরক্ষা করতে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে কেন্দ্রের সরাসরি হস্তক্ষেপ না-চাইলেও শিন্দেকে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতির দিকে নজর দিতে বলবেন তাঁরা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য এ দিনই শিন্দেকে চিঠি পাঠিয়ে একই কারণে এ রাজ্যে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল পাঠানোর আর্জি জানিয়েছেন।
আর যাঁদের নিয়ে এত কিছু, সেই রেজ্জাক এবং আরাবুল মোটের উপর ভালই আছেন। আরাবুলকে এ দিন সকালেই আইসিইউ থেকে সাধারণ বেডে দেওয়া হয়েছে। চিনার পার্কের ওই নার্সিং হোমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুভাষ ঘোষ বলেন, “ইসিজি রিপোর্ট-সহ আরাবুলের সব রিপোর্টই স্বাভাবিক। শুধু রক্তের শর্করার পরিমাণ বেশি। তাই ফের ব্লাড সুগার পরীক্ষা করা হয়েছে।” সব স্বাভাবিক হওয়ার পরেও আরাবুলকে নার্সিং হোম থেকে ছুটি দেওয়া হচ্ছে না কেন? সুভাষবাবু জানান, যে দুই ডাক্তার দেখছেন তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করার পরেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রেজ্জাকের শারীরিক অবস্থাও স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন তিনি যে হাসপাতালে রয়েছেন, তার কর্তৃপক্ষ। ভাঙড়ে জখম বাকি তিন জনের অবস্থাও স্থিতিশীল। তবে সুজিত দাসের অবস্থা আশঙ্কাজনক। অস্ত্রোপচার করে দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রের পেটে ও পায়ের গুলি বার করা হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী এ দিন জানান, এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট অভিযোগে ৪১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে ধরা হয়েছে আরও ৫৪ জনকে। বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে ৪টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৬ রাউন্ড গুলি ও ১০টি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.