রায়গঞ্জ শহরের পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে বয়ে গিয়েছে কুলিক নদী। আবদুলঘাটা থেকে শ্মশান ঘাট পর্যন্ত কুলিক নদীকে সংস্কার করলে রায়গঞ্জের সৌন্দর্য বাড়ত। কুলীক পাখিরালয়ে বিদেশি পাখির আনাগোনা ও স্থায়ী বসবাসকে কেন্দ্র করে রায়গঞ্জ কিন্তু পর্যটন মানচিত্রে এক উল্লেখযোগ্য স্থান করে নিতে পারে। পুরসভার উদ্যোগে বোটিংয়ের ব্যবস্থা করা যায়। শহরের বুক চিরে নদী প্রবাহিত হলে কতগুলি অসুবিধা থাকে। বহু বাড়ির আবর্জনা-সহ নর্দমা ও শৌচাগারের পয়ঃপ্রণালীর ধারক হিসেবে জলপাইগুড়ির করলা বা বালুরঘাট শহরের আত্রেয়ী নদীকে ব্যবহার করা হয়। কুলিক নদীর অবস্থান কিন্তু এ ক্ষেত্রে আলাদা। খরার সময় বালির রয়্যালিটির ব্যাপারে ভূমি ও ভূমিসংস্কার দফতর একটু উদার হলে বালি ও মাটি উত্তোলনের মধ্য দিয়ে নদীর নাব্যতা যেমন বাড়বে, তেমনই বাড়বে সরকারের আয়ও। তবে এ ক্ষেত্রে নদীর সৌন্দর্য যেন অক্ষুন্ন থাকে, তার দিকে প্রশাসনের লক্ষ রাখা প্রয়োজন। নদীবক্ষ ও পাড়-সংলগ্ন অঞ্চল থেকে দেদার মাটি-বালি উত্তোলন আবার যেন বিপদ ডেকে না আনে। নদীর পাড় বরাবর আবদুলঘাটা থেকে সুভাষগঞ্জ ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তা আছে। আবার সুভাষগঞ্জ ব্রিজ থেকে বন্দর শ্মশান হয়ে রাস্তা চলে গিয়েছে, যা বহু মানুষ চলাচলের মাধ্যম। নদী-পাড়ে বহু মানুষের বসবাস। তাদের চলাচলের রাস্তা যাতে ভগ্নদশা না হয় সে দিকে নজর দিয়েই সংস্কার করা যেতে পারে। |
নদীর নাব্যতা ও জলের বহমানতা এই ডিসেম্বরে অত্যন্ত কম থাকে। তাই নভেম্বর-ডিসেম্বরে নদী সংস্কার করে রিজার্ভারের ব্যবস্থা অনায়াসেই করা যেতে পারে। আবদুলঘাটায় একটি ও সুইসগেট ও বন্দর শ্মশানের কাছে একটি সুইসগেট নদীবক্ষে স্থাপন করে সহজেই বর্ষার জল ধরে রাখার ব্যবস্থা করা যায়। এর ফলে আমন ধান ও বোরো চাষের জন্য জলসেচের ব্যবস্থা-সহ মৎস্যচাষ ও নদীবক্ষে বোটিংয়ের ব্যবস্থা করলে রায়গঞ্জ শহর অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারে। যে কোনও বড় পর্যটন কেন্দ্রে লেকের গুরুত্ব অপরিসীম। গ্যাংটকের ছাঙ্গু লেক, মেঘালয়ের উমিয়াম লেক, কাশ্মীরের ডাল লেক বা মিরিকের জলাধার এ ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য। কুলিক নদীতে যদি শীতকালেও জল থাকে, তা হলে উপরিউক্ত স্থানগুলির চেয়ে তা কম গুরুত্বপূর্ণ হবে না। সরকারি কাজে বিভিন্ন আধিকারিকরা কিছু দিনের জন্য হলেও বসবাস করেন রায়গঞ্জ শহরে। তাঁদের কাছে এই শহরের কুলিক নদী, পাখিরালয়, কর্ণজোড়া পার্ক, ইকো পার্ক দর্শনীয় হতে পারে।
অচিন্ত্য চাকী। রায়গঞ্জ
|
প্রতাপচন্দ্র মজুমদার‘নামে এক জন’? |
পদস্থ মানুষকে অপদস্থ করায় বাঙালি তুখড়, এ কথা বলতে গিয়ে সুস্নাত চৌধুরী (‘বাঙালির ল্যাং’, রবিবাসরীয়, ৩০-১২) লিখেছেন, ‘শিকাগোয় প্রতাপচন্দ্র মজুমদার নামে এক জন হিন্দু ধর্মের প্রতিনিধি হিসেবে গিয়েছিলেন।’ ‘নামে এক জন’ শব্দগুলি না লিখলেই ভাল হত।
প্রতাপচন্দ্র ১৮৪০ সালে হুগলি জেলার বাঁশবেড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৫৯ সালে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত হন। পরে আদি ব্রাহ্মসমাজের সহকারী সম্পাদক নিযুক্ত হন। ‘তত্ত্ববোধিনী’ ও ‘ইন্ডিয়ান মিরর’ নামে দৈনিক ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদক হন। এ ছাড়া ‘ইনটারপ্রিটার’ পত্রিকাও তিনি সম্পাদনা করেন। ইংরেজি ভাষায় বক্তৃতা করার তাঁর অপূর্ব দক্ষতা ছিল। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ সম্পর্কে ১৮৭৬ সালে ‘সানডে মিরর’ পত্রিকায় তিনি এক প্রবন্ধ লেখেন। সেটি পাঠ করে ম্যাক্সমুলার ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের প্রতি প্রথম আকৃষ্ট হন।
শিকাগোয় ১৮৯৩ সালে তিনি ব্রাহ্মসমাজের প্রতিনিধি রূপে ‘পার্লামেন্ট অব রিলিজন’-এ বক্তব্য রাখেন। প্রতাপচন্দ্রই ওই ধর্ম মহাসভার অ্যাডভাইজরি কমিটির একমাত্র বাঙালি সদস্য ছিলেন। তিনি সম্মেলনে চারটি বক্তৃতা দেন। তাঁকে আমেরিকাবাসী অন্যতম শ্রেষ্ঠ বক্তা ও প্রতিনিধি বলে ঘোষণা করেন। ধর্ম মহাসভার তৃতীয় দিনে (১৩ সেপ্টেম্বর) প্রতাপচন্দ্রকে সভা আরম্ভ ও পরিচালনা করতে দেওয়া হয়।
তাঁর দেহান্তের শতবর্ষ অতিক্রান্ত হয়েছে। প্রচারের আলোকে তিনি বাঙালির কাছে আসতে পারেননি। তবু তাঁকে ল্যাং মারতে যাব কেন?
প্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায়। আরামবাগ |