মমতার স্বপ্নপূরণ, শীতে টেক্কা লন্ডনকে
হাড়ে কাঁপুনিটা মালুম দিচ্ছিলই। আবহাওয়ার খবর শোনার পর থেকে রসিক মহলে এই বার্তাটি গেল ক্রমে...। “নেতাজি পারেননি! দিদি কিন্তু পারলেন!”
আজাদ হিন্দ ফৌজ নিয়ে ব্রিটিশের সঙ্গে যুদ্ধে নেমেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। জিততে পারেননি। দিদি কলকাতাকে লন্ডন বানাবেন বলেছিলেন। একেবারে লন্ডনকে হারিয়ে ছেড়েছেন!
বুধবার সকালে দমদম বিমানবন্দরের তাপমাত্রা ছিল ৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ইন্টারনেটের আপডেট তখন বলছে, লন্ডন মোটে ৯ ডিগ্রিতে দাঁড়িয়ে। তাতেই আহ্লাদে আটখানা কলকাতা। হি হি করে কাঁপতে কাঁপতেও বাঙালি মজেছে মজাতেই!
গত অন্তত ১০ বছরে এমন ঠান্ডার ধারে-কাছে যায়নি এ শহর। সেই কোন মান্ধাতার আমলে ১৮৯৯ সালের ২০ জানুয়ারি এক বার, ৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছিল ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন রাজধানী। অ্যাদ্দিন পরে আবার সে এসেছে ফিরিয়া! কলকাতার ‘লন্ডনায়ন’ বলে রসিকতাও তাই লেপের মধ্যে থেকে মুন্ডু বার করছে।
সত্যি বলতে কী, বাঙালি খুব ভুলও বলছে না! লন্ডনের কাছেই উল্ভারহ্যাম্পটন থেকে বললেন কৃষ্ণঅর্চনা বসু। “এখানে শীতটা এ বার কেমন যেন ম্যাদা-মারা!”
লন্ডনের তাপমাত্রা এ দিন নয় থেকে পাঁচ ডিগ্রি সেললিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। শূন্য বা তার নীচের তাপমাত্রায় অভ্যস্ত বিলেতে এই তাপমাত্রাটা খানিকটা চড়া-ই। আর মোটামুটি ১০-১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসেই কাতর হয়ে পড়া কলকাতা এই আচমকা ‘লন্ডনায়নে’ এক কথায় জবুথবু। বুধবার কলকাতার আলিপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি। স্বাভাবিকের থেকে অন্তত ডিগ্রি পাঁচেক কম। শহরের কোথাও কোথাও স্মার্টফোনে তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রিও দেখিয়েছে!
ফলে সাইবার-দেওয়ালের আড্ডায় আরাবুল-কাণ্ডকে ছাপিয়ে সুপারহিট এ দিন ঠান্ডা, ঠান্ডা এবং ঠান্ডা! কেউ বলছেন, ‘কম্পমান কলকাতা’। রায়গঞ্জ থেকে এক জন লিখছেন, ‘এক ডিগ্রি সেলসিয়াস! তুষার যুগের পরে বোধহয় এমন ঠান্ডা পড়েনি।’ দমদমের অনির্বাণ মাইতির ফেসবুক-স্টেটাস বলছে, ‘দমদম ৬.৮...আমি বাবা আইস স্কেটিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছি!’ গাঙ্গুলিবাগানে আয়কর বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অফিসার পরিতোষ দাশগুপ্ত প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়েই পিঠটান দিয়েছেন। ‘‘ওরে বাবা, কে জানত কলকাতাতেও গ্লাভ্স পরতে হবে!” পাইকপাড়ায় সরকারি স্কুলের ক্লাস ফাইভের পড়ুয়া শুভ প্রামাণিকের ক্ষোভ, “এই ক’টা দিন আন্টিরা একটু ফুলপ্যান্ট পরতে দিলে পারে তো!”
এই শীতের মধ্যেই রাজনীতিকদের পথে নামতে হয়েছে! সকালে ভাঙড়ে গরম-গরম বক্তৃতায় আসর জমানোর চেষ্টা করেছেন তৃণমূলের তাবড় নেতা-মন্ত্রীরা। সন্ধেয় কোমর বেঁধে পথে নেমেছে বাম-শিবির। শীতের কামড় কিন্তু শাসক-বিরোধী ভেদ করেনি। সমর্থকদের বেশির ভাগের গায়েই ভারী জ্যাকেট-সোয়েটার! সন্ধের মিছিলে হাঁটছিলেন কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক, প্রবীণ নেতা দিলীপ সেন! শাল দিয়ে এক প্রস্ত কান ঢেকে তার উপরে হনুমান-টুপি! আনিসুর রহমান, মানব মুখোপাধ্যায়ের পরনে সোয়েটারের উপরে জ্যাকেট! বিমানবাবু, বুদ্ধবাবু অবশ্য হাতকাটা জহর কোটেই কাজ চালালেন! ভাঙড়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মুকুল রায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়রাও তা-ই!
শীত করল না? পার্থবাবু বললেন, ‘‘তখন রোদ্দুর ছিল! তাই লাগেনি! আমি এমনিতে শীতে ফুলহাতা, গলাবন্ধ সবই পরি!” বর্ষীয়ান এক বাম নেতা রসিকতা করে বলছিলেন, খুব বেশি ইমেজ-সচেতন রাজনীতিকদেরই মুশকিল বেশি! চেনা পোশাক ছাড়তে পারেন না! “জ্যোতিবাবু কিন্তু শরীর বাঁচিয়ে চলতেন! কিন্তু মমতা হাওয়াই চটি ছাড়বেন না! বুদ্ধবাবুও কোলাপুরী চপ্পলই পরবেন!”
হিম পরশে মহানগর
তারিখ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা*
২০ জানুয়ারি ১৮৯৯ ৬.৭
২১ ডিসেম্বর ১৯৬৬ ৭.২
১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৬ ৮.৩
৬ জানুয়ারি ১৯৭৮ ৮.৪
১৪ জনুয়ারি ১৯৮৯ ৮.৪
২২ জানুয়ারি ২০০৩ ৯.৩
৬ জানুয়ারি ২০০৪ ৯.৪
৯ জানুয়ারি ২০১৩
দমদম ৬.৮
আলিপুর ৯.০

*
(ডিগ্রি সেলসিয়াস)
পাহাড়ের স্কুলে এক দিন আগেই ছুটি ঘোষণা করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী! কিন্তু নিজে এ বারের শীতটা সামলাতে পারেননি। দিন দুয়েক হল, বেমক্কা ঠান্ডা লেগে ‘ভাইরাল জ্বরে’ ঈষৎ কাবু মমতা। এ দিন খানিকটা দেরিতে বিকেল তিনটে নাগাদ মহাকরণে ঢুকেছেন। বললেন, “মাঝে মধ্যে জানলা খোলা রাখতে হয়, তাতে হাওয়া ঢুকে ঠান্ডা লেগে যায়।” তা-ও মোজা পরবেন না! এ দিন সন্ধেয় দুর্গাপুর রওনা হওয়ার আগে বললেন, “জ্বর নিয়েই যাচ্ছি!”
কিন্তু কলকাতায় এমন দাঁত-কপাটি শীতের কারণটা কী? আবহবিদেরা বোঝাচ্ছেন, সাইবেরিয়ার পশ্চিমী ঝঞ্ঝার খেয়ালেই এমন অবস্থা। এই পশ্চিমী ঝঞ্ঝাই উত্তুরে হাওয়া হয়ে এ দেশে ঢোকে। এ বার ডিসেম্বরের গোড়া থেকে সাইবেরিয়ার অবিরাম ঝঞ্ঝা আফগানিস্তান, পাকিস্তান হয়ে ভারতের দিকে নিশানা করেছে। তখনই কাশ্মীর, হিমাচল এবং উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ে তুষারপাতের শুরু। ইউরোপের দিকটা বরং সাময়িক রেহাই পেয়েছে। তাই লন্ডনের জাঁকালো শীত এ বার তুলনায় কম। যা পরিস্থিতি, তাতে বাংলা তো বটেই কলকাতা বা লাগোয়া এলাকা ঘিরে এই শৈত্যপ্রবাহ আরও তিন-চার দিন জারি থাকবে। কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশেই থাকার কথা। আরও নীচে নামলেও অবাক হবেন না! অতএব আরও ক’টা দিন বিলেত-বিলাসে মজে থাকতেই পারে বাঙালি।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.