হলদিয়ায় বেঙ্গল লিড্সের মঞ্চেই শিল্পপতিদের সামনে রাজ্যের নতুন শিল্পনীতি ঘোষণা করতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যার মূল অভিমুখ হবে শিল্পের জন্য জমি সংস্থানের পথ দেখানো এবং অন্য রাজ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লগ্নি টানতে উৎসাহভাতা ঘোষণা। জোর দেওয়া হবে পরিকাঠামোয় বেসরকারি বিনিয়োগ টানার উপরেও।
এ প্রসঙ্গে বুধবার মহাকরণে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, “বণিকসভাগুলি শিল্পনীতি নিয়ে মতামত জানিয়েছে। খসড়া তৈরি করেছে মুখ্যমন্ত্রীর গড়া মন্ত্রিগোষ্ঠীও। সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখেই শিল্পনীতি তৈরি হবে।” মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছেমতো ১৫ জানুয়ারি বেঙ্গল লিড্সেই তা ঘোষণার চেষ্টা হবে বলে পার্থবাবুর দাবি।
রাজ্যে লগ্নির অনুকূল পরিবেশ তৈরির জন্য যে শুধু মৌখিক আশ্বাসে চিঁড়ে ভিজবে না, তা দীর্ঘ দিন ধরেই বলছে শিল্পমহল। স্পষ্ট শিল্পনীতির জন্য সওয়াল করছে তারা। এমনকী এ দিনও তারা এই একই অনুরোধ জানিয়েছে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায়। সেখানে শিল্পমহলের বক্তব্য ছিল, শুধু বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে পশ্চিমবঙ্গকে তুলে ধরা নয়। বেঙ্গল লিড্সের মঞ্চ থেকে বরং শিল্প নিয়ে সার্বিক দিশা স্পষ্ট করুক রাজ্য।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, বেশ কিছু দিনই শিল্পমহল চাইছিল বেঙ্গল লিড্সের আগে অন্তত খসড়া শিল্পনীতি তৈরি করে ফেলুক রাজ্য। কারণ, এক বার ওই খসড়া প্রস্তাব ওয়েবসাইটে তুলে দিতে পারলে, শিল্পমহলের মতামত পাওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে শিল্পনীতি কার্যকর করতে এক কদম এগিয়ে থাকতে পারবে রাজ্য। শিল্পমহল মনে করে, জমি ও বিশেষ আর্থিক অঞ্চল নিয়ে হয়তো রাজ্যের ঘোষিত অবস্থান রয়েছে। কিন্তু তা বাদ দিয়েও অন্তত লাল ফিতের ফাঁসে আটকে থাকা প্রকল্পগুলি দ্রুত রূপায়িত করতে পদক্ষেপ করুক সরকার। যাতে লগ্নিকারীদের আস্থা আদায় সম্ভব হয়। |
আরও কথা শিল্পপতিদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবার মহাকরণে। —নিজস্ব চিত্র |
শিল্পমন্ত্রীর অবশ্য দাবি, জমি বণ্টনের নীতি ইতিমধ্যেই ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি উৎসাহভাতা ঘোষণা।
এ দিন মহাকরণে ন’টি বণিকসভার ৩৬ জন প্রতিনিধির সঙ্গে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র, শিল্পসচিব চঞ্চলমল বাচোয়াত এবং শিল্পোন্নয়ন নিগমের এমডি কৃষ্ণ গুপ্ত। বণিকসভার তরফে হাজির ছিলেন রাজ্যে শিল্পপতি হিসেবে পরিচিত মুখদের প্রায় সকলেই। ওই বৈঠকের শেষে শিল্প বিষয়ক কমিটির সঙ্গেও আলোচনায় বসেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা শেষে আরপিজি গোষ্ঠীর ভাইস চেয়ারম্যান সঞ্জীব গোয়েন্কা বলেন, “শিল্পায়নের স্বার্থে মুখ্যমন্ত্রী বণিকসভাগুলির সাহায্য চেয়েছেন। আমরা সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি।”
তবে উল্টো পিঠে সরকারের কাছে শিল্পেরও যে প্রত্যাশা রয়েছে, তা স্পষ্ট বণিকসভাগুলির বক্তব্যে। যেমন, ভারত চেম্বার অফ কমার্সের প্রেসিডেন্ট অশোক আইকত বলেন, “জমিই একমাত্র ইস্যু নয়। শিল্পতালুকের মতো তৈরি পরিকাঠামোর দিকে নজর দিতে হবে। চাই এক-জানালা ব্যবস্থা। যে সব লগ্নি রাজ্যে এসেছে, সেগুলি রূপায়িত করতে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে নজরদারি কমিটি তৈরির সুপারিশও জানিয়েছি।” বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্সের প্রেসিডেন্ট কল্লোল দত্তের দাবি, “কেন্দ্রের আদলে উৎপাদন শিল্পের জন্য নির্দিষ্ট নীতি চাই এ রাজ্যেও। ন্যাশনাল ম্যানুফ্যাকচারিং ইনভেস্টমেন্ট জোন তৈরির সুপারিশ জানিয়েছি। কাজে লাগাতে হবে শেল গ্যাসের মজুত ভাণ্ডারকেও।”
তবে যে বেঙ্গল লিড্স-কে ঘিরে এত সাজো সাজো রব, সেখানে ভিন্ দেশ বা অন্য রাজ্য থেকে শেষ পর্যন্ত কত জন শিল্পপতি আসবেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে এখনও। কারণ, ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য রাজ্য প্রায় ১,২০০ জনকে আমন্ত্রণপত্র পাঠালেও, এখনও পর্যন্ত প্রথম সারির শিল্পপতিদের তরফ থেকে তেমন সাড়া মেলেনি বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। মহাকরণের কর্তাদের একাংশের দাবি, বার্ষিক সাধারণসভা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আসতে না পারার কথা মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন অনেক শিল্পকর্তা। এক শিল্পকর্তা অবশ্য জানাচ্ছেন, ১৩ ফেব্রুয়ারি মুম্বইয়েও শিল্পপতিদের ফের বৈঠক ডেকেছে রাজ্য। সেখানে যেতে পারেন অনেকে। তবে বেঙ্গল লিড্সের মুখে শিল্প নিয়ে রাজ্যের ভাল ভাবমূর্তি তুলে ধরতে সচেষ্ট শিল্পমন্ত্রী এ দিন মহাকরণে দাবি করেন, ১৩টি ছোট ও মাঝারি শিল্পকে কারখানার জমি দেওয়া হবে। ফলে রাজ্যে প্রায় ২,০২১ কোটি টাকার লগ্নি আসবে। কাজের সুযোগ তৈরি হবে ৭ হাজার। |