জলসঙ্কটে জেরবার গ্রামে গিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়ে পুকুরের জল খেতে বাধ্য হয়েছিলেন বিধায়ক। এর পরেই নড়েচড়ে বসেন বিধায়ক। ফলও মিলেছে। আগামী গ্রীষ্মের আগেই কিছুটা হলেও পানীয় জলের সঙ্কট মেটানোর উদ্যোগ শুরু হয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুরের ৪০টি এলাকায়।
মাস ছয় আগের ঘটনা। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের ফরওয়ার্ড বিধায়ক তজমূল হোসেনকে মশানন্দপুর গ্রাম ও লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা পুকুরের জল কেতে বাধ্য করেন। বিধায়ক নানা মহলে ছোটাছুটি করে ৪০টি গ্রামের জন্য ৯৫টি মার্ক-২ তথা গভীর নলকূপের অনুমোদন আদায় করেছেন। তার মধ্যে রয়েছে বিধায়ককে পুকুরের জল খেতে বাধ্য করা মশানন্দপুর গ্রামও। নলকূপ পিছু ৭৫ হাজার টাকা করে প্রথম দফায় মোট ৫৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে বলে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি আরও ৭০টি একই ধরনের নলকূপ চেয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন বিধায়ক। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মালদহের নির্বাহী বাস্তুকার প্রজেশ সমাদ্দার বলেছেন, “প্রথম দফায় ৭০টি নলকূপ বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী গরমের আগেই নলকূপগুলি চালু হয়ে যাবে।”
গত মে মাসের ১৭ তারিখে নিজের বিধানসভা এলাকার মশানন্দপুরে গিয়ে পুকুরের জল খেতে বাধ্য হয়েছিলেন বিধায়ক। এলাকা পরিদর্শনে বেরিয়ে মশানন্দপুর দিয়ে যাওয়ার সময় তৃষ্ণার্ত হয়ে এক বাসিন্দার বাড়িতে গিয়ে জল চেয়েছিলেন। গৃহকর্তী সায়েদা বিবির দেওয়া গ্লাসের ঘোলাটে জল দেখে সন্দেহ হওয়ায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তা পুকুরের জল। খেতে ইতস্তত করায় ঝাঁঝিয়ে ওঠেন বাসিন্দারা। ততক্ষণে বিধায়কের পাশে জড়ো হন শতাধিক গ্রামবাসী। তাঁরা জানিয়ে দেন, জলস্তর নেমে যাওয়ায় কোনও নলকূপেই জল উঠছে না। মাঠে স্যালো চললে জল মেলে। না হলে অধিকাংশ সময়েই গ্রামের হাজার দুয়েক বাসিন্দাকে পুকুরের জল খেতে হয়। গ্রামে সরকারি উদ্যোগে বসানো নলকূপ ছাড়াও বাসিন্দাদের নিজেদের বসানো নলকূপগুলির সবকটিই অগভীর। গভীর নলকূপ বসানোর সামর্থ নেই বাসিন্দাদের। ফলে প্রতি বছর গরম পড়তেই একইরকম জলসঙ্কটে শুরু হয়। তারা পুকুরের জল খেতে পারলে বিধায়ক খেতে পারবেন না কেন? পুকুরের জল খান বিধায়ক।
এর পর চুপচাপ বসে না থেকে সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের কাটিং নিয়ে বিধানসভায় সরব হন তিনি। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে সমস্যার কথা জানান। আগামী গরমের আগেই মশানন্দপুর সহ অন্যান্য এলাকায় যাতে জলসঙ্কট মেটে তা নিয়ে দফতরের মন্ত্রীকে তাগাদা দিতে থাকেন। জলসঙ্কটে জেরবার এলাকার একটি তালিকা মন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। পিএইচই দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, মন্ত্রীর নির্দেশে বিধায়কের তালিকা ধরে তদন্তের পর ৩ মাস আগে বরাদ্দ চেয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। বিধায়ক বলেন, “পুকুরের জল খেয়ে বাসিন্দাদের সমস্যা অনুভব করেছিলাম। আপাতত ৯৫টি নলকূপের অনুমোদন মিলেছে। আরও ৭০টি নলকূপ চেয়ে মন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। তা হলে সমস্যা অনেকটাই মিটে যাবে।” |