থমথমে রায়গঞ্জে জনজীবন পুরোপুরি স্বাভাবিক করতে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে স্মারকলিপি পাঠাল ব্যবসায়ীদের সংগঠন ওয়েস্ট দিনাজপুর চেম্বার অফ কমার্স। সংগঠনের সম্পাদক জয়ন্ত সোমের অভিযোগ, পুলিশ সুপারের নিষ্ক্রিয়তায় শহরের পরপর অপরাধ ঘটছে। তিনি বলেন, “শহরের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রেখে বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়েছে।”
পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে রায়গঞ্জে মৌনী মিছিল করলেন বিদ্বজ্জনেরা। মঙ্গলবার বিকালে স্থানীয় কেবল চ্যানেল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে প্রায় ৩০০ জন মানুষ রায়গঞ্জের শিলিগুড়ি মোড় থেকে বিদ্রোহী মোড় পর্যন্ত মৌনী মিছিলে পায়ে পা মেলান। ওই মিছিলে সামিল হয়েছিলেন চিকিৎসক, আইনজীবী, সাংবাদিক থেকে শুরু করে কংগ্রেস, সিপিএম ও তৃণমূলের নেতারা। মিছিল থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে রায়গঞ্জে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি, কেবল কর্তা সঞ্জীব বর্ধন খুনের ঘটনায় ফেরার অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। মিছিল শেষে রায়গঞ্জের বিবেকানন্দ মোড় এলাকায় বহু মানুষ মোমবাতি জ্বালিয়ে সঞ্জীববাবুর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। কেবল চ্যানেলের দুই কর্ণধার তপন সাহা ও অমিত সরকার বলেন, “একের পর এক অপরাধের ঘটনার জেরে মানুষ পুলিশের ওপর ভরসা রাখতে পারছেন না। তাই সাধারণ মানুষ পথে নেমেছেন। আমরা জেলাশাসককে সেই কথা জানিয়েছি।” এদিন মিছিলে সামিল হয়ে জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্ত বলেন, “পুলিশ নিষ্ক্রিয়। তাই সাধারণ মানুষকেই প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনদিনের মধ্যে পুলিশ সঞ্জীববাবুকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের সহ বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে না পারলে দলের তরফে টানা আন্দোলনে নামা হবে।” এদিন মোহিতবাবু জেলা পুলিশ সুপার সহ রায়গঞ্জ থানার সমস্ত পুলিশ কর্মীদের বদলি দাবি করেন। |
অপরাধ ঠেকাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরফে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা লাগানোর দাবি উঠেছে। উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক পাসাং নরবু ভুটিয়া সোমবার রায়গঞ্জের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে কিছু দিনের জন্য বিএসএফ মোতায়েন করার প্রস্তাবের কথা বললেও এদিন সুর কিছুটা বদলেছেন। মঙ্গলবার তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ায় অনেকেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাবি অনুযায়ী আমি রাজ্য সরকারের কাছে বিএসএফ মোতায়েন করার প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এটা প্রশাসনিক কোনও সিদ্ধান্ত নয়।” জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, পুলিশ প্রশাসনেরই একটি অংশ! আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলেও প্রশাসন সরাসরি পুলিশের ওপর অনাস্থা প্রকাশ করতে পারে না। জেলা পুলিশ সুপার দীপঙ্কর ভট্টাচার্যকে এদিন বার বার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডেভিড ইভান লেপচা বলেন, “শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ও বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্তদের খোঁজে অভিযান চলছে।”
রায়গঞ্জে দু’মাসে ৯টি খুনের ঘটনা ছাড়াও দুষ্কৃতীদের মধ্যে একাধিকবার গুলি-বোমা নিয়ে সংঘর্ষও হয়েছে। গত শুক্রবার স্থানীয় কেবল চ্যানেলের বার্তা সম্পাদক তথা প্রেস ক্লাবের সহ সম্পাদক সঞ্জীব বর্ধনকে দুষ্কৃতীরা গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা। পুলিশি ব্যর্থতার প্রতিবাদে সোমবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ডাকা বন্ধ সর্বাত্মক ভাবে পালিত হয়। সঞ্জীববাবুকে খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এদিন দুপুরে রায়গঞ্জের মিলনপাড়া এলাকা থেকে গঙ্গা পাসোয়ান নামে আরও এক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রায়গঞ্জ থানার আইসি দীনেশ প্রামাণিক জানান, আরও দুই অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চলছে। জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্তের অভিযোগ, “কিছুদিন আগে জেলা প্রশাসনকে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা লাগানোর প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকলে ক্যামেরা বসিয়ে লাভ হবে না। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে দল টানা আন্দোলনে নামবে।” বিজেপির জেলা সভাপতি শুভ্র রায়চৌধুরী ও সিপিএমের জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অনিরুদ্ধ ভৌমিকও একই মত প্রকাশ করেছেন। জেলাশাসক এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্যের দাবি, পুলিশ আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। |