প্রবল শৈত্য প্রবাহে কাপঁছে উত্তরবঙ্গের পাহাড় ও সমতল। ঘন কুয়াশার জেরে মঙ্গলবারও বাতিল হয়েছে বাগডোগরার সব উড়ান। বিপাকে পড়েছেন পর্যটকেরা সহ বহু যাত্রী। তার উপরে সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকালের মধ্যে উত্তরবঙ্গে ঠান্ডার জেরে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মালদহে ৪ জন ও উত্তর দিনাজপুরে ১ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। পুরসভা ও পঞ্চায়েত সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ঠান্ডার জেরেই ওই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু, পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আগে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর তা মানতে রাজি নয়। পঞ্চায়েত ও পুরসভা সূত্রের খবর, মৃতদের মধ্যে রয়েছেন গাজলের দেওতলার বিমলকৃষ্ণ চৌধুরী (৭০), পুরাতন মালদহের মঙ্গলবাড়ির বাসিন্দা সুকদেব কর্মকার (৭২), ইংরেজবাজারের জোতবসন্ত গ্রামের বাসিন্দা কার্তিক রাম (৭৩) ও মালদহ শহরের সুভাষপল্লির বাসিন্দা প্রতিমা সাহা (৬৫)। তাঁদের পরিবারের লোকজনদের দাবি, ঠান্ডার কারণেই এঁদের মৃত্যু হয়েছে। এই প্রসঙ্গে জেলা ত্রাণ দফতরের আধিকারিক সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “জেলার কোনও ব্লক থেকে বা মহকুমা শাসকের অফিস থেকে ঠান্ডায় মারা যাওয়ার কোনও রিপোর্ট আমাদের কাছে পাঠায়নি।” |
পাশাপাশি চাঁচলের বলরামপুরে ঠান্ডায় আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে বলে পঞ্চায়েতের দাবি। আগেও প্রবল ঠান্ডায় কাহিল হয়ে বলরামপুরের হায়দার আলি (৫০) ও সদাগরিন বেওয়া (৬৩)-সহ লাগোয়া এলাকার মোট পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছিল। রবিবার থেকে ফের শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। সোমবার রাত ১০টায় মারা যান দিনমজুর হায়দার আলি। এদিন সকাল ১০টায় মারা যান সদাগরিন বেওয়া। চন্দ্রপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেসের প্রধান নবকুমার সিংহ বলেছেন, “পাঁচ জনের মৃত্যুর পর প্রশাসনের তরফে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছিল। তাদের যে ঠান্ডাতে মৃত্যু হয়েছে সেই রিপোর্ট প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। কিন্তু ত্রাণ না মেলায় কাউকে দিতে পারিনি।” চাঁচলের সহকারি মুখ্য আধিকারিক স্বপন বিশ্বাস বলেছেন, ঠান্ডায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে শুনে বিএমওএইচ-এর কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।
এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ মালতিপুরের আরএসপি বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সিও। তিনি বলেন, “প্রশাসনের গাফিলতি রয়েছে। গরম পোষাক দেওয়া হচ্ছে না।” চাঁচল-২ ব্লকের বিডিও ঈশা তামাং দ্রুত ত্রাণ বিলি হবে বলে জানিয়েছেন। উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর শহরে এক মধ্যবয়সী ভিখারিণীকে রাস্তার ধারে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। প্রবল ঠান্ডায় শীতবস্ত্র না-থাকার কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা বাসিন্দাদের। দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।
শৈত্যপ্রবাহ ও কুয়াশার কারণে পর্যটন ব্যবসায়ীরাও বিপাকে পড়েছেন। যেমন, ২৫ জন পর্যটকের একটি দলের দিল্লি থেকে বাগডোগরা বিমানবন্দরে নামার কথা ছিল গত সোমবার। গন্তব্য দাজির্লিং, গ্যাংটক. কিন্তু কুয়াশায় ঢাকা বাগডোগরা বিমানবন্দরে গত সোমবার সব ক’টি বিমান বাতিল হয়ে যাওয়ায় ১৫ জন আসতে পারেননি। বাকি ১০ জন বিমানে চেপে গুয়াহাটিতে পৌঁছলেও বাগডোগরায় আসতে পারেননি। শিলিগুড়ি ট্যুর অপারেটর সংস্থা থেকে তাদের সকলেরই টিকিট মঙ্গলবারে করে দেওয়া হয়েছিলও। কিন্তু এদিনও একই কারণে ফের সব বিমান বাতিল হয়ে যাওয়ায় তাদের সফরই বাতিল করে দিতে হয়েছে।
ডুয়ার্সেও একই চিত্র। ঠান্ডায় কাহিল ময়নাগুড়ি-সহ ডুয়ার্সের জনজীবনও। ডুয়ার্স মিনি বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক গৌরব চক্রবর্তী বলেন, “কনকনে ঠান্ডা ও কুয়াশার করণে তুলনামূলক ভাবে কম বাস রাস্তায় নেমেছে। হাট ও বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের ভিড় ছিল কম। দোকানদার ও পরিবহণ কর্মীরা রাস্তার পাশে আগুন জ্বেলে সময় কাটিয়েছেন। স্কুল কলেজ সরকারি অফিসগুলিতে উপস্থিতি কম ছিল বেলা যত বেড়েছে, শীতের কামড় ততই তীব্র হয়েছে।
প্রবল শৈত্যপ্রবাহের বিপর্যস্ত দক্ষিণ দিনাজপুরের জনজীবনও। ভোর থেকে শীতল ঝোড়ো বাতাস বইছে। তাপমাত্রা ৫.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যায়। যা কিনা চলতি বছরের শীতলতম। বেলার দিকে রোদ উঠলেও তার তেজ ছিল অত্যন্ত ম্লান। বিকেল ৩টার মধ্যে আলো কমে চারদিক কুয়াশায় ঢেকে যায়। সন্ধ্যা হতেই সুনসান শহর। |