যেখানে আলট্রাসোনোগ্রাফি যন্ত্র নেই, সেখানে রেডিওলজিস্ট রয়েছেন। যেখানে অ্যানাস্থেটিস্ট নেই, কার্ডিওথোরাসিক সার্জন সেখানে হাজির। যেখানে প্রসবের ন্যূনতম পরিকাঠামোই নেই, সেখানে স্ত্রীরোগ চিকিৎসক মজুত।
পরিকাঠামো আর নিয়োগের মধ্যে এই বিপুল অসঙ্গতি নিয়েই চালু রয়েছে রাজ্যের অসংখ্য সরকারি হাসপাতাল। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এই অসুখটা ধরেছে খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড়া এক বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠী। শুধু রোগ ধরাই নয়, তার কিছু ওষুধও বাতলেছেন ‘মাল্টি ডিসিপ্লিনারি এক্সপার্ট গ্রুপ’-এর চেয়ারম্যান, চিকিৎসক সুব্রত মৈত্র। মঙ্গলবার ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে এক আলোচনাসভায় তিনি বলেন, বরাদ্দ বৃদ্ধি, প্রচুর কর্মী নিয়োগ, নিত্যনতুন পরিকল্পনা ছাড়াও রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল অনেকটাই ফেরানো সম্ভব। আর সেটা সম্ভব শুধু নিয়োগ প্রক্রিয়াকে যুক্তিসঙ্গত করে। |
রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল ফেরাতে মুখ্যমন্ত্রী গত এপ্রিলে ওই বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠী তৈরি করেছিলেন। সেই গোষ্ঠীর প্রধান হিসেবে সুব্রতবাবু বলেন, “রাজ্যের নানা প্রান্তের বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে নিয়োগের ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম চোখে পড়েছে আমাদের।” তার পরেই চিকিৎসক-কর্মী নিয়োগ এবং চিকিৎসা-সরঞ্জামের ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে নানান অসঙ্গতির দৃষ্টান্ত দেন তিনি। বলেন, “বছরের পর বছর এই অসঙ্গতি চলছে। যেখানে যে-চিকিৎসার সরঞ্জাম নেই, সেখানেও অবাধে সেই বিষয়ের ডাক্তার নিয়োগ চলছে। এমনকী বদলিও হচ্ছে এ ভাবেই।” শুধু জেলা নয়, খাস কলকাতারও বহু জায়গায় এমন অব্যবস্থা চলছে বলে জানান তিনি। তাঁর বক্তব্য, এই অনিয়মের ফলেই অনেক জায়গায় সাধারণ মানুষ সরকারি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আর ওই চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে কাজ করে চলেছেন।
রাজ্যের স্বাস্থ্য-নীতি সংক্রান্ত ওই আলোচনাসভায় বিশেষজ্ঞ কমিটির বেশ কিছু সুপারিশের কথা তুলে ধরা হয়।
• হাসপাতাল থেকে রোগী প্রত্যাখ্যান বন্ধ করতে ‘বেড-ব্যুরো’ চালু করা হোক।
• চাই ইমার্জেন্সি অবজার্ভেশন ওয়ার্ড।
• জেলায় আইটিইউ, আইসিইউ, ডায়ালিসিস ইউনিটের সংখ্যা বাড়ানো দরকার।
• হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ রাখতেই হবে।
• কাজে গতি আনতে চাই কর্মীদের পুরস্কৃত করার ব্যবস্থাও।
দক্ষ কর্মীদের জন্য কেন পুরস্কারের ব্যবস্থা করা দরকার, তার ব্যাখ্যায় সুব্রতবাবু। বলেন, “একই পরিকাঠামো নিয়ে দু’টি হাসপাতালে দু’রকম ছবি দেখা যাচ্ছে। শুধু কর্মীদের আন্তরিকতা ও তৎপরতা ফারাকে এটা হচ্ছে। যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা করলে রাজ্যে কর্মসংস্কৃতির ছবিটা অনেকটাই বদলাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।”
অনুষ্ঠানে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব সতীশ তিওয়ারিও উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠীর সুপারিশ মেনে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ এগিয়েছে। কর্মীদের মনোবল বাড়ানোর প্রচেষ্টাও চলছে। বছর দুয়েকের মধ্যে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর ছবি অনেকটাই উজ্জ্বল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। |