টিউশন থেকে বাড়ি ফেরার কথা ছিল দীপঙ্করের। তার পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটেছে, ফেরেনি দীপঙ্কর। মায়ের চোখ সরু গলি পেরিয়ে পাকা রাস্তা ধরে বড় রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকত, এই বোধহয় ফিরবে একমাত্র ছেলে। অবশেষে দীপঙ্কর ফিরবে বলে জানত পারলেন মা। কিন্তু সে কথা বলবে না। সে আরেক বার ডেকে বলবে না, ‘মা আমার খিদে পেয়েছে। খেতে দাও।” মা বুঝতে পেরেছেন, ছেলে ফিরবে অন্তিমশয্যায়। মঙ্গলবার বিকাল পার হয়ে তখন সন্ধ্যা।
শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে মাটিগাড়ার পতিরামজোতের ওই বাড়িতে শুধুই কান্নার রোল। সবিতাদেবী কখনও কাঁদছেন চিৎকার করে। কখনও সংজ্ঞাহীন। কখনও একা একা বলছেন, “কারও ক্ষতি করেনি। পরিবার নিয়ে বেঁচে ছিলাম। ছেলেটাকে কেড়ে নেওয়া হল কেন?”-উত্তর কারও ছিল না। প্রতিবেশীরা তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা করতে গিয়ে নিজেরাও কাঁদতে শুরু করেছেন। ছোট বোন পপি তো সকালেও দাদার মোবাইলে ফোন করার চেষ্টা করেছে। দুপুরে জেনেছে দাদাকে পাওয়া গিয়েছে। সে ফিরবে আর কিছুক্ষণ পরেই। বিকেলে জানতে পেরেছে দাদা নেই। তার কান্নায় গোটা বাড়িটাই বিষণ্ণ। শোকার্ত পড়শিরা পুলিশের সমালোচনা করেন। তাঁদের ক্ষোভ, “পুলিশ কেন মিথ্যা বলেছে? যারা মিথ্যে আশ্বাস দিয়েছেন তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।” |
দীপঙ্কর সরকার (১৫) তাঁর বাবা, মা, বোনের সঙ্গে সিকিমে থাকত। সিকিমের জোরথাং সিনিয়র সেকেন্ডারি হাইস্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ত। বছরে এক বার করে পরিবারের সঙ্গেই তাঁদের আদি বাড়ি পতিরামজোতে ঘুরতে আসত। এ বারেও এসেছিল। সবমসময় হাসিখুশি গোটা বাড়িটাকে মাতিয়ে রাখত সে। বাবা গোপালবাবু ভেবেছিলেন, স্কুলের ছুটিতে এখানেই কিছু দিন কোচিং নিয়ে পড়াশোনা করুক দীপঙ্কর। পড়াশোনাও হবে অন্য ভাইবোনদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবে। কিন্তু তা আর হল না। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায় বাগডোগরার কোচিং সেন্টারে রওনা হয় দীপঙ্কর। তার পরেই দুষ্কৃতীরা অপহরণ করে তাঁকে। মঙ্গলবার সকালে তাঁর দেহ পাওয়া যায় তিনধারিয়ার সিপাইধুরা বাগানে। দীপঙ্করের জ্যাঠা যোগেন্দ্রবাবু বলেন, “ওকে কেউ খুন করবে ভাবতে পারিনি। কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে দেখেনি। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে আনন্দে মেতে থাকত। খুনিদের কঠিন শাস্তির দাবি করছি।” |