এক কিশোরকে অপহরণ করে খুন করল দুষ্কৃতীরা। শিলিগুড়ির মাটিগাড়ার বাসিন্দা দীপঙ্কর সরকার (১৫) নামে ওই কিশোরের মুখও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার মাটিগাড়া থেকেই তাকে অপহরণ করা হয়েছিল। তারপরে দীপঙ্করেরই মোবাইল থেকে দুষ্কৃতীরা তার বাড়িতে ফোন করে ২০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চায়।
দীপঙ্করের বাড়ির লোকের দাবি, এর পরে পাঁচ দিন ধরে পুলিশ লাগাতার আশ্বাস দিয়ে গিয়েছে, ‘শীঘ্রই অপহরণকারীরা ধরা পড়বে’। কিন্তু অপহরণকারীরা কেউই ধরা পড়েনি। বরং মঙ্গলবার সকালে দীপঙ্করের কাকা চিত্তরঞ্জন সরকার ভাইপোর ক্ষতবিক্ষত দেহটি দেখতে পান সুকনার কাছে তিনধারিয়া চা বাগান এলাকায়। পরে পুলিশ সেই দেহ ময়নাতদন্ত করতে পাঠিয়েছে।
পুলিশ জানায়, দীপঙ্কর সিকিমের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল। তার বাবা গোপাল সরকার সিকিমেই সোনার দোকানে কাজ করেন।
|
দীপঙ্কর সরকার |
সম্প্রতি ছেলেকে নিয়ে মাটিগাড়ায় নিজেদের বাড়িতে যান। মুক্তিপণের ফোন পাওয়ার পরে রোজই মাটিগাড়ায় থানায় গিয়েছেন গোপালবাবু। এ দিন ছেলের দেহের পাশে দাঁড়িয়ে গোপালবাবু অভিযোগ করেন, “প্রথম দিকে থানার অফিসাররা দাবি করতেন, আমার ছেলে স্বেচ্ছায় পালিয়ে গিয়েছে। পরে মুক্তিপণ চেয়ে ফোন এলে তাঁরা তদন্তে নামেন।” তিনি জানান, পুলিশ তাঁকে বারবার আশ্বাস দিয়েছে, মোবাইলের সূত্র ধরেই তদন্তের কাজ এগোচ্ছে। অথচ ছেলেকে খুঁজতে যাচ্ছেন না কেন জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা অজুহাত দিতেন, গাড়ি নেই। তিনি বলেন, “এমনকী, আমার গাড়ি নিয়েও তদন্ত করেছে পুলিশ।”
গোপালবাবুর পাশে দাঁড়িয়ে পড়শিরা দাবি তোলেন, যে পুলিশ অফিসাররা তদন্তের নামে মিথ্যে আশ্বাস দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
পুলিশ কমিশনার আনন্দ কুমার অবশ্য দাবি করেছেন, যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই এই অপহরণ কাণ্ডের তদন্ত হয়েছে। তাঁর কথায়, “ওই ছাত্রকে কেন খুন করা হয়েছে, তা এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত চলছে।”
কিন্তু, পুলিশ কেন অভিযোগকারীর গাড়ি নিয়েই তদন্তে গিয়েছিল? শিলিগুড়ির অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার আভারু রবীন্দ্রনাথ জানান, এই বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
পুলিশ তদন্তে গাফিলতি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বিধায়ক কংগ্রেসের শঙ্কর মালাকার। তিনি বলেন, “তদন্তের নামে মিথ্যে আশ্বাস দিয়েছে যাঁরা, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। দ্রুত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করা না হলে আন্দোলনে নামা হবে।”
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, সম্প্রতি পারিবারিক জমি বিক্রি করে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা পান গোপালবাবু। সরকার পরিবারের দাবি, দুষ্কৃতীরা সেই টাকাই আদায় করতে চেয়েছিল। তবে পুলিশ তা এখনও মানতে রাজি নয়। |