মাঝে মধ্যে সূর্যের মুখ দেখা গিয়েছে। বাদবাকি সময়টা ঘন কুয়াশার চাদরে মুখ ঢেকেছে ‘কুইন অফ হিলস’। সেই চাদরের ছায়া ক্রমশ দীর্ঘ হয়ে যেন পড়েছে লাগোয়া সমতলের বিস্তীর্ণ এলাকায়। পাহাড় ও সমতলের কিছু এলাকায় দিনেও টুপ-টুপ করে হিম পড়েছে। কাঠকুটো কুড়িয়ে পাহাড়ি পথের ধারে আগুন ঘিরে বিক্রি হয়েছে মোমো, চাউমিন। এখন বরফ-কৌতুহলী কিছু পর্যটকের আনাগোনা রয়েছে। গ্যাংটক থেকে লাভা, রিমবিক থেকে মানেভঞ্জন, এই দীর্ঘ এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কয়েকশো পর্যটক যেন তুষারপাতের প্রার্থনায় মগ্ন।
সংক্ষেপে এটাই মঙ্গলবারের দার্জিলিং পাহাড় ও লাগোয়া সমতল এলাকার ছবি। |
হাড় কাঁপানো ঠান্ডা বাতাস বইলে কী হবে, তুষারপাত দেখার আগ্রহে যেন হাজারো কষ্ট সহ্য করতে রাজি বিরাটির সৌমেন রায় বা ঝাড়খণ্ডের বাবুরাম শর্মার নেতৃত্বে আসা তুষারপ্রেমীরা। কোনও দল মানেভঞ্জনের ছোট্ট হোটেলের কুঠুরিতে বসে। কেউ দার্জিলিঙের হোটেলে। সকাল-সন্ধে সান্দাকফুতে বরফ পড়ল কি না খোঁজ নিচ্ছেন ট্যুর অপারেটর সংগঠনের কাছ থেকে। ওই সংগঠনের সম্পাদক সাধন রায় বললেন, “কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, এমন চললে পাহাড়ে দু-চার দিনের মধ্যে বরফ পড়তে পারে। সে জন্য বেশ কিছু পর্যটক কনকনে ঠান্ডা সহ্য করেও পাহাড়ে অপেক্ষা করছেন। আমরা যথাসাধ্য তাঁদের সাহায্য করছি।”
গ্যাংটকে ক্যাম্প করে রয়েছেন ট্যুর অপারেটর সম্রাট সান্যাল। তিনি জানান, সেখানেও দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক তুষারপাতের অপেক্ষায় রয়েছেন। নাথু লা পাসে বরফ থাকলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত ছাঙ্গু লেকেও বরফ পড়েনি। সম্রাটবাবু বলেন, “সে দিক থেকে দেখলে আবহাওয়া প্রতিকূল। শীত উপভোগ করতে আগ্রহীর সংখ্যা বাড়ছে।” বস্তুত, ফি বছর দার্জিলিঙে তুষারপাত দেখার জন্য ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত দেশ-বিদেশের অনেক পর্যটকদের ভিড় হয়। জিটিএ চুক্তির পরে পাহাড়ের জনজীবন স্বাভাবিক হওয়ায় সেই ভিড় এ বছর অনেক বেড়েছে। হোটেল ব্যবসায়ীদের অনুমান, বর্তমানে পাহাড়ের অর্ধেক হোটেলেই পর্যটক রয়েছেন। ম্যাল চৌরাস্তায় কলকাতার বাঙালি পর্যটকের সংখ্যাও কম নয়। কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ের বাসিন্দা দার্জিলিংয়ের হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইন্সটিটিউটের কিউরেটর চন্দ্রনাথ দাস বললেন, “এত কনকনে ঠান্ডা সত্ত্বেও পাহাড়প্রেমীদের আনাগোনা বাড়ায় ভালই লাগছে। তবে সমতল থেকে আসা পর্যটকদের বাড়তি সাবধানতা নিতে হবে।” |
তবে কনকনে বাতাসের ধাক্কায় পাহাড়-ডুয়ার্সের অনেক পর্যটক বুকিং বাতিলও করে দিচ্ছেন। ডুয়ার্সের লাটাগুড়ি রিসর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কমল ভৌমিক বলেন, “জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়ায় পর্যটকদের সংখ্যা কমছে।” জলপাইগুড়ির এক পর্যটক সহায়তা কেন্দ্রের তাপস দে জানান, শৈত্যপ্রবাহ, ঘন কুয়াশার কারণে অনেক বুকিং বাতিল হয়ে গিয়েছে। গড়িয়া থেকে আসা কিছু পর্যটক শীতের ভয়ে ডুয়ার্স যাত্রা বাতিল করে দিঘা চলে গিয়েছেন।
নাছোড়বান্দা পর্যটকের সংখ্যাও অবশ্য কম নেই। মুর্শিদাবাদের ওমরপুরের তৈয়ব আলিরা ৫ জন সোমবার দার্জিলিঙে পৌঁছেছেন। টাইগার হিলে যাবেন বলে গাড়িও তৈরি। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, “৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে। তবে ফের আরও একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা উত্তরবঙ্গের আকাশে ঢুকতে পারে। তখন ফের তাপমাত্রা কমতে পারে। বৃষ্টিও হতে পারে। পরিস্থিতি তেমন হলে দার্জিলিং কিংবা সিকিমের বেশ কিছু এলাকায় তুষারপাতের সম্ভাবনাও রয়েছে।”
বরফ পড়ার আভাস অল্প হলেও আছে। সেই অপেক্ষাতেই হাড় কাঁপানো বাতাস সহ্য করছেন পাহাড়ের পর্যটকেরা।
|
কখন হয় তুষারপাত |
সাধারণত, পশ্চিমী ঝঞ্ঝা কিংবা মেঘ গিয়ে পাহাড়ে ধাক্কা দিলে বৃষ্টিপাত হয়। শীতকাল শুরু হতেই তাপমাত্রা কমে যায়। পাহাড় থেকে হিমেল হাওয়া নেমে আসে। এই দুইয়ের প্রভাবে উঁচু পর্বতশৃঙ্গ থেকে অপেক্ষাকৃত কম উঁচু শৃঙ্গ সর্বত্রই তাপমাত্রা শূন্য থেকে অনেকটাই কমে যায়। এই পরিস্থিতিতে খুব শক্তিশালী কোনও পশ্চিমী ঝঞ্ঝা অথবা মেঘ পাহাড়ে ধাক্কা দিলে বৃষ্টি শুরু হয়। উঁচু পর্বতচূড়ায় বৃষ্টির জল জমে বরফ হয়ে যায় এবং তুষারপাত শুরু হয়। |
• বিক্ষিপ্ত ভাবে ফি বছরই সান্দাকফুতে তুষারপাত হয়। টাইগার হিলেও বরফ পড়ে। ২০১০ -এ রেকর্ড তুষারপাত । |
মঙ্গলবারের তাপমাত্রা |
কালিম্পং |
৩ |
জলপাইগুড়ি |
৫ |
শিলিগুড়ি |
৫ |
রায়গঞ্জ |
৫ |
বাগডোগরা |
৬ |
কোচবিহার |
৭ |
মালদহ |
৭ |
বালুরঘাট |
৭ |
|
|