এক ব্যবসায়ীর ছেলের থেঁতলানো দেহ মিলল থানার ঠিক সামনে পুলিশকর্মীদেরই পরিত্যক্ত আবাসনে। এই ঘটনায় মানবাজার থানার পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার থানার সামনে এলাকার বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখান। পুরুলিয়া- মানবাজার রাস্তার কয়েকটি মোড়ে পথ অবরোধও করে উত্তেজিত জনতা। শেষ পর্যন্ত মানবাজার থানায় পুরুলিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ডেপুটি পুলিশ সুপার তদন্তে আসেন। পুলিশ কুকুরও তদন্তে নামানো হয়। এর পরে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহত যুবকের নাম পরেশনাথ দে (৩২)। বাড়ি মানবাজারের পোদ্দারপাড়ায়। তাঁর বাবা, গুরুপদ দে-র সোনা-রুপোর গয়নার দোকান আছে। রবিবার বিকেল থেকেই তাঁর ছোট ছেলে পরেশের খোঁজ মিলছিল না। |
থানার সামনে পুরুলিয়া-মানবাজার রাস্তার ওপাশে পুলিশকর্মীদের পরিত্যক্ত আবাসন রয়েছে। আগাছা ও ঝোপ-জঙ্গলে ভরা ওই ধসে পড়া আবাসনের ভিতরে মঙ্গলবার বেলা ১১টা নাগাদ নিখোঁজ পরেশের দেহ উদ্ধার হয়। তাঁর মুখ ও মাথা ইট দিয়ে থেঁতলানো ছিল। পুলিশ নিহতের পকেট থেকে সিগারেট লাইটার ও পানের মশলা পেয়েছে। পরেশের কাছে থাকা দু’টি দামি মোবাইল, হাতে দু’টি সোনার আংটি এবং গলায় রুপোর হারের সন্ধান মেলেনি। গুরুপদবাবু বলেন, “ছোট ছেলে আমার দোকানে মাঝেমধ্যে বসত। রবিবার রাত ৮টা অবধি ছেলে না ফেরায় দুশ্চিন্তা হচ্ছিল।” পুলিশের দাবি, গুরুপদবাবুর তাদের জানিয়েছেন, পরেশ মাদকাসক্ত ছিলেন। ইঞ্জেকশন নিয়ে
|
নিহত যুবক পরেশনাথ দে। —নিজস্ব চিত্র। |
নেশা করতেন। সম্প্রতি কলকাতায় ছেলের দীর্ঘ চিকিৎসা করিয়েছেন। পরেশ সুস্থ হয়ে ফিরে আসার পরে পুরনো কিছু সঙ্গী তাঁর সঙ্গে ফের মেলামেশা শুরু করে বলেও পুলিশকে জানিয়েছেন গুরুপদবাবু। নিহত যুবকের দাদা পার্থ দে অভিযোগ করেন, “রবিবার রাতে ও সোমবার থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়ার সময় নিখোঁজের ঘটনায় নির্দিষ্ট কয়েক জনের নাম বলেছিলাম। পুলিশ একটু তৎপর হলে সোমবারই হয়তো ভাইকে ফিরে পেতাম। এ ভাবে ওকে হারাতে হত না!” পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে এ দিন মানবাজার থানার সামনে বিক্ষোভ দেখান কয়েকশো বাসিন্দা। পোদ্দারপাড়ার মোড় ও থানার সামনের রাস্তা অবরোধও করেন। তার জেরে মানবাজার থেকে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়াগামী বাস চলাচল ব্যাহত হয়। ব্যবসায়ী সমিতির মুখপাত্র আনন্দময় সেন-ও বলেন, “পুলিশ সোমবার একটু সক্রিয় হলে ওই দিনই পরেশকে খুঁজে পাওয়া যেত।” বাসিন্দাদের দাবি মেনে এ দিন বিকেলে আদ্রা থেকে রেল পুলিশের তদন্ত-কুকুর আনা হয়। কুকুরটি নিহতের দেহ, পড়ে থাকা রক্ত ও এক পাটি জুতো শুঁকে মানবাজার শহরের উপর দিয়ে ছুটে ইন্দকুড়িতে একটি বাড়ির ভিতর ঢুকে বারান্দায় বসে পড়ে। সেখান থেকে বেরিয়ে কুকুর গেল একটি পুকুরের কাছে। খানিকক্ষণ ঘোরাঘুরি করে সেটি ফের ওই বারান্দায় গিয়ে বসে। কার্যত গোটা মানবাজার কুকুরের পিছু নিয়েছিল। এক পুলিশ কর্তার কথায়, “তদন্তে ওই কুকুর অনেকটাই কাজে আসবে। আমরা ওর প্রশিক্ষকের সঙ্গে বিশদে কথা বলছি।”
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের ধারণা আততায়ীরা রবিবার রাতে পরেশকে কোথাও লুকিয়ে রেখেছিল। সোমবার রাতে তাঁকে খুন করা হয়। সম্ভবত ইঞ্জেকশন দিয়ে পরেশকে সংজ্ঞাহীন করে মাথায় কাঠের চেলা ও ইট দিয়ে থেঁতলে মারা হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট মেলার পরেই এটা স্পষ্ট হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ দিন বিকেলে মানবাজার থানায় জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অবধেশ পাঠক, ডেপুটি পুলিশ সুপার (ডিইবি) শেখ মহম্মদ আজিম এবং সিআই (মানবাজার) প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে গুরুপদবাবুরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে বলেন, পুলিশের নাকের ডগায় মাদক কারবার চললেও পুলিশ তা রুখতে তৎপর হয়নি। পুলিশকর্তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থার আশ্বাস দেন। তাঁদের অনুরোধে এর পর থানার সামনে থেকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। জেলার পুলিশ সুপার সি সুধাকর অবশ্য বলেন, “পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ঠিক নয়। নিখোঁজ ডায়েরি মেলার পরে পরেশবাবুর মোবাইল ট্র্যাক করা হয়েছে।” খুব শীঘ্রই দোষীরা ধরা পড়বে বলে তাঁর আশ্বাস। |