ঘণ্টায় ৮০-৯০ মাইল বেগে ধাবমান উড়ন্ত দুটি মাটির পায়রাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়াটাই নেশা সোহিনীর। আর লক্ষ্য, শ্যুটার হয়ে রাজ্যবর্ধন সিংহ রাঠোরের মতো অলিম্পিকে পদক জয়। সে পথে এগিয়েই এ বার ডাবল ট্র্যাপ ক্লে পিজিয়ন শ্যুটিংয়ের জাতীয় প্রতিযোগিতায় রানার্স হয়েছে হলদিয়া উপনগরীর কিশোরী সোহিনী মাইতি। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের ধারিন্দা এলাকায় আদত বাড়ি তাদের।
হলদিয়া কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী সোহিনী বরাবরই মেধাবী ছাত্রী। পড়াশোনার সঙ্গেই গত তিন বছর ধরে ডবল ট্র্যাপ শ্যুটিং অনুশীলন করছে সে। সোহিনীর বাবা অচিন্ত্য মাইতি ডাবল ট্র্যাপ শ্যুটিংয়ে সিনিয়র বিভাগে ইস্টার্ন ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় ২০০৯ সালে চতুর্থ হয়ছিলেন। বাবার মতোই মেদিনীপুর রাইফেল ক্লাবের সদস্য সোহিনী। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান পেয়েছিল সে। তারপর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি নিয়ে প্রতিযোগিতায়ও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে সোহিনী। গত নভেম্বরে দিল্লিতে ডাবল ট্র্যাপ শ্যুটিংয়ের প্রি-ন্যাশনাল প্রতিযোগিতায় যোগ্যতা অর্জন করে ডিসেম্বর মাসে যোগ দেয় ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে। |
পদক হাতে বিজয়িনী। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস। |
গত ডিসেম্বর মাসে দিল্লির তুঘলকাবাদ স্টেডিয়ামের কারনি সিং শ্যুটিং রেঞ্জে ৫৬তম ডাবল ট্র্যাপ শু্যটিং প্রতিযোগিতার ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে জুনিয়র মহিলা বিভাগের ফাইনালে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে সোহিনী। প্রতিযোগিতায় প্রথম হয় হরিয়ানার মল্লিকা উইগ, আর তৃতীয় হয় তামিলনাড়ুর এন নিবেদিতা।
সোহিনীর মা অপর্ণা মাইতি বলেন, “তিন বছর আগে ওর বাবা যখন ডাবল ট্র্যাপ শ্যুটিংয়ে সাফল্য পেল, তখন থেকেই মেয়েরও শ্যুটিংয়ে আগ্রহ বাড়ল। সেই থেকে মেয়ের নেশা ডাবল ট্র্যাপ শ্যুটিং। এ বার জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার সময় মাত্র এক মাস অনুশীলনের সুযোগ পেয়েছিল মেয়ে। তাতেই দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে। নিয়মিত অনুশীলনের সুযোগ পেলে ও আরও সফল হবে বলেই আশা করি।”
আর সোহিনী বলে, “বাবাই আমার অনুপ্রেরণা। আমার লক্ষ্য শু্যটার হয়ে দেশের হয়ে অলিম্পিকে যোগ দিয়ে পদক জয় করা।” তবে মেয়ের সাফল্যে উৎসাহিত অচিন্ত্যবাবুর একটাই আক্ষেপ, “পঞ্জাব, হরিয়ানা, তামিলনাড়ুতে থাকলেও এ রাজ্যে এখনও ডাবল ট্র্যাপ অনুশীলনের স্থায়ী শু্যটিং রেঞ্জ নেই। ফলে ইচ্ছে থাকলেও নিয়মিত অনুশীলন করা যায় না।” আপাতত, মেদিনীপুর রাইফেল ক্লাবের অস্থায়ী শু্যটিং রেঞ্জে অনুশীলন আর বাড়িতে বাবার দেওয়া টিপস অনুসরণ করেই স্বপ্নজয়ের চেষ্টায় সোহিনী। |