নিজস্ব সংবাদদাতা • বর্ধমান |
খেতাব এল ১৮ বছর পরে, তবে তাতে কাঁটা হয়ে রইল পেনাল্টি-বিতর্ক। সর্বভারতীয় আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবলে সেমিফাইনালের পরে ফাইনালেও বর্ধমানের জয়কে তাড়া করল রেফারির সিদ্ধান্ত।
মঙ্গলবার বর্ধমানের মোহনবাগান মাঠে খেলার শেষলগ্নে বর্ধমানের পক্ষে দেওয়া পেনাল্টি নিয়ে তৈরি হল বিতর্ক। রেফারির সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ কেরল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবলারেরা মাঠ ছাড়েন। তার পরেই শুরু হয়ে যায় বিশৃঙ্খলা। দর্শকেরা মাঠে নেমে দাপাদাপি শুরু করে দেন। ফলে আধ ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকে। তার পরে খেলা শুরু হলে বর্ধমানের হয়ে পেনাল্টি শট নেন দীপায়ন সামন্ত। তার শট গোলরক্ষক প্রতিহত করলে ফিরতি বল জালে জড়িয়ে ট্রফি নিশ্চিত করেন বর্ধমানের লেফটব্যাক শান্তনু সরকার। |
মোহনবাগান মাঠে ফাইনালের একটি মুহূর্ত। |
মাঠে উপস্থিত দর্শকদের বিচারে এ দিনের খেলা অবশ্য তেমন দৃষ্টিনন্দন হয়নি। বর্ধমানের টিডি রথীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, “আজ আমাদের দল দারুণ খেলেছে। সারা ম্যাচে অন্তত চারটে গোল পাওয়ার কথা। ম্যাচের ১৫ ও ৪৫ মিনিটে অনিল ও বিবেকানন্দ নিশ্চিত সুযোগ নষ্ট না করলে পেনাল্টি পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হত না। বলও বেশির ভাগ সময়ই আমাদের দখলে ছিল। তাই যোগ্য দল হিসেবেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছি।”
বর্ধমান এর আগে চার বার এই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ১৯৭৪, ’৮৪, ’৮৬ ও ’৯৫ সালে এই খেতাব এসেছিল। ১৯৮২ ও ’৮৮-তে রানার্স হয় বর্ধমান। তৃতীয় হয়েছিল ১৯৮৩ ও ১৯৯২ সালে। তবে পূর্বাঞ্চল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ১১ বার। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোচ ছিলেন রথীনবাবু। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস অফিসার পদ থেকে অবসর নেওয়া এই কোচকে এ বার প্রতিযোগিতার আগে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর করে ফিরিয়ে আনা হয়। এ দিন খেলা শেষে রথীনবাবু বলেন, “আমি এ বার সমস্ত ধরনের কোচিং থেকেই অবসর নিলাম। ৭১ বছর বয়সে আর উৎকণ্ঠা সহ্য হয় না। এই প্রতিযোগিতার জন্য রাতে ঘুমোতে পারছিলাম না। অনেক দিন পরে আজ নিশ্চিন্তে ঘুমোব।” |
পেনাল্টির সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ কেরলের খেলোয়াড়েরা। |
মাঠের গোলমালে অবশ্য খানিকটা ফিকে হয়ে গিয়েছে বর্ধমানের এ দিনের জয়। খেতাবের সঙ্গে জড়িয়ে গেল পক্ষপাতদুষ্ট রেফারিংয়ের অভিযোগ। এ দিন অন্তিম লগ্নে পেনাল্টি বক্সে কেরলের স্টপার আসিফের পায়ে লেগে ছিটকে ওঠা বল তাঁর হাত স্পর্শ করলে রেফারি পেনাল্টি দেন। ক্ষুব্ধ কেরল কোচ সাধীভান গোলাম জানিয়ে দেন, তাঁরা খেলবেন না। এর পরেই দর্শকেরা মাঠের চারপাশে চেয়ার ছোড়াছুড়ি করলেন। অনেক দর্শকই পেনাল্টির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি তোলেন। তাঁদের বাধায় বারবার চেষ্টা করেও ম্যাচ শুরু করতে পারলেন না রেফারি অনিমেষ বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে খেলতে রাজি হয় কেরল দল। |
জয়ের পরে উল্লাস বর্ধমানের খেলোয়াড়দের। |
ম্যাচ শেষে পুরস্কারের বন্যা বর্ধমানের খেলোয়াড়দের জন্য। প্রতিটি ফুটবলারকে পূর্বাঞ্চল ও সবর্ভারতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য আলাদা ভাবে অর্থ পুরস্কারের কথা ঘোষণা করা হয়। টিডি রথীনবাবু, দুই কোচ কাজী নুরুল হুদা ও সাগর পাত্র, ম্যানেজার রঘুনাথ ঘোষকে সম্মানিত করার কথাও ঘোষণা করা হয়।
তবে এ দিন দর্শকদের আচরণে বিস্মিত বর্ধমানের সমস্ত কর্মকর্তা। তাঁদের অনেকেরই দাবি, অনিল কিস্কুকে বক্সে ফাউল করা সত্ত্বেও পেনাল্টি দেননি রেফারি। পরে হ্যান্ডবলের ক্ষেত্রে পেনাল্টি দিলেন। কিন্তু তাতে দর্শকেরা কেন খেপে উঠলেন, তা তাঁদের বোধগম্য হচ্ছে না।
|