মাঠে তাঁদের সম্মুখসমরের কথা সর্বজনবিদিত। ‘এল ক্লাসিকো’র আবহই তো সৃষ্টি হয়, দুই মহাতারকার যুদ্ধকে ঘিরে।
কিন্তু মাঠের বাইরেও যে দু’জন দু’জনের জন্য এমন ‘ট্যাকটিকাল মুভ’ সাজান, পুরস্কার পকেটস্থ করতে দুঁদে কূটনৈতিকে পাল্টে যান, কে জানত!
এঁরা কারাআন্দাজ করা কঠিন নয়। লিওনেল মেসি এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। আর মাঠের বাইরের এমন যুদ্ধের প্রেক্ষাপট? জুরিখের ব্যালন ডি’অরের মঞ্চ।
যে ‘মুভ’ রাতারাতি ফাঁস হয়ে গিয়ে দুই মহাতারকাকেই বসিয়ে দিয়েছে বিতর্কের টেবলে। লিওনেল মেসির পরপর চার বার ব্যালন ডি’অর জয়ের মহাকীর্তির পাশাপাশি জোর আলোচনাজুরিখের লাল গালিচায় রোনাল্ডো যতই চিরশত্রুর সামনে নিজেকে ‘বিনয়ের’ মোড়কে পেশ করুন না কেন, ভেতরে ভেতরে মেসিকে হারাতে তিনি যে কতটা উঠেপড়ে লেগেছিলেন তা পর্তুগিজ মহাতারকার কীর্তিকলাপেই স্পষ্ট!
ঘটনাটা কী?
ব্যালন ডি’অর নির্বাচনে বিশ্বের সমস্ত ফুটবলখেলিয়ে দেশের কোচ, কিছু নির্বাচিত সাংবাদিকদের সঙ্গে অধিনায়কদেরও ভোটাধিকার থাকে। কিন্তু সেই অধিনায়ক নিজেই ব্যালন ডি’অরের প্রতিযোগী হলে, নিজেকে আর ভোট দেওয়ার উপায় থাকে না। রোনাল্ডোও অধিনায়ক ছিলেন। পর্তুগালের। কিন্তু বিশ্বজুড়ে ধারণাটা হচ্ছেরোনাল্ডো অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিয়েছেন স্রেফ বাড়তি ভোট আদায়ের জন্য!
অধিনায়কত্বের মুকুট দিয়ে দিয়েছেন ব্রুনো আলভেজকে। যাতে পর্তু্গাল অধিনায়কের ভোটও তাঁরই নামে পড়ে! রোনাল্ডো অধিনায়ক থাকলে যার কোনও উপায় ছিল না। ব্রুনো আলভেজ ভোট দিলেন রোনাল্ডো, ফালকাও ও রবিন ফান পার্সিকে। কোথাও মেসি নেই।
এবং পাল্টা উত্তরে আর্জেন্তিনীয় মহাতারকাও যে কম যান না, সেটাও পরিষ্কার হয়েছে একটু পরে। আর্জেন্তিনা অধিনায়ক হওয়ার সুবাদে মেসি তিন জনকে ভোট দেন। তাঁরাইনিয়েস্তা, জাভি এবং সের্জিও আগুয়েরো। ব্যালন ডি’অরের অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী ইনিয়েস্তার হয়ে মেসির ভোট পড়েছে। কিন্তু রোনাল্ডো বাদ। তবে ‘কেন মেসি রোনাল্ডোকে ভোট দিলেন না’ জাতীয় বিতর্ক অনেকটাই ঢাকা পড়ে যাচ্ছে তাঁর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর কীর্তিতে।
‘সিআরসেভেন’ বরাবরই বলে আসছিলেন, নিজেকে ভোট দেওয়ার অধিকার থাকলে তিনি সেটাই করতেন। এবং মেসি চতুর্থ বারের জন্য ব্যালন ডি’অর জেতার পর তাঁর মানসিক অবস্থা কী দাঁড়িয়েছে, সেটাও বোঝা গিয়েছে টুইটারে পোস্ট করা তাঁর ছবি থেকে। যন্ত্রণায় বেঁকেচুরে গিয়েছে মুখ। চোখে অবিশ্বাসের আঁকিবুকি। রোনাল্ডো বলেও ফেলেছেন, “আমি যা আছি, তাই থাকব। ব্যালন ডি’অর নিশ্চয়ই আমার জীবন-মৃত্যু ঠিক করবে না।” নিজে বারবার বলে এসেছিলেন, “আর কিছু নয়, জুরিখে যেন ন্যায়-বিচার পাই।” কিন্তু পুরস্কার তিনি পাননি। যা দেখেশুনে রিয়াল মাদ্রিদ কোচ হোসে মোরিনহোর ক্ষোভ, “মেসি লা লিগা জিতল না, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতল না, তবু কী করে ব্যালন ডি’অর জিতল বুঝিয়ে বলবেন?” |
মাঝখানে ইনিয়েস্তা-প্রাচীর। তবু ফিফার অনুষ্ঠানে কাছাকাছি
মেসি-রোনাল্ডো। যদিও বাস্তবে দূরত্ব সহস্র যোজন। |
মেসি নিজে মহাকীর্তি নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের আবেগের রাস্তায় হাঁটেননি। বরং তাঁর মনে হচ্ছে, এমন কৃতিত্বের কোনও মানেই থাকবে না যদি বার্সেলোনাকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, লা লিগা না জেতাতে পারেন মেসি। যদি রিয়াল মাদ্রিদকে চুপ করাতে না পারেন। “টিমের সাফল্যই আসল। এ সব কীর্তির কোনও মানেই থাকবে না ক্লাবকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, লা লিগা না জেতাতে পারলে,” বলেছেন মেসি।
কিন্তু তিনি যে রেকর্ড করেছেন, তা তো আজ পর্যন্ত কারও ছুঁয়ে দেখার ভাগ্য হয়নি। মিশেল প্লাতিনি পরপর তিন বার ব্যালন ডি’অর পেয়েছিলেন। ইয়োহান ক্রুয়েফ চার বছরে পেয়েছেন তিন বার, মার্কো ফান বাস্তেন পাঁচ বছরে তিন। ব্রাজিলের রোনাল্ডো, ফ্রান্সের জিদানও পেয়েছেন তিন বার করে। ডি’স্টিফানো জিতেছেন দু’বার। কিন্তু কেউ মেসি হতে পারেননি। পারেননি চারে চার করার স্বপ্নের পাটাতনে উঠে আসতে।
আর ক’টা এখনও বাকি আছে? শুনে সলজ্জ মেসির উত্তর, “সত্যি জানি না। এ বারেরটা জিতেছি, সেটা নিয়েই আমি তৃপ্ত। আসলে ব্যালন ডি’অর জিতব ধরে তো কেউ পুরস্কার মঞ্চে ঢোকে না। আমি এই সাফল্য ভাগ করে নিতে চাই বার্সেলোনা সতীর্থদের সঙ্গে। ইনিয়েস্তার সঙ্গে। ওর সঙ্গে একসঙ্গে ট্রেনিং করাটাও চরম সৌভাগ্যের ব্যাপার।”
|
• এক ক্যালেন্ডার বছরে সর্বোচ্চ গোল ৯১
• এক মরসুমে সর্বোচ্চ গোল ৬৮
• ইউরোপিয়ান কাপ মরসুমে সর্বোচ্চ গোল ১৪
• লা লিগার এক মরসুমে সর্বোচ্চ গোল ৫০
• লা লিগার এক মরসুমে সর্বোচ্চ হ্যাটট্রিক ৮
• ইউরোপিয়ান কাপে সর্বোচ্চ গোলদাতার
পুরস্কার ৪ বার (গার্ড মুলারের সঙ্গে)
|
• ইউরোপিয়ান কাপে ম্যাচে সর্বোচ্চ গোল ৫
• স্প্যানিশ সুপার কাপে সর্বোচ্চ গোল ১০
• লা লিগায় পরপর ম্যাচে গোলের রেকর্ড ১০
• বিশ্ব ক্লাব কাপে সর্বোচ্চ গোল ৪ (ডেনিলসনের সঙ্গে)
• বার্সেলোনার ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোল ২৮৬
• চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বার্সেলোনার হয়ে সর্বোচ্চ গোল ৫৬
• লা লিগায় সবচেয়ে বেশি হ্যাটট্রিক ১৫ |
|
কার ভোট কার বাক্সে |
লিওনেল মেসি
পছন্দ ১ ইনিয়েস্তা, পছন্দ ২ জাভি, পছন্দ ৩ আগেরো
|
তারকা অধিনায়কদের ভোট |
থিয়াগো (ব্রাজিল): মেসি
জেরার (ইংল্যান্ড): মেসি
লরিস (ফ্রান্স): কাসিয়াস
লাম (জার্মানি): ইনিয়েস্তা |
বুফোঁ (ইতালি): পির্লো
স্নাইডার (নেদারল্যান্ডস): ফান পার্সি
আলভেজ (পর্তুগাল): রোনাল্ডো
কাসিয়াস (স্পেন): রামোস
লুগানো (উরুগুয়ে): মেসি |
|
তারকা কোচদের ভোট |
মেনজেস (ব্রাজিল): রোনাল্ডো
হজসন (ইংল্যান্ড): মেসি
দেশঁ (ফ্রান্স): মেসি
লো (জার্মানি): ওজিল
প্রান্দেলি (ইতালি): পির্লো |
ফান গল (নেদারল্যান্ডস): মেসি
বেন্টো (পর্তুগাল): রোনাল্ডো
দেল বস্কি (স্পেন): কাসিয়াস
তাবারেজ (উরুগুয়ে): মেসি |
|
সুনীল ছেত্রী
পছন্দ ১ ইনিয়েস্তা, পছন্দ ২ মেসি, পছন্দ ৩ রোনাল্ডো
|
উইম কোভারম্যান্স
পছন্দ ১ ইনিয়েস্তা, পছন্দ ২ মেসি, পছন্দ ৩ রোনাল্ডো |
|
আন্দ্রে ইনিয়েস্তা
জানতাম মেসি এবারও খেতাবটা পাবে। ও যেরকম ফর্মে রয়েছে, আগামী এক বছরও এমনই ফর্মে থাকবে বলেই মনে হয়। তা হলে পঞ্চমবার বিশ্বসেরার খেতাব পেলে অবাক হব না।
হোসে মোরিনহো
কেমন করে মেসিকে ব্যালন ডি’অর দেওয়া হল জানি না। ও তো লা লিগাও জেতেনি, চ্যাম্পিয়ন্স লিগও জেতেনি। তার পরও মেসি কী করে বিশ্বসেরা ফুটবলারের খেতাব পায়?
সুনীল ছেত্রী
আমি ইনিয়েস্তাকে ভোট দিয়েছিলাম ঠিকই। কিন্তু আমার মনেই হয়েছিল যে, মেসিই শেষ পর্যন্ত খেতাবটা জিতবে। এ জন্য আমার বিন্দুমাত্র আফসোস নেই, বরং আমি বেশ খুশি। কারণ, আমি মেসির ফ্যান, বার্সেলোনারও ফ্যান।
লুই সাহা
মেসি যা শুরু করেছে, তাতে তো দেখছি এবার ওর জন্যই একটা আলাদা ট্রফি চালু করতে হবে ফিফাকে। মেসিই শুধু ওটা পাবে। অন্যদের জন্য ব্যালন ডি’অর।
দানি আলভেজ
মেসি যত দিন খেলবে, তত দিন বাকিদের জন্য ব্যালন ডি’অরের কোনও মানেই রইল না। |