নয়াবাজারে জঞ্জাল সাফাই নিয়ে ‘গড়িমসি’, ক্ষোভ |
সৌমিত্র কুণ্ডু • শিলিগুড়ি |
সকাল ৮ টার পর থেকেই কর্মব্যস্ত হয়ে পড়ে শিলিগুড়ির নয়াবাজার এলাকা। আর আবর্জনা তুলতে পুরসভার গাড়ি যায় বেলা ১০ টা, সাড়ে ১০ টা নাগাদ। সে কারণে অনেক ক্ষেত্রেই আবর্জনা তোলা সম্ভব হয় না। দিনভর সেগুলি ওয়ার্ডে পড়ে থাকছে।
সমস্যা নিয়ে পুরসভার মাসিক সভাতেও প্রশ্ন তুলেছেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শালিনী ডালমিয়া। সমস্যা কিন্তু মেটেনি। ওয়ার্ডে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট চালু হয়নি পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে। মেয়র পারিষদ সঞ্জয় পাঠকের এই ওয়ার্ডে ১৬ জন সাফাই কর্মী। তিনি জানান, ১৫ বছর আগে থেকেই ওই কর্মী রয়েছে। কর্মী কম থাকায় এমনিতেই সাফাইয়ের কাজে সমস্যা হচ্ছে। সে কারণে বাড়ি থেকে আবর্জনা সংগ্রহের সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পে সরঞ্জাম, ট্রাই সাইকেল ভ্যান তাঁর ওয়ার্ডে দেওয়া হলেও তিনি সেই কাজ সঠিকভাবে শুরু করতে পারছেন না। ঠিক মতো সাফাই হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে অন্য ওয়ার্ডের বাসিন্দাদেরও। তাঁরা জানিয়েছেন, দুপুর গড়িয়ে গেলেও ওয়ার্ডে বিভিন্ন জায়গায় আবর্জনা স্তূপাকারে জমে থাকে। সময় মতো সেগুলি সাফ হয় না। সাফাইয়ের কাজে কর্মীর সমস্যা মেটাতে আগে পুর কর্তৃপক্ষ শ্রম দিবস হিসাবে ৪৫ লক্ষ টাকা মাসে খরচ করতেন। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ লক্ষতে। অথচ পরিষেবার মান পড়ে রয়েছে সেই তিমিরেই।
পুরসভা সূত্রেই জানা গিয়েছে, ওয়ার্ডের আবর্জনা নির্দিষ্ট জায়গায় জমা করার ঢাকনা দেওয়া বিশেষ গাড়ি এবং ‘ডাম্পার’ মিলিয়ে ৭০টি নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। ওয়ার্ডগুলিতে সাফাই কর্মী পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ তুলেছেন ক্ষমতাসীন কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের কাউন্সিলরদের অনেকেই। আবর্জনা নেওয়ার ‘ভ্যান’ গাড়ি অনেক ওয়ার্ডে জং ধরে নষ্ট হয়ে রয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ। পরিবর্তে নতুন গাড়ি না-মেলায় সাফাইয়ের কাজে সমস্যার কথা জানিয়েছেন তাঁরা। সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদ দুলাল দত্ত বলেন, “ওয়ার্ডের আবর্জনা ডাম্পিং গ্রাউন্ডে নিয়ে যাওয়ার কাজে কিছু সমস্যা হচ্ছিল। বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে তা করানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। পরিষেবার মান উন্নয়নের জন্য এই সিদ্ধান্ত।” তা ছাড়া আবর্জনা নিতে নতুন অত্যাধুনিক গাড়ি, ট্রাইসাইকেল ভ্যান কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানান।
পুরসভা সূত্রেই জানা গিয়েছে, মাসে প্রায় ৯৬৫০ শ্রম দিবস প্রয়োজন হচ্ছে পুর এলাকার সাফাই পরিষেবার কাজে। অথচ বছরখানেক আগেও সাড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার শ্রম দিবসেই কাজ হত। অতিরিক্ত শ্রম দিবস বরাদ্দ করা হলেও পরিষেবার মান উন্নত হয়নি কেন? ওয়ার্ডে সাফাই কর্মীর সমস্যা রয়েছে কেন? মেয়র পারিষদের দাবি, আগে ডিআই ফান্ড মার্কেটে অন্য সংস্থাকে বরাত দিয়ে সাফাইয়ের পরিষেবা দেওয়া হত। তারা ঠিক মতো কাজ না করায় এখন পুরসভার কর্মীরাই পরিষেবা দিচ্ছে। নিয়ন্ত্রিত বাজারের পরিষেবা উন্নত করার জন্য বেশি কর্মী লাগাতে হয়েছে। শুধুমাত্র ১ নম্বর বরোতেই গত এক বছরে ২৫ কিলোমিটার নর্দমা তৈরি হয়েছে। সে সব সাফাইয়ের দায়িত্ব পূর্ত বিভাগের উপর থাকলেও এখন পুরসভাকে দেখতে হচ্ছে। তা ছাড়া স্থায়ী সাফাই কর্মীদের কেউ অবসর নিলে তাঁর বদলে শ্রম দিবসের মাধ্যমে লোক নিয়ে পরিস্থিতি সামলাতে হচ্ছে। সে কারণে শ্রম দিবস বেড়েছে। সঞ্জয়বাবু, শালিনীদেবী-সহ ২৫ নম্বরের কাউন্সিলর সীমা সাহা, ২৮ নম্বরের শর্মিলা দাস সকলেরই অভিযোগ, ওয়ার্ড অনুপাতে সাফাই কর্মী কম। দুলালবাবু জানান, নয়া বাজার এলাকায় সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ভিড় হয় বলে ওয়ার্ডের আবর্জনা বর্ধমান রোডের ধারে জমা করতে বলা হয়েছিল। শালিনী দেবী সে ব্যাপারে সহযোগিতা করছেন না। |