হাতি তাড়াতে পটকা, ভয়ে ইষ্টনাম জপল লালগড়বাসী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • লালগড় |
সোমবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ আচমকা পর পর বাজি-পটকা ফাটার আওয়াজ আর হই হট্টগোলে চমকে ওঠেন লালগড়বাসী। মাওবাদী-কমিটির ‘হিংসা-আন্দোলনের ধাত্রীভূমিতে’ এমন হট্টগোল আগেও শুনেছেন যে এলাকাবাসী!
ঘরে তটস্থ হয়ে ইষ্টনাম জপছিলেন বাবুপাড়ার বধূ অনিমারানি সাহসরায় ও কলেজ পড়ুয়া অনন্যা মণ্ডলের মতো লালগড় ব্লক-সদরের অনেকেই। ততক্ষণে, পডিহা ও নতুনডির জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসা পালটি বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে লালগড় ব্লক-সদরের আনাচে কানাচেতে ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিপূর্বে হাতিরা জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলিতে হানা দিলেও লালগড় ব্লক-সদরে হাতির ঢোকার ঘটনা বিরল বলেই মানছেন বন দফতর ও বাসিন্দারা। |
লোকালয়ে খাবারের সন্ধানে হানা দিয়েছিল দলমার গোটা ৫০টি বুনো হাতির পাল। গ্রামবাসী জানাচ্ছেন, তিন চারটি দলে ভাগ হয়ে হাতিরা ঢোকে। লালগড় ব্লক অফিসের পিছনে বনমালী আশ্রম লাগোয়া জমিতে ঢুকে পড়ে তিনটি শাবক সহ গোটা পাঁচেক হাতি। আলুচাষের ব্যাপক ক্ষতি করে হাতিরা। এলাকাবাসী পটকা ফাটিয়ে ও হুলা জ্বালিয়ে তাড়া করলে হাতিগুলি রাজবাঁধের পাড়ে ভবতারিণী মন্দির প্রাঙ্গণের কলাগাছ, ফুলগাছ ও চাষের আলুগাছ খেয়ে ও উপড়ে নষ্ট করে দেয়। ফের তাড়া খেয়ে হাতিরা এরপর সুজয় সিংহরায়ের সব্জিবাগানে হানা দেয়। বাগানের বেগুন, টমেটো, লাউ, কুমড়ো, মটরশুটি ও নানা রকম শাক খেয়ে ও মাড়িয়ে নষ্ট করে হাতিরা। এরপর আরও কিছু হাতি মিলে লালগড়ের আখড়াগোড়া-চালকপাড়াতে হানা দেয়। সেখানে দিনমজুর দুলাল চালকের ইঁটের গাঁথনির দেওয়াল ভেঙে ধানের বস্তা টেনে বার করে খেয়ে নেয় কয়েকটি হাতি। বাকি হাতিগুলি বাবলু চালকের ঘরের দরজা ভেঙে মজুত ধান খেয়ে সাফ করে দেয়। চুনপাড়া যাওয়ার পথে খেজুর গাছে লাগানো রস সংগ্রহের হাঁড়িগুলি ভেঙে রস খেয়ে নেয় হাতিগুলি। লালগড়ের স্কুল মাঠের কাছে মধু চালকের ঘরের উঠোনে মজুত ধানের গাদাও তছনছ করে হাতিরা। চুনপাড়ায় চারটি মাটির বাড়ি ভাঙচুর করে হাতিরা। লালগড়ের লাগোয়া বাঁধগোড়াতেও হানা দেয় হাতিরা। এরপর বাঘাকুলি, আমডাঙা, আমলিয়া, স্বরূপনারায়ণপুর গ্রামেও হামালা চালায় হাতিরা। হাতির অন্য দলগুলি লালগড়ের রাঙামেটিয়া, তাড়কি, বনিশোল, করমশোল এবং শালবনির কন্যাবালি, পিন্ড্রাকুলি, হাতিমারা, হাতিলোট, রামেশ্বরপুর ও মথুরাপুর গ্রামেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। বন দফতর সূত্রের বক্তব্য, এখনও পর্যন্ত ২০টি বাড়ি ভেঙেছে হাতিরা। প্রায় দু’শো বিঘে জমির সব্জিচাষের ক্ষতি হয়েছে। গৃহস্থের বাড়ির উঠোনে মজুত ১৮টি ধানগাদা খেয়ে ও ছড়িয়ে শেষ করে দিয়েছে হাতিরা। নয়াগ্রাম থেকে আসা হাতির পালের ওই ৫০-৬০ টি হাতি লালগড় রেঞ্জের জঙ্গলে থাকছে।
লালগড়ের রেঞ্জ অফিসার অমিয়ময় দে বলেন, “হাতিগুলিকে দলমার রুটে মালাবতির জঙ্গলের দিকে পাঠানোর চেষ্টা হচ্ছে।” |