হুটার আর লালবাতি লাগানো গাড়ি। তাতে সওয়ার ‘পুলিশের ডেপুটি কমিশনার’ এবং এক ‘সিআইডি ইনস্পেক্টর’। চলন বলন দেখে ঘুণাক্ষরেও সন্দেহ করেননি কেউ। উল্টে, চাকরির আশায় তাঁদের হাতেই লাখ লাখ টাকা তুলে দিয়েছিলেন জনা আষ্টেক বেকার যুবক। তাঁদের মধ্যে দুই যুবককে ‘পুলিশের পোশাক’, ‘পরিচয়পত্র’ ও ‘ব্যাজ’ দেওয়া হয়। গোয়েন্দা পুলিশের সদর দফতরের ক্যান্টিনে ঘোরাফেরাও ছিল জলভাত। শেষ রক্ষা অবশ্য হল না। প্রতারণার দায়ে ভুয়ো ওই দুই ‘পুলিশকর্তাকে’ গ্রেফতার করেছে তারকেশ্বর থানার পুলিশ। অভিযোগ, টাকা ফেরত চাওয়ায় দুই যুবককে ধৃতেরা প্রাণনাশেরও হুমকি দিয়েছেন।
হুগলির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল) অমিতাভ বর্মা বলেন, “ধৃত দু’জনের সঙ্গে আরও কেউ যুক্ত রয়েছেন কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত ওই দুই প্রৌঢ়ের একজনের বাড়ি ডায়মন্ড হারবারের হিংচেবেড়িয়া নারায়ণতলায়। দ্বিতীয় জন সেখানকার সরিষা আশ্রম মোড়ের বাসিন্দা। অভিযোগ, তাদের এক জন ডেপুটি কমিশনার এবং অন্য জন সিআইডি ইনস্পেক্টর হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতেন। সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিল পুলিশ স্টিকার সাঁটানো একটি লালবাতি ও হুটার লাগানো গাড়ি।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানতে পেরেছে, কয়েক মাস আগে ওই দু’জন তারকেশ্বরের ৮ যুবককে চাকরি দেওয়ার নাম করে মোট ১১ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। তাঁদের মধ্যে প্রশান্ত মালিক এবং জয়দেব হালদার গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ‘কাজ’ও পেয়ে যান। তাঁদের ‘পুলিশের গাড়িতে’ বিভিন্ন জায়গায় ঘোরানো হয়। দুপুরে ভবানি ভবনের ক্যান্টিনে খাওয়ানো হত। বিকেলে কলকাতার কোনও জায়গায় গাড়ি থেকে নামিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বলা হত। গত বছরের মে এবং জুন মাসে ১০ হাজার টাকা করে ‘বেতন’ও দেওয়া হয় তাঁদের। কিন্তু চাকরির নিয়োগপত্র এবং বেতনের স্লিপ চাইতেই বিপত্তি বাধে। ভুয়ো দুই ‘অফিসার’ তাঁদের জানান, ‘বড় সাহেব ছুটিতে গিয়েছেন। তিনি না ফেরা পর্যন্ত কাজ করার প্রয়োজন নেই।’ এতেই সন্দেহ হয় ওই দুই যুবকের।
জয়দেব বলেন, “আমি ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। ওদের দেখে প্রথমে সত্যিই অফিসার ভেবেছিলাম। পরে বুঝতে পারি প্রতারিত হয়েছি। তখন ডায়মন্ড হারবারে ওঁদের সঙ্গে দেখা করে টাকা ফেরত চাইলে ওরা খুনের হুমকি দেন।” গত ৬ জানুয়ারি তারকেশ্বর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন জয়দেব। তার পরে আরও ৭ জন একই অভিযোগ দায়ের করেন ওই থানায়। ওই অভিযোগের ভিত্তিতেই তারকেশ্বর থানার ওসি দেবর্ষী সিংহ এবং তদন্তকারী অফিসার রজত সিংহের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ডায়মন্ড হারবারে হানা দিয়ে সোমবার অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে। মঙ্গলবার ধৃতদের চন্দননগর মহকুমা আদালতে তোলা হলে ৩ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
তদন্তকারীদের অনুমান, তারকেশ্বর ছাড়াও হুগলির বিভিন্ন জায়গায় একই কায়দায় ব্যবসা ফেঁদে বসেছিলেন ধৃত দু’জন। গোটা বিষয়টির পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা হচ্ছে। জেলা পুলিশের এক অফিসারের কথায়, যে ভাবে সিআইডি-র সদর দফতর ভবানি ভবনের ক্যান্টিনে ওই দু’জন ঘোরাফেরা করতেন, তাতে ওই দফতরের কারও সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। |