‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত নীতি: ইচ্ছার বিরুদ্ধে কৃষিজমি নেওয়া যাবে না’, এই নীতি শিল্প, পরিকাঠামো বা অন্য কারণে একলপ্তে অনেকখানি জমি পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হচ্ছে। কয়েক জন মাত্র মালিক অনিচ্ছুক হলেই কোনও বড় জমির অধিগ্রহণ বা কেনা আটকে যেতে পারে। তাই জোর করে জমি অধিগ্রহণ ছাড়া রাস্তা নেই এই মতের দাবিদারদের গলা চড়ছে। ‘গণতন্ত্রের খুব বড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে’ শীর্ষক নিবন্ধে (৬-১২) অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের আক্ষেপ, ‘পশ্চিমবঙ্গে যদি জমিসমস্যা সমাধানের অন্য একটা বা একাধিক বিকল্প মডেল করা যেত, তা হলে জবরদস্তির ছবিটা অনেক দুর্বল হয়ে যেত’।
জবরদস্তি নয়, সহমতের ভিত্তিতেই জমি পাওয়ার উপায় খুঁজতে হবে। তার জন্য দেখতে হবে জমির মূল সমস্যাটা কী। এ রাজ্যে জমির মূূল সমস্যা ক্ষুদ্র জোতের আধিক্য। এই আধিক্য কৃষির উৎপাদিকা শক্তির বিকাশেও বড় বাধা হয়ে উঠেছে। কৃষি ও শিল্প উভয়ের বিকাশপথের বাধা দূর হতে পারে যদি এক-একটা মাঠের ছোট-বড় সকল জোতের সমন্বয় ঘটিয়ে খামার প্রথায় চাষ করা যায়। শুধু আলগুলি ভেঙে দিলেই রাতারাতি ২০ শতাংশ জমি মুক্ত হয়ে যাবে। পুঁজি ও প্রযুক্তির বিনিয়োগে উৎপাদিকা শক্তির বিকাশ ঘটবে। পেশাগত ভাবে কৃষিকর্ম আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। সর্বোপরি জমির দখলদারি নিয়ে কৃষকে কৃষকে হানাহানি চিরতরে বন্ধ হবে।
এই খামার প্রথায় চাষ শিল্প ও পরিকাঠামোর জন্যও জমি সহজলভ্য করে তুলবে। হাজার একরের একটি খামারের উপর দিয়ে সরকার যদি রাস্তা বানাতে চায়, তা হলে খামার কর্তৃপক্ষ অংশীদারদের সহমতের ভিত্তিতেই উপযুক্ত মূল্য ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে পঞ্চাশ-একশো একর জমি ছেড়ে দিতে পারবে। খামারের কোনও ক্ষতি হবে না, বরং পণ্য পরিবহণে সুবিধা হবে। এর সুফল পাবে সকল অংশীদারই এবং কোনও চাষিরই ‘নিজের জমি চলে গেল’ বলে বুক চাপড়াতে হবে না। একই প্রক্রিয়ায় শিল্পের জন্যও জমির সংস্থান সম্ভবপর হয়ে উঠবে।
কিন্তু চাষির জমির মায়া প্রবল। যত লাভদায়কই হোক না কেন, প্রাথমিক ভাবে বড়-ছোট কোনও চাষিই ওই যৌথ চাষে রাজি হবে
না। তাই চাষিকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসতে হবে সরকারকেই। সরকার যদি শুরুতে দু’-একটি খামারকে ‘মডেল ফার্ম’ আকারে গড়ে উঠতে সহায়তা করে, তা হলে চাষিকে খুব একটা ঝুঁকি নিতে হবে না।
আর, বিকল্প মডেল কারও ঝুলিতে থাকলে তিনি পেশ করুন না, মুখ্যমন্ত্রী তো তাতে বাদ সাধছেন না। দীনবন্ধু সামন্ত। কলকাতা-৬৪ |
ভুল ধরে রাজ্যেরই ক্ষতি হচ্ছে কি না |
সুগত মারজিতের উত্তর সম্পাদকীয় ‘শুধু ভুল ধরে রাজ্যেরই ক্ষতি হচ্ছে না তো?’ বিষয়ে কিছু বক্তব্য। আপনার মনে হয়েছে ‘ভুলের বাহুল্য নির্দেশ করতে গিয়ে আখেরে পশ্চিমবঙ্গেরই ক্ষতি হচ্ছে না তো?’ ‘বাহুল্য’ শব্দের অর্থ বলে যেটা জানি, তাতে আপনি তবে পরোক্ষে স্বীকার করে নিলেন যে, ভুল কিছু হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে? সেই ভুল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হলে সেটা কি ‘সমালোচনার কোটা’ পূরণ করা? নাকি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে ‘ছোট্ট’, ‘সাজানো ঘটনা’ বলে এড়িয়ে যাওয়াটাই কাম্য?
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় বা পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীরা প্রেসিডেন্সি বা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে পঠন-পাঠনের সুযোগ পায় না বলে আপনার বক্তব্যের সারবত্তা যদিও কম, তবুও তাদের কলকাতামুখী না-করে তার থেকে উত্তরবঙ্গ-দক্ষিণবঙ্গে সম মানের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিলে বোধহয় পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রসমাজের উপকার হবে। আর রাজ্যের চারশোর ওপর কলেজের মাত্র দুই শতাংশে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কে অবাঞ্ছিত সমস্যা ঘটেছে বলে যেটাকে এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন, সে প্রসঙ্গে বলিআমরা সাধারণ মানুষ শতাংশের হিসাব বুঝি না। হাতের কর গুনে হিসাব করতে অভ্যস্ত। সেই কর গুনে হিসাব করতে গিয়েও সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের অবনতির ঘটনা এক হাতের আঙুলের করে গুনে শেষ করা যাচ্ছে না।
১০০ দিনের কাজ নিয়ে দু’একটা কথা বলা যাক। আপনার দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার নাকি এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গকে সার্টিফিকেট দিয়েছে। অথচ আমরা কিন্তু জানি যে, মাননীয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ তাঁর লেখা চিঠিতে এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের ব্যর্থতা নিয়ে ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন। nrega.nic.in নামক ওয়েবসাইট জানাচ্ছে, ২০১২-’১৩ (শেষ হিসাব পাওয়া পর্যন্ত) আর্থিক বছরে পশ্চিমবঙ্গে ১০০ দিনের কাজে ২০,৬১,০৩৪টি পরিবার ১৫ দিন বা তার কম কাজ পেয়েছে। পুরো ১০০ দিনের কাজ পেয়েছে মাত্র ৩৪,৬৪৫টি পরিবার। ২০০৯-’১০ সালে যেখানে এই ক্ষেত্রে কাজ হয়েছিল ৯৮.৭৮ শতাংশ, ২০১০-’১১ সালে যেখানে হয়েছিল ৯৫.০১ শতাংশ, ২০১১-’১২ সালে যেখানে হয়েছিল ৮৭.৮৭ শতাংশ, সেখানে ২০১২-’১৩ সালে এখনও পর্যন্ত এই কাজে অগ্রগতির হার মাত্র ২৪.৭৪। এই আর্থিক বছরে এই ক্ষেত্রে ৬০৩৯.১৫৭৫৬ লক্ষ টাকার বিল এখনও মেটানো হয়নি। বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়। হাওড়া-৩ |
আবক্ষ মূর্তি ঘিরে এখন আগাছার ভিড় |
অমর কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তকে গুরুরূপে বরণ করে যে সব কবি মহাকাব্য রচনায় ব্রতী হন, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিভাশালী হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় প্রভূত যশের অধিকারী হয়েছিলেন। তাঁর নামও এক সময় মধুসূদন দত্তের মতো গৌরবের সঙ্গে উচ্চারিত হত। হেমচন্দ্র ‘মেঘনাদবধ কাব্য’র দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিকা লিখে দিলে মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর বন্ধু রাজনারায়ণ বসুকে হেমচন্দ্র প্রসঙ্গে মুগ্ধ চিত্তে লেখেন যে, ‘...a real B A has written a long critical preface...।’ |
কয়েক দিন আগে হুগলি জেলার রাজবলহাটে হেমচন্দ্রের জন্মভিটা দর্শন করে আসি। ১২৪৫ বঙ্গাব্দের ৬ বৈশাখ হেমচন্দ্র রাজবলহাটের গুলটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কবির কৈশোর এই খানেই কাটে, প্রাথমিক শিক্ষার হতেখড়িও হয় এখানেই। অবশ্য, কবির জন্মভিটা বলতে পড়ে আছে সংকীর্ণ পথের ধারে একফালি জমি। স্থানীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর আন্তরিক প্রয়াসে ১৩৮০ বঙ্গাব্দে কবির এক আবক্ষ মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এখন সেই মূর্তি ঘিরে জন্ম নিয়েছে ঘাসজাতীয় আগাছা। পড়ে আছে নারকেল গাছের বাখারি। কাপড় বোনার সুতো শুকোচ্ছে চারদিকে।
রাজবলহাটের মুখ্য আকর্ষণ দেবী রাজবল্লভী। দেবীকে দর্শনের জন্য দূর-দূরান্ত থেকে প্রায় বারো মাসই বহু মানুষ এখানে আসেন। কিন্তু তাঁদের অনেকেই খোঁজ রাখেন না মায়ের মন্দির থেকে হাঁটাপথে মাত্র পাঁচ মিনিটের দূরত্বে ‘বৃত্রসংহার’, ‘নলিনীবসন্ত’, ‘আশাকানন’ প্রভৃতি কাব্যের রচয়িতার জন্মভিটাটুকু পড়ে আছে অনাদরে।
উজ্জ্বলকুমার মণ্ডল। শেওড়াফুলি, হুগলি |