তাজ্জব শীতে লখনউয়ে পারদ শূন্যে,
কাঁপছে গোটা বাংলাও

রাজস্থান-হরিয়ানায় হয়েই থাকে। কিন্তু এ যে ঘটল উত্তরপ্রদেশে!
শীতের দৌড়ে এ বার পঞ্জাব-হরিয়ানা-রাজস্থানের সঙ্গে প্রায় সমানে তাল ঠুকছে উত্তরপ্রদেশ। খাস রাজধানী লখনউয়ের তাপমাত্রা মঙ্গলবার নেমে গিয়েছে শূন্যের নীচে! কস্মিনকালেও এমনটা হয়েছে বলে জানা নেই। মুজফ্ফরনগরেও তা-ই। আর আগরায় তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁইছুঁই!
ব্যাপারটা আহবিদদের কাছেও যথেষ্ট অস্বাভাবিক ঠেকছে। “পঞ্জাব, রাজস্থান, হরিয়ানার সমতলে কখনও-সখনও শীতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শূন্যের নীচে নেমে যায়। এ বারেও গিয়েছে। কিন্তু লখনউ বা মুজফ্ফনগরে এমনটা শেষ কবে ঘটেছে, মনে করতে পারছি না।’’ বলছেন এক আবহ-বিজ্ঞানী।
আগরা-লখনউয়ের হাড়-হিম ঠান্ডার আঁচ পড়েছে বিহার-পশ্চিমবঙ্গে। গোটা বিহার শৈত্যপ্রবাহের কবলে। গয়ায় তাপমাত্রা নেমেছে ৩ ডিগ্রিতে। বিহার-ঝাড়খণ্ড হয়ে কনকনে হাওয়া ঢুকে বাংলকে কাঁপাচ্ছে। গত দু’দিন ইস্তক তামাম উত্তরবঙ্গ জুড়ে শৈত্যপ্রবাহ চলছে, এ দিন তা বয়েছে দক্ষিণবঙ্গের পাঁচ জেলাতেও। বীরভূম-পুরুলিয়া-পশ্চিম মেদিনীপুর-বর্ধমানের শিল্পাঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পাঁচ ডিগ্রিতে নেমেছে। আগামী দু’দিনে তা আরও নামবে বলে জানিয়ে রেখেছেন আবহবিদেরা। এমনকী, আলিপুর আবহাওয়া অফিস কলকাতাবাসীকেও শৈত্যপ্রবাহের জন্য তৈরি থাকার সতর্ক-বার্তা জারি করে দিয়েছে। ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে এক দিনের জন্য কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রিতে নেমেছিল। এ বার তা আরও নামতে পারে বলে মনে করছেন আবহবিদেরা।
হঠাৎ শীত এত তীব্র কেন? লখনউ-মুজফ্ফনগরেই বা এমন পরিস্থিতির কারণ কী? আলিপুরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “এটা কোনও আঞ্চলিক বিষয় নয়। আফগানিস্তান, পাকিস্তান সর্বত্র এ বছর মাত্রাতিরিক্ত শীত পড়েছে। শীতটা রয়েও গিয়েছে দীর্ঘ সময় ধরে। সাইবেরিয়ায় উদ্ভুত পশ্চিমী ঝঞ্ঝার অবিরত আঘাতে এই অবস্থা।”
হিম-স্রোত
এলাকা সর্বনিম্ন*
এলাকা সর্বনিম্ন*
অন্য রাজ্য
পশ্চিমবঙ্গ
নারাউল (হরিয়ানা) -০.৩ (-৮) পানাগড় ৪.৭ (-৭)
মুজফ্ফরনগর (উত্তরপ্রদেশ) -০.৭ (-৮) পুরুলিয়া ৫.০ (-৭)
লখনউ (উত্তরপ্রদেশ) -০.২ (-৮) শ্রীনিকেতন ৫.০ (-৭)
আগরা (উত্তরপ্রদেশ) ০.৬ (-৮) জলপাইগুড়ি ৫.৫ (-৬)
নয়াদিল্লি ৩.১ (-৫) মালদহ ৭.৩ (-৫)


আলিপুর ১২.২ (-২)

*
তাপমাত্রা, ডিগ্রি সেলসিয়াসে
(ব্র্যাকেটে, এই সময়ের স্বাভাবিক সর্বনিম্নের চেয়ে কত ডিগ্রি কম)

সাইবেরিয়া থেকে আফগানিস্তান-পাকিস্তান হয়ে জম্মু-কাশ্মীর দিয়ে ভারতে ঢোকা শীতল বায়ুপ্রবাহই হল পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। যার তীব্রতার উপরে নির্ভর করে, ভারতীয় উপমহাদেশে শীত কেমন পড়বে। নভেম্বরের গোড়া থেকে শুরু করে সাত-আট দফায় পশ্চিমী ঝঞ্ঝা ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করে। উত্তর ভারতে এসে কোনও পশ্চিমী ঝঞ্ঝা পূর্বে নেমে আসে, কোনওটা সরে যায় পশ্চিমে। পূর্ব ভারতের দিকে বিচ্যুত ঝঞ্ঝার শাখাই উত্তুরে হাওয়া ঢুকিয়ে দেয় পশ্চিমবঙ্গে।
কিন্তু এ তো স্বাভাবিক ঘটনা। এ বারের শীত আলাদা কেন?
আবহবিদেরা বলছেন, এ বার সাইবেরিয়াতেই শীতল বায়ুপ্রবাহের চরিত্রটা স্বতন্ত্র। ডিসেম্বরের গোড়া থেকে সেখানে একের পর এক অবিরাম পশ্চিমী ঝঞ্ঝা তৈরি হয়েছে, যা অন্যান্য বার দেখা যায় না। আফগানিস্তান-পাকিস্তান হয়ে ভারতের উপর দিয়ে সেগুলো বয়ে গিয়েছে। তাই ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই কাশ্মীর, হিমাচল ও উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ে বরফ পড়া শুরু হয়েছে। ঝঞ্ঝায় বিরাম না-থাকায় তাপমাত্রা ক্রমাগত নেমেই যাচ্ছে। সাইবেরিয়ায় আরও কত ঝঞ্ঝা তৈরি হবে, আবহবিদেরা বলতে পারছেন না।
তবে সমুদ্রে উচ্চচাপ বলয় বা ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হলে উত্তর ভারতের শীতের প্রভাব পশ্চিমবঙ্গে সে ভাবে পড়ে না। যেমন হয়েছিল গত সপ্তাহে। কিন্তু এ মুহূর্তে তেমন সম্ভাবনা নেই। কারণ উপগ্রহ-চিত্র বিশ্লেষণ করে আবহবিদেরা জানিয়ে দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে আপাতত মেঘ নেই। আগামী এক সপ্তাহ আকাশ পরিষ্কার থাকার সম্ভাবনা, যা কি না কড়া শীতের পক্ষে অনুকূল।
বস্তুত আজ, বুধবার দক্ষিণবঙ্গের সব ক’টা জেলাতেই শৈত্যপ্রবাহের হুঁশিয়ারি জারি হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গে গত ক’দিনের কুয়াশার চাদর কেটে গেলেও উত্তরবঙ্গে এ দিনও সূর্যের দেখা মেলেনি। মালদহ, দুই দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরও নেমেছে। উত্তরবঙ্গেও পারদ পতনের প্রবণতা আরও চার দিন বহাল থাকবে বলে আবহবিদদের পূর্বাভাস।
এমন ঠান্ডা চলবে ক’দিন? লিপুর মনে করছে, অন্তত আগামী সোমবার পর্যন্ত গোটা রাজ্য শীতের কামড় ভাল মতোই টের পাবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.